Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত নিহত সশস্ত্র বাহিনীর ১৩৫ জন

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দায়িত্ব পালনে সারাবিশ্বে অকুতোভয় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। দেশের বাইরে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা যখন দায়িত্ব পালন করেন, তখন কর্তব্যবোধ থেকে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে কখনো পিছপা হন না। বর্তমান বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর ১৩৫জন কর্মকর্তা ও সদস্য। সর্বশেষ আফ্রিকার দেশ মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশি সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন এক মেজরসহ চারজন। এ আত্মত্যাগের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁ। বাংলাদেশ সরকার ও নিহতের শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি তিনি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের অধীনে বিভিন্ন দেশে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখে চলেছে। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে এদেশের সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য জাতিসংঘের পতাকাতলে একত্রিত হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবাদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সিয়েরালিয়ন, কঙ্গো, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। বিশ্বের অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় এলাকায় শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশ আজ এক আস্থার প্রতীক। আর এই সুনাম অর্জন করেছেন বাংলাদেশের ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন শান্তিরক্ষী কর্মী। এদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪৪ জন এবং পুলিশের ১৬ হাজার ৯৬৭ জন সদস্য রয়েছেন। ৪০টি দেশের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষীরা অংশগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে জীবন উৎসর্গ করেছেন ১৩৫ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন ২১৫ জন। বর্তমানে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৭৩৬ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ সদর দপ্তর ও ১২টি দেশে নিয়োজিত রয়েছেন। সূত্র মতে, পশ্চিম আফ্রিকার সংঘাতময় দেশ মালি। ১৯৬০ সনে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালির ইতিহাস অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। দীর্ঘ সামরিক শাসন এবং গোষ্ঠিগত সংঘাতে বিপর্যন্ত এ দেশটিতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ শুরু করে ২০১৪ সনের এপ্রিল মাস থেকে। ২০১২ সন থেকে দেশটিতে সংঘাত আরো জোরালো হয়। দেশটিতে স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তিচুক্তি হলেও সেটি টেকসই হয়নি। এরপর মালি সরকারের অনুরোধে ২০১২ সনের শেষের দিকে জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিক শান্তিরক্ষী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারপরেও সংঘাত থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সময় শান্তিরক্ষীরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। সে রকম একটি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের উপর। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় গত ২৩শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের সাথে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ হয়। সে ধারাবাহিকতায় ২৪ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয় শান্তিরক্ষীরা। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা ই¤েপ্রাভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি বিস্ফোরণে তিনজন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিহত এবং চারজন আহত হন। মালিতে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা প্রায় ১৭০০ যার মধ্যে সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় এক হাজার তিনশত জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শান্তিরক্ষা মিশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ