পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাফ নদ; ওরা বলে দরিয়া। দুই দেশের পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই দরিয়া যেন আধুনিক যুগের ফোরাত নদী। এই নদে কত রোহিঙ্গা মুসলমান শিশু-নারী-পুরুষের প্রাণ নিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো জানা নেই। কত মুসলিমের রক্ত এ নদের পানিতে মিশে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে সে হিসাবও নেই। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মগরা এখনো রোহিঙ্গাদের হত্যা করে নাফ নদে ফেলে দিচ্ছে। নাফ নদের আশপাশের কয়েক কিলোমিটারে উখিয়া ও টেকনাফে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ঘিরে চলছে লাখ লাখ মানুষের আর্তনাদ। মানবতা বিপন্ন। আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে সর্বস্ব হারানো রোহিঙ্গা মুসলিমদের কান্নায়। মুসলমান হওয়ার অপরাধে (!) মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে কেউ হারিয়েছেন বাবা-ভাই-স্বামী। কেউ হয়েছেন ধর্ষিত। বিপন্ন রোহিঙ্গা শ্রোতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো ঘুরছেন ইনকিলাব প্রতিনিধি। ঘুরছেন নাফ নদ-পাহাড়-সাগর-বনে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের প্রান্তর থেকে প্রান্তর। সাংবাদিকের অনুসন্ধানী চোখে যা ধরা পড়েছে সে চিত্রই তুলে ধরা হচ্ছে।
‘প্রথমে আমি মুসলমান তারপর মানুষ’। আমার এই পরিচয়ের জন্যই ওরা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। বলেন তো স্যার, যার হৃদয়ে কোরআনের বাণী সে কি বিধর্মীদের বশ্যতা শিকার করতে পারে? কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বেশ জোর দিয়ে রাখাইনের আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বললো মোঃ কালা মিয়া। কালামিয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করলেন মো: ইয়াসিন, মোঃ আলামিন, মোসলেম উদ্দিন প্রমুখ। কালা মিয়ার জীর্ণ শীর্ণ শরীর। রোগে শোকে কাতর কালার গায়ে গতরে তেমন শক্তি আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু মনের জোর বেশ। অন্তত প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসা অন্যান্য শরণার্থীদের চেয়ে সে সাহসী। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মগদের অত্যাচার নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম বিপর্যন্ত। দুঃখ-কষ্ট বেদনায় জর্জরিত এবং অনিশ্চিত আগামীর চিন্তায় চিন্তিত। কারো মুখে হাসি নেই; সাহস দূরের কথা। কিন্তু কালা মিয়া ব্যতিক্রম। বললেন, মিয়ানমারের হাজারো জাতিগোষ্ঠী ধর্মের লোকের বাস। শুধু মুসলমান হওয়ায় আমাদের উপর এতো নির্যাতন হচ্ছে কেন? বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ একই অবস্থা। অন্য ধর্মের কেউ গুরুত্বর অপরাধ করলে তাদের দোষ দেয়া হয় না; আর মুসলমাদের কেউ কিছু না করলেও সব দায় মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। শরণার্থী শিবিরগুলোতে নতুন কেউ এলে বা কাউকে দেখলেই ছুটে যান সবাই সেদিকে যদি কিছু ত্রাণ পাওয়া যায়? ব্যতিক্রম কালামিয়া সে দিকে ভ্রæক্ষেপ নেই। তিনি মানুষের উপকার করছেন নানা ভাবে। কালামিয়ার মতো আরো কিছু মানুষ সাহায্য সহযোগিতা করছেন।
শরণার্থী শিবিরে দু’দিন ঘুরে মনে হলো ‘সাবাশ বাংলাদেশ; এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/ জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়’ (সুকান্ত ভট্টাচার্য)। যুদ্ধে বিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের তিন লাখ শরণার্থীকে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ভাগাভাগী করেও জায়গা দিতে পারেনি। শরণার্থীদের খাওয়ানো নিয়ে কত বিচিত্র খবর! অথচ বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিচ্ছে। তাদের খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করেছে। একটি প্রজন্ম যখন জেগে উঠে, তখন সে জাগরণের জোয়ারে সব রকম অপশক্তি পরাজিত হতে বাধ্য। একটি জাতির তরুণ সমাজ যখন জেগে উঠতে জানে; পরোপকারে ব্রতী হয়, তখন সেই জাতির চলার পথে বাধা হতে পারে এমন শক্তি পৃথিবীতে নেই। বাঙালি এমন একটা জাতি যে জাতির জন্ম যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। প্রতিটা বাঙালি জন্ম থেকে বিপ্লবের সাথে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। আর সেজন্যই মানুষের বিপদে ফেলে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকার স্বভাব বাঙ্গালির নেই। সে চিত্র দেখা গেল শরণার্থী শিবিরগুলোতে। বাঙালি জাতি এমন একটি জাতি, মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে; রক্ত ঝরিয়ে আদায় করতে হয়েছে মায়ের ভাষার অধিকার। বাংলাদেশ নামক ছোট্ট সবুজ দেশটি রক্তের দামে কেনা; এখন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ যেন রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই জেগে উঠেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন শিবির ঘুরে তাই মনে হলো।
দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত ও দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে এগিয়ে চলছে সিএনজি। পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে রাস্তা। চোখ যেদিকে যায় মানুষ আর মানুষ। নারী আর শিশুর সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশ মানুষ শীর্ণকায়। ১ বছর থেকে ১০ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের কারোই গায়ে জামা কাপড় নেই। একটি পানির কলে ১০ থেকে ১৫ জন ছেলেমেয়ে গোসলের নামে হুড়োহুড়ি করছেন। পাহাড় বনের সড়ক তারপরও সড়কের দু’ধারে দোকানপাট। কেউ হাজার হাজার বাঁশের স্তূপ করে রেখেছে। কেউ ত্রিপল, পলিথিনের স্তূপ করছে। লাকরি বিক্রি করছে। কেউ বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে আসা দেশী-বিদেশী সংস্থা, এনজিও এবং সাংবাদিকের গাইড হিসেবে দু’পয়সা রোজগার করছে। কেউ কেউ নানান রকমের ধান্দা করে বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে টাকা আদায় করছেন এমন খবরও শোনা গেল। মিয়ানমারের অং সান সুচি ও তার বাহিনীর পৈচাশিকতার শিকার হয়ে দেশছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কক্সবাজারের দু’টি উপজেলা যে জেগে উঠেছে তা বেশ বোঝা যায়।
২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর থেকে রোহিঙ্গারা এখনো পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। রোহিঙ্গা শ্রোত যেন থাকছেই না। টেকনাফের কারেংখালি, নয়াবাজার, জীবনখালি, নয়াপাড়া, কাঞ্চনপাড়া উত্তর, কাঞ্চনপাড়া দক্ষিণ, উঞ্চিপ্রাণ, লম্বাবিল, হোয়াইংকো, বিজিবি চেকপোষ্ট, তোলাতুলি, উলুবুনিয়া বাজারের মাথা সীমান্ত দিয়ে বিপন্ন রোহিঙ্গারা আসছেন। পথে যাদের দেখা হলো সবার চেহারার মধ্যে বিধ্বস্ততার ছাপ। হাড়িপাতিল, ঘটি, বাটি নিয়ে কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোথায় যাবেন চিন্তা করছেন; কেউবা ঠিকানা পেয়ে সেখানে তাঁবু টানানোর সরঞ্জাম কিনে শিবিরে ফিরছেন। নির্যাতিত রোহিঙ্গারা সীমান্ত পথে উুলুবুনিয়া, বিজিবি চেকপোষ্ট ও তুলাতুলি সীমান্তে নির্বিঘেœ পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারলেও অন্য প্রায় সব সীমান্ত পার হতে বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের টাকা গুণতে হচ্ছে। কমপক্ষে ১০টি ক্যাম্পে থাকা প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন তারা সকলেই টাকা দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। সে টাকা এক হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত। আবার নাফ নদ পাড়ি করে দেয়ার জন্য মানুষ ভেদে ২ হাজার থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। মেয়েদের কানের দুল, গলার হাড় পর্যন্ত খুলে দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড় হয়েছে রোহিঙ্গা নারীরা। পাটুকুনিয়া শরণার্থী শিবিরের আয়েশা বেগম তো জানালেন, ৬ ছেলে-মেয়ে নিয়ে সীমান্তপাড় হতে প্রতিজনে এক হাজার এবং নাফ নদী পার হতে একমাত্র সম্বল গলার হার খুলে দিতে হয়েছে। ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতন করেছে মুসলিম নারীদের উপর মিয়ানমার বাহিনী। মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ, ছেলের সামনে মা’কে ধর্ষণ, বাবার সামনে তরুণ ছেলেকে গুলি করে হত্যা, কোল থেকে শিশু কেড়ে নিয়ে আছড়ে ফেলে দিয়ে নারীকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ অনেক লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন বিভিন্ন শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা নারীরা। কুতুপালং ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি তাঁবুতে প্রবেশ করে নারীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া যায়। এই নারীদের অনেকেই বাংলাদেশেও বিপদে পড়ছেন। এক শ্রেণীর টাউট ও এনজিও ত্রাণ সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তার নামে মেয়েদের গায়ে হাত দিচ্ছে। ঠিকানা হারাতে হয় সে ভয়ে নারীরা এসব চিত্র প্রকাশ করছেন না।
এখনো মানুষের শ্রোত থাকছে না। মগদের হাত থেকে বাঁচতে পালাতে গিয়ে বনে জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন তারাই এখন আসছেন বলেই জানাচ্ছে শরণার্থী শিবিরে নতুন আশ্রয়প্রার্থী নারী-পুরুষেরা। শুরুর মতো ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের ঢল এখন না দেখা গেলেও রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ আর শিশুরা আসছে ছোট ছোট দলে। এদের বেশিরভাগই হারিয়েছেন পরিবারের কোনও না কোনও সদস্যকে। নিজেরাও কেউ কেউ হয়েছেন বর্বর নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত এলাকারে উলুবুনিয়া রাস্তার মাথায় কথা হয় মোছাঃ রেহেনার সঙ্গে। ২০ বছর বয়সী রেহেনা ১০ দিন আগে ১৫ জনের একটি দলে বাংলাদেশে ঢুকেছেন। সে জানান, মিয়ানমারে সেনা সদস্যরা তার স্বামী ও ভাইকে হত্যা করে আর তার ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। তার বক্তব্য ‘১০/১২ জন সৈন্য মিলে আমাকে ধর্ষণ করে, কি যে কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না, ওদের অত্যাচারে অনেক যুবতী-তরুণী মরে গেছে। অনেক মেয়েকে কারাগারে ও বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে এখনো ধর্ষণ করছে। পাশবিক নির্যাতনের পর আমাকেও যখন মেরে ফেলতে চাইল, তখন বাচ্চা দু’টোকে দেখিয়ে ওদের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইলাম। বললাম, বাচ্চা দুটোর কচি মুখের দিকে দেখে ছেড়ে দিন। কাউকে বলবো না বার্মায় কী হয়েছে, বাংলাদেশে চলে যাব এখুনি।’ কাকুতি-মিনতি আর ছোট্ট দু’টি বাচ্চা দেখিয়ে ছাড়া পেয়ে কয়েকদিন জঙ্গলে কাটান রেহানা। সঙ্গে ১২ বছর বয়সী ছোট ভাই আর দুই সন্তান। ভাইটিকে ওরা পশুর মতো মেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশের দু’দিন আগে অসুস্থ হয়ে পথেই মারা গেছে তার ৩ বছর বয়সী ছোট ছেলেটা। মা হয়েও জঙ্গলের ধারে সন্তানের লাশ ফেলে রেখে এক সন্তান আর ভাইকে নিয়ে বহু কষ্টে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘পথে খাওয়া নেই দাওয়া নেই। হাঁটতে হাঁটতে পা ফুলে গেছে। তারপর পথে ভয় যদি মগরা দেখে ফেলে! নিজ দেশে মুসলমান হওয়ায় কোনো অধিকার পাইনি। এদেশে এসে যে সাহায্য পেয়েছি, নিজের দেশে তার ছিটেফোঁটাও পাইনি। বার্মার অন্য স¤প্রদায়ের লোকেরা আমাদের বলে, সেদেশ শুধু তাদের, রোহিঙ্গা মুসলমানের নয়’। টেকনাফের একটি বড় মাদ্রাসার পাশে দাঁড়িয়ে মগডু থেকে আসা শরণার্থী মোছা: রফেকা খাতুন বলছিলেন, তার স্বামীর গলা কেটে ফেলেছে সেখানকার অমুসলিম স¤প্রদায়ের অস্ত্রধারীরা। আর তার ভাইয়ের স্ত্রীকে ধর্ষণের পর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি দুই সন্তান নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। রাখাইন থেকে তরুণী মেয়েরা অনেকেই আসতে পারেনি বলেও জানায় রফেকা। তার ভাষায় প্রতিদিনই ধরপাকড় চলে, সুন্দরী মেয়েদের তুলে নিয়ে জুলুম করে মিলিটারিরা। তারপর হাত-পা, বুক কেটে ফেলে দেয়। অত্যাচারের কারণে বছর খানেক আগে এক আত্মীয়ের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল রফেকার পরিবার। মোছাঃ রফেকা জানান, আসার আগে কয়েকদিন তারা দিনের বেলায় জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতেন আর রাতে বাড়িতে যেতেন। রফেকার বিবরণে অত্যাচার ও সহিংসতার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়েছিল যে প্রায় গ্রামের সবাইকে পালাতে বাধ্য হতে হয়। টেকনাফর নাফ নদের পাড়ে সাহায্যের আশায় বসে থাকা রওশনারার ভাষায় মগরা আমাদের (রোহিঙ্গা মুসলিম) প্রতিনিয়ত জ্বালাতন করতো। যখন তখন বাড়িতে হানা দিতো। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ধরে নিয়ে যেত। কোথাও কিছু হলেই পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। মেয়েদের ধরে নিয়ে যায় অত্যাচার, জুলুম করে। আমার ভাবীকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। মেরে ফেলার আগে তাকে জুলুম করে (ধর্ষণ) মগ মিলিটারিরা। হাত-পা কেটে ফেলে। তারপর স্বামী দেবরকে গুলি করে হত্যা করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। স্বামী হারানোর পর তিন সন্তান নিয়ে আট দিন হেঁটে বাংলাদেশে ঢুকেছেন রফেকা। এখনো আশ্রয় শিবিরে জায়গা পাননি। তাই নাফ নদের তীরে বসে ভিক্ষা করছেন এবং দূর থেকে নিজেদের জন্মভূমি দেখছেন। সর্বত্রই একই চিত্র। ১৫ থেকে ২০টি শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বোঝা গেল প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে অত্যাচারের শিকার। শার্ট, প্যান্ট পড়া কেউ গেলেই আশ্রয় নেয়া নারীরা অত্যাচার ও নির্যাতনের কাহিনী শোনান। তারা নির্যাতনের যে ভয়াবহ বিবরণ দিচ্ছে, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বেশিরভাগ রোহিঙ্গার বক্তব্যে নির্যাতনের চিত্র একই রকম। জাতিসংঘের হিসেবে গত কয়েক সপ্তাহে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই নারী ও শিশু। প্রকৃতপক্ষে উখিয়া ও টেকনাফে কমপক্ষে ৮ লাখ নতুন রোহিঙ্গা এসেছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন। তাদের বক্তব্য প্রকৃত হিসাব কেউ করছে না। বিদেশীরা প্রতিদিন সংখ্যা জানাচ্ছে কিন্তু কিভাবে তারা এরই পরিসংখ্যান তৈরি করছেন তা বোঝা যায় না। ধর্মে মুসলিম হওয়ায় রোহিঙ্গাদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে বর্মী সেনাবাহিনী। আর বাংলাদেশ মানবিক কারণেই তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ছোট্ট একটা দেশে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেয়া সত্যিই কঠিন! মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এতো বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান কোথায় হবে! এদের খাদ্য আসবে কোথা থেকে! সত্যি কথা বলতে কী মানবিকতা এবং সহমর্মিতার পাশাপাশি এই প্রশ্নগুলোর লড়াই শুরু হয়ে গেছে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় মানুষের মনের ভেতর। এরই মধ্যে তারা সংখ্যালঘু হয়ে গেছেন। এ জন্যই হয়তো সারাবিশ্বে রব উঠেছে সাবাশ বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।