Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাল আটাসহ নিত্যপণ্যেরে মূল্য বৃদ্ধিতে দুর্ভোগে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 চাল-আটা সহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ যথেষ্ঠ কষ্টে আছেন। খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু হলেও সরকারি ভ্রান্ত নীতিমালার কারণে তা এখনো বাজারে কোন প্রভাব ফেলেনি। চালের হাত ধরে আটার দামও বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। শাক-সবজি থেকে শুরু করে সব সধরনের তরকারির দামও এখন আকাশ ছোঁয়া। ৪০টাকা কেজির নিচে কোন সবজি ও তরকারি মিলছে না। বিগত বহু বছর মওশুমের এসময়টিতে সবজি সহ তরকারির দাম এ পর্যায়ে বাড়েনি।
ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। চাল নিয়ে গত তিনমাস ধরে গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি ও প্রচারনার পরেও তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৪৮টাকা থেকে ৫০টাকা। নিম্ন-মধ্যবিত্তের পছন্দের ‘বিআর-২৮’ মানের চালের কেজি ৫২-৫৫টাকা কেজি। আর মধ্যবিত্তের পছন্দের মিনিকেট চাল পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা কেজি দরে। খুচরা পর্যায়ে তা আরো ২-৩ টাকা বেশি। যদিও গত এক সপ্তাহে সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও মাটা চালের দর পাইকারী পর্যায়ে ২টাকা থেকে ৪টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে তার প্রভাব এখনো কম। খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কমেছে ১-২টাকা কেজিতে।
বরিশালের জলা প্রশাসন চালের বাজার মনিটরিং শুরু করেছে ইতোমধ্যে। কিন্তু তাতে তেমন কোন সুফল এখনো দৃশ্যমান নয়। এর মূল কারণ খাদ্যে উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত ধানের অন্তত ৮০ভাগই কিনে নেয় উত্তরাঞ্চল সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চালকল মালিকরা। ধানের উৎপাদন হলেও স্থানীয়ভাবে বড়মাপের কোন চাল কল না থাকায় এ অঞ্চলের চালের বাজার এখন উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীদের দাবী দক্ষিণাঞ্চলের চালের বাজার তাদের হাতে নয়। তারা যে দামে চাল কিনছেন মিল মালিকদের কাছ থেকে, পরিবহন খরচ যোগ করে প্রতি কেজিতে ১-২টাকা মুনফায় তা বাজারে বিক্রি করছেন। তবে বিক্রিত এসব চালের বেশিরভাগই বাকিতে বিক্রি করতে হয়। ফলে বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ীরাই চাল বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেন, বিধায় ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ করে কোন অবস্থাতেই কেজিতে ১টাকার বেশি তারা ব্যাবসা করতে পারছেন না বলে জানান। উপরন্তু সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে ট্রাক ভাড়াও গত ছয়মাসে অন্তত ৪০ভাগ বেড়ে গেছে। ফলে পরিবহন ব্যায় বৃদ্ধির কারনেও চালের দাম বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
এদিকে চালের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগে আটার দামও গত সপ্তাহ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২টাকা করে। খুচরা পর্যায়ে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা কেজি। যা আগে ছিল ২৮টাকার নিচে। আর প্যাকেটজাত আটার দামও বড়ে এখন ৩২টাকায় উঠেছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার খোলা বাজারে চাল বিক্রির যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তা ভেস্তে যেতে বসেছে আতপ চাল সরবারহের কারণে। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলা ও ৪২টি উপজেলা সদরে ১১৩জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১টন করে মাট ১১৩টন চাল বিক্রি করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৯২জন ডিলার চাল তুলেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ডিলারই ১টন আতপ চাল তোলার পরে তা এক সপ্তাহেও বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে ৩০টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ১১৩টন সরকারি চাল খোলা বাজারে আসার কথা থাকলেও তার এক-তৃতীয়াংশও বাজারে আসছে না।
এ ব্যপারে গতকাল বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, যেসব স্থানে সিদ্ধ চাল রয়েছে আমরা সেখানে তা সরবারহ করছি। তবে সরকারি নির্দেশ হচ্ছে কোন জেলা ও উপজেলাতে আতপ ও সিদ্ধ উভয় ধরনের চাল থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আতপ চালই সরবারহ করা হবে’। ‘সরকারি চাল বিক্রি কার্যক্রম বাজারে কোন প্রভাব ফেলছে না’ এমন অভিযোগের ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করে ‘খুব শিঘ্রই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে’ বলেও জানান তিনি। দক্ষিণাঞ্চলের চালের গুদামে চালের কোন ঘাটতি নেই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে ১৫হাজার টন চাল আমাদের হাতে রয়েছে। আরো প্রায় ১৫হাজার টন বিভিন্ন গুদামের পথে রয়েছে’ বলেও তিনি আস্বস্ত করেন।
এদিকে পেয়াজের বাজারেও খুব একটা সুখকর খবর নেই দক্ষিণাঞ্চলে। এখনো আমদানীকৃত পেয়াজ ৩৫-৩৭টাকা এবং দেশী পেয়াজ ৫০-৫৫টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাক-সবজি থেকে সব ধরনের তরকারির দামও অনেকটাই আকাশ ছোঁয়া। ৪০টাকা কেজির নিচে কোন সবজি নেই। কোন কোন সবজি ৫০টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তবে গোল আলুর কেজি এখনো ১৫-১৬টাকা। গরুর গোসত এখনো ৫শ’ টাকার ওপরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশত সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগিও দেড়শ টাকার ওপরে। সোনালী ২শ’ টাকার ওপরে। মাছের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা রয়েছে ইলিশের সরবারহ বৃদ্ধির কারণে। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে ২২দিনের জন্য ইলিশ আরহরণ, পরিবহন ও বিপণন বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রভাব সব ধরনের মাছের বাজারে পড়বে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ভোজ্য তেলের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ