নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মো: শামসুল আলম খান, বিশেষ সংবাদদাতা
মাত্র চার বছর বয়সেই হারান বাবা সেলিম মিয়াকে। চরম আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যেও সাবিনাসহ ৩ ভাই-বোনকে কোলে-পিঠে মানুষ করেন মা। ৩ ভাই-বোনের মধ্যে সাবিনার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। কলসিন্দুর গ্রামের ফুটবল কন্যাদের মাঝেও নিজেকে প্রমাণ করেন সাবিনা। ছিলেন স্ব-মহিমায় সমুজ্জ্বল। বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের চূড়ান্তপর্বেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। যার দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতেন মা, সেই সন্তান আজ চলে গেছে না ফেরার দেশে। সন্তানকে হারিয়ে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন মা, ভাই ও স্বজনেরা।
সাবিনা ছিলেন স্থানীয় কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সাবিনার মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন গারো পাহাড়ের পাদদেশের কলসিন্দুর গ্রাম। সেই সাবিনা নেই আজ। গতকাল সকালে স্থানীয় কলসিন্দুর মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে ফুটবলার সাবিনাকে পূর্ব গামারীতলা গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজায় স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাদী হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান মজনু মৃধা, ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলমসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। এমন এক প্রতিভাকে শেষ বারেরমত বিদায় জানাতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জানাজায় আগত প্রতিটি মানুষ।
বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার সাবিনা’র মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গণ। তার মৃত্যুর শোক স্পর্শ করেছে কাছের মানুষ থেকে দূরের মানুষকেও। খানিকটা অবেলায় বাংলাদেশের ফুটবলের ‘আশার ফুল’ ঝরে যাওয়ায় রুদ্ধবাক ক্রীড়াঙ্গণের মানুষজন। এক শোক বার্তায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান বলেন, ‘সাবিনা ছিলেন বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন অমিত সম্ভাবনাময় ফুটবলারকে হারালো। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
ক’দিন আগে চলতি বছরের জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংর্বধনা দেয় জেলা প্রশাসন। চ্যাম্পিয়ন সেই টিমের গর্বিত সদস্য হিসেবে সংবর্ধনা নেন সাবিনাও। সেই স্মৃতি তুলে ধরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান বলেন, ‘ফুটবলার সাবিনা ছিলেন শান্ত স্বভাবের এবং বিনয়ী। এমন মেধাবী একজন ফুটবলার অকালেই ঝরে গেছে।’ ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও স্থানীয় পন্ডিতপাড়া ক্লাবের সভাপতি মো: ইকরামুল হক টিটু এক শোক বার্তায় বলেন, ‘কৃতি ফুটবলার সাবিনার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। দেশের নারী ফুটবলের জাগরণের সময়ে এ ফুটবল কন্যার মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় এক ক্ষতি।’
গেলপরশু অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার সাবিনা আক্তার নিজ গ্রামের বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাবার পথে মারা যান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।