Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঁদছে কলসিন্দুরের ফুটবল

না ফেরার দেশে সাবিনা

মো: শামসুল আলম খান, বিশেষ সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অঝোরে কাঁদছে। অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবলার মারিয়া মান্দা বান্ধবী ফুটবল কন্যা সাবিনা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মারিয়ার সঙ্গে কাঁদছে কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যারাও। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তছোঁয়া গ্রাম কলসিন্দুরের সাধারণ মানুষজনও, ‘সাবিনার আর আমাদের সঙ্গে ক্যাম্পে যাবে না। হাসি-ঠাট্টা করবে না। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই চিরদিনের মতো ও হারিয়ে গেলো’ এটুকু বলেই রুদ্ধবাক মারিয়া। মোবাইলের অপরপ্রান্তে তখন বুকফাটা কান্নার শব্দ।
গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার সাবিনা আক্তার নিজ গ্রামের বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত হলে স্থানীয় ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাফুফেসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন।
সাবিনা, মারিয়া মান্দারা যার হাত ধরে ফুটবল বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন সেই কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিনও শোকস্তব্ধ। তিনি জানান, ‘বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে সাবিনার পরিবার থেকে আমাকে ফোন করা হয়। তখন জানানো হয় সাবিনা দু’দিন যাবত জ্বরে আক্রান্ত। এখন খুব অসুস্থ। তাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’ ফোন পেয়েই দ্রæত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। দায়িত্বরত চিকিৎসক তার না ফেরার দেশে চলে যাবার দু:সংবাদটি দেন। স্থানীয় ওই বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক মফিজ উদ্দিন জানান, ‘বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল দলের চূড়ান্তপর্বে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবিনা আক্তার। দলের জন্য সে ছিল অপরিহার্য এক খেলোয়াড়। তার আকস্মিক মৃত্যুতে একজন প্রতিভাবান ফুটবলারকে হারিয়েছে দেশ।’ স্মৃতিকাতর মফিজ আরও জানান, ক’দিন আগে দেশের ৪৬ তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন কলসিন্দুর নারী ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন সাবিনা আক্তার। সেই প্রতিযোগিতাতেই সবার নজর কেড়েছিলেন সাবিনা। অনন্য এ মেধা অকালেই ঝরে গেলো।’
ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী জানান, ‘আমরা সাবিনাকে জীবিত অবস্থায় পাইনি। আমাদের এখানে আনার পর পরীক্ষা করে দেখি সাবিনা মারা গেছে।’ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সাবিনা মারা গেছে কী না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘নিশ্চিত না হয়ে অনুমান করে কিছু বলা যাবে না। তার মরদেহ পরিবারের স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে গেছেন।’
মেয়েদের ফুটবলে দুই সাবিনাকে এখন সবাই চেনেন। এবারের অনুর্ধ্ব ১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন নতুন এই সাবিনা। রাইট ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলতেন এই ফুটবলার। আজ সাফের ক্যাম্পেও যোগ দেবার কথা ছিলো তার। তার আগেই সাবিনার না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর খবরে শোকাস্তব্ধ গোটা বাফুফে পরিবারও। মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে তার চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছোটন জানান, ‘সাফের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলো সাবিনা। ক্যাম্পে যোগ দেবার কথা ছিলো। সাফের ক্যাম্পে এবারই প্রথম সে নির্বাচিত হয়েছিলো। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ