Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবারো তিন অপারেটরের ভ্যাট ফাঁকি

২০০৭-২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি’র ২৩ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে
২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি আজিয়াটা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলো স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ সরকারের পাওনা এই টাকা ফাঁকি দিয়েছে। স¤প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) এ ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে মোবাইল কোম্পানিগুলো ওই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি দেওয়া অর্থ আদায়ে গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) মোবাইল কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে এলটিইউ।
তবে স্থান ও স্থাপনার ওপরে ভ্যাট ফাঁকি বিষয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো বলছে, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট ফাঁকির যে অভিযোগটি তুলে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে, সেটি সঠিক নয়। কেননা, স্থান ও স্থাপনা বাবদ ভ্যাট মালিক দেবেন, কোনো কোম্পানি নয়। ফলে এটি কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।
এলটিইউ’র চিঠি সূত্রে জানা গেছে, ওই ৬ মাসে স্থান ও স্থাপনার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ গ্রামীণফোন ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা, বাংলালিংক ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ও রবি ৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এই ভ্যাট ফাঁকির সম্পূর্ণ অর্থ ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে কোম্পানিগুলোকে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে বৃহৎ করদাতা ইউনিট স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার হিসাব চাইলে কোম্পানিগুলো ফাঁকি দেওয়া এ অর্থের কোনো হিসাব দেয়নি। যার কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়ে প্রাথমিক দাবিনামা জারি করেছে এলটিইউ।
সূত্র আরও জানায়, মূসক আইন, ১৯৯১ এর ৩৭ ধারার উপধারা (৩) অনুসারে অপরিশোধিত মূসকে সুদের হার ২ শতাংশ। প্রাথমিক দাবিনামা জারির পর থেকে এ সুদ প্রযোজ্য। এর আগেও স্থান ও স্থাপনা ভাড়া বাবদ ৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয় চার মোবাইল অপারেটর। এর মধ্যে এয়ারটেল ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩০৮ টাকা ১০ পয়সা, গ্রামীণফোন ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা, বাংলালিংক ৩৪ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৫৬ টাকা ৬৫ পয়সা এবং রবি ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৭ টাকা দেয়নি।
ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের রাজস্ব উদ্বারে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট গত বছরের জুন মাসে মামলা করে। এ মামলার রায়ও এনবিআরের পক্ষে দিয়েছেন আপিলাত ট্রাইব্যুনাল। ফাঁকি দেওয়া ওই অর্থও পরিশোধ করতে হবে কোম্পানিগুলোকে।
এছাড়া সিম পরিবর্তনের নামে ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় মোবাইল কোম্পানিগুলো। দীর্ঘ ২ বছর বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ২২ জুন এনবিআরের পক্ষে রায় দেন আদালত। বর্তমানে ফাঁকি দেওয়া সেই রাজস্বের পরিমাণ (সুদসহ) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ অর্থও পরিশোধ করতে হবে কোম্পানিগুলোকে।
২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়েও সিম পরিবর্তনের নামে মোবাইল কোম্পানিগুলো সরকারের আরও ৮৮৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট এ ভ্যাট ফাঁকিও উদ্ঘাটন ও মামলা করেছে।
মোবাইল ফোন অপারেটর রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশন্স এন্ড কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি) ইকরাম কবির বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এধরণের স্থাপনার উপর কর আরোপ করা ভ্যাট আইনের বিধি বিরোধী। আমরা বিধিবহির্ভূত কর আরোপের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চ্যালেঞ্জ করেছি। ২০১১ সাল থেকে তিনবার এধরণের কর আরোপের পর আমরা চ্যালেঞ্জ করলে এনবিআর আইন পরিবর্তন করে। আমরা এখনো বিশ্বাস করি এধরণের করারোপ সঠিক নয় এবং আমরা এই বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
বাংলালিংকের কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর আসিফ আহমেদ বলেন, আমরা এনবিআরের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। খুব শীঘ্রই আমাদের বক্তব্য এনবিআরের কাছে তুলে ধরবো। তিনি বলেন, বাংলালিংক সব সময় দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলালিংক কখনই কোন ধরণের ট্যাক্স বা ভ্যাট ফাঁকি দেয়নি। তিনি আরও বলেন, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ি কমার্সিয়াল স্পেসের (জমি বা স্থাপনা) ভাড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ওই স্পেসের মালিককেই কর পরিশোধ করতে হবে।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটবের মহাসচিব টিআইএম নূরুল কবীর বলেন, এলটিইউ’র দাবিনামা সঠিক নয়। কেননা, স্থান ও স্থাপনা বাবদ ভ্যাট মালিক দেবেন, কোনো কোম্পানি নয়। এসব কারণে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার (ভ্যাট) মো. মতিউর রহমান বলেন, সকল প্রতিষ্ঠান স্থান ও স্থাপনার ওপর ভ্যাট দিলেও মোবাইল কোম্পানিগুলো দিচ্ছে না। তবে টেলিটক ভ্যাট দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে ক্ষমতার জোরে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করছে।
মোবাইল কোম্পানিগুলো দাবি করছে এলটিইউ’র দাবিনামা সঠিক নয় এ বিষয়ে মতিউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ৩০০ বর্গফুটের ওপরে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত স্থান ও স্থাপনার ভাড়া বাবদ ভ্যাট কোম্পানিকেই দিতে হবে, মালিকপক্ষকে নয়। এনবিআর নিয়ম মেনেই দাবিনামা পাঠিয়েছে। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলাও করা হয়েছে। ফলে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট মোবাইল কোম্পানিগুলোকে সুদ ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণসহ পরিশোধ করতেই হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্যাট

১০ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ