Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুশফিকের দুঃখ, ডু প্লেসির স্বস্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অবশেষে শেষ হতে চলল প্রতীক্ষার প্রহর। দীর্ঘ ৯ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আবারও টেস্টের টস করতে নামবে কোনো বাংলাদেশি অধিনায়ক। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলতে গেলো বাংলাদেশ। আজ দুপুর ২টা থেকে পচেফস্ট্রুমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট।
খেলা শুরুর আগেই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কে থাকছে একাদশে আর কে বাদ যাচ্ছে। তার উপর টাইগারদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা দলের চেয়েও বড় প্রতিপক্ষ পচেফস্ট্রুমের কন্ডিশন। গত সপ্তাহখানেক ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে কঠোর অনুশীলন করছ মুশফিকুর অ্যান্ড কোং।
বাংলাদেশকে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বেশি লড়তে হবে পচেফস্ট্রুমের ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে। সেখানে দিনের বেলা সর্বোচ্চ ২৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা আর রাতে নেমে আসে আরও অনেক নিচে। ১৫ থেকে ১৬ ফারেনহাইট। ফলে মোটামুটি কনকনে ঠান্ডাতেই ভুগতে হবে টাইগারদের। কন্ডিশনের ওপর টাইগারদের জন্য আরেক পরীক্ষার নাম ‘গতিময় উইকেট’। বাংলাদেশ উপমহাদেশের ¯েøা উইকেটে খেলে বেশ ভাল ফলাফল করেছে; কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট যথেষ্ট বাউন্সি। ফলে আসল পরীক্ষাটা সেখানে ব্যাটোসম্যানদের। প্রোটিয়া পেসারদের বাউন্স সামাল দিতে হবে তামিম-মুশফিকদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনের উপর নির্ভর করেই একাদশ সাজানো হবে বলেও জানান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। পাশাপাশি সাকিবকে ছাড়া খেলাটাও চ্যালেঞ্জ হিসেবে মানছেন মুশফিক। তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং তো অবশ্যই। আর চ্যালেঞ্জিং হওয়ারও দরকার। তাহলে ম্যাচ শেষে বোঝা যায় এটা হলে বা ওটা হলে ভাল হতো। আমরা সবাই চেষ্টা করি বেস্ট কম্বিনেশনটা করার। তবে এটা নির্ভর করে কন্ডিশন ও পরিস্থিতির ওপর।’ সাকিব না থাকায় দু’জন খেলোয়াড় খেলানোর পক্ষে মুশফিক। তার মতে, ‘আপনারা জানেন যে সাকিব যেহেতু নেই, সেহেতু আমাদের অবশ্যই দুই জন খেলোয়াড়কে খেলাইতে হবে। তবে অবশ্যই আমাদের চেষ্টা থাকবে ব্যাটসম্যান কয়টা নিয়ে খেলতে পারি কিংবা এক্সট্রা পেসার নেয়া যায় কি না অথবা এক্সট্রা একজন স্পিনার নেয়া যায় কি না।’ সৌম্য সরকারের যে সমস্যা হচ্ছে তা দ্রæত সমাধান হয়ে যাওয়ারও আশা করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মুশফিক বলেন, ‘সব কম্বিনেশনই চেষ্টা করা হয়েছে। গত দশ দিন খুব ভাল অনুশীলন হয়েছে। আর সবাই আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ফিট আছে। সৌম্যর একটু সমস্যা তবে আশা করছি সেও ঠিক হয়ে যাবে।’
গত দুই বছরের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে, যেটা এখন বিশ্ব ক্রিকেটই জানে। এত সাফল্য এবং চারদিকে প্রসংশার পরও নিজেদেরকে বড় মানের দল হিসেবে ভাবেন না টেস্ট অধিনায়ক! মূলতঃ ঘরের মাঠে সাফল্যের ভেলায় চড়তে চাননি মুশফিক। এমনকি দল সম্পর্কে বলতে গিয়ে আকাশে ওড়েননি এই ব্যাটসম্যান, ‘আমরা কিন্তু শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে নেই যে- আমরা যাবো আর সবাইকে দেখিয়ে, ভাল খেলে সবাইকে হারিয়ে দেবো। আমরা কিন্তু এখনও ছোট দল। কাজেই সবার কাছেই একটা অন্যরকম চ্যালেঞ্জ থাকে। সবার কাছেই একটু অন্যরকমভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হয়। ভাল খলেতে শতভাগের জায়গায় পুরো ২০০ ভাগ দিতে হয় আমাদের। আমরা সেটার জন্য উপযুক্ত সময় এটা এবং সেটার জন্যই আমরা চেষ্টা করছি।’ তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার জন্য এই সময়টাকেই আদর্শ মনে করছেন টাইগার দলপতি, ‘এখন উইকেট একটু শুকনো থাকে। এমনকি একটু শিশিরও পড়ে সেখানে। যেটা একদিক দিয়ে চিন্তা করলে ভালোই।’
শুধু ব্যাটোসম্যানদেরই নয়, পরীক্ষা দিতে হবে রুবেল-মোস্তাফিজ-তাসকিনদেরও। দক্ষিণ আফ্রিকার অচেনা কন্ডিশনে তাদের পারফরম্যান্সের উপরও নির্ভর করছে ম্যাচের ফলাফল। পাশাপাশি মিরাজ অথবা তাইজুলেরও রয়েছে যে কোন উইকেটে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা। সাকিব না থাকায় হয়তো কিছুটা পিছিয়ে থাকবে টাইগাররা। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মেলে ধরলে হয়তো কন্ডিশন কিংবা স্বাগতিকরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। দক্ষিণ আফ্রিকাও বাংলাদেশকে হালকা ভাবে নেয়নি। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টের জন্য তারা হাশিম আমলা, মরনে মরকেলদের রেখেছেন দলে। দক্ষিণ আফ্রিকাও জানে ২০০৮ সালের বাংলাদেশ এখন আর নেই। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটির ফল কি দাঁড়ায় কিংবা কেমন হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ম্যাচটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
যে কারণে একটু অস্বস্তিতে মুশি, সেই একই কারণে স্বস্তির বাতাস বইছে দক্ষিন আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসির মনে- সাকিব। তার দলেই নেই অনেক তারকা। খেলছেন না এবি ডি ভিলিয়ার্স। চোটের কারণে নেই ডেল স্টেইন, ভার্নন ফিল্যান্ডার, ক্রিস মরিস। এত অপ্রাপ্তির ভিড়েও ফাফ ডু প্লেসির একটি স্বস্তি, প্রতিপক্ষেও তো সাকিব! সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের কণ্ঠে তাই ফুটে উঠল সেই স্বস্তি, ‘ওদের জন্য এটা (সাকিবের না থাকা) বড় ক্ষতি। সাকিব দুর্দান্ত ক্রিকেটার। বেশ কিছু দিন ধরেই সে বিশ্বের শীর্ষ অলরাউন্ডার। ও এমন একজন, যে কিনা বিভিন্ন কন্ডিশনে পারফর্ম করে। ওকে না পাওয়া অবশ্যই ওদের জন্য বড় ক্ষতি। আমি খুব খুশি যে সাকিব খেলছে না।’
বিশ্রামে থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে নেই সাকিব। ক্লান্তি ও অবসাদ কাটিয়ে চনমনে হয়ে উঠতে বিসিবির কাছে ৬ মাসের টেস্ট বিরতি চেয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। বোর্ড আপাতত ছুটি দিয়েছে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজে। সাকিব থাকা মানেই প্রতিপক্ষের বাড়তি দুর্ভাবনা। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে আলাদা করে তাকে নিয়ে পরিকল্পনা করা। সাকিব না থাকা মানে সেই ঝামেলা নেই। বিশ্রামে যাওয়ার আগে এবছর ব্যাটে-বলে দারুণ ফর্মে ছিলেন সাকিব। ৭ টেস্টে রান করেছেন ৬৬৭, উইকেট নিয়েছেন ২৭টি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ