Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বজ্রপাত বেশি বৃষ্টি কম সারাদেশে ভ্যাপসা গরম

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশ্বিনে এসে ‘অকালে’ বজ্রপাত হচ্ছে বেশি। গতকালও (সোমবার) দেশের বিভিন্ন স্থানে বিকট বজ্রের গর্জন হয়েছে। অথচ সেই তুলনায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে কম। সারাদেশে গা-জ্বলা ভ্যাপসা গরম অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৬.৪ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৯ ও ২৮.৬ ডিগ্রি সে.। তবে ঢাকার প্রকৃত তাপদাহের অনুভূতি ছিল ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রিতে। গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি এবং কুতুবদিয়ায় সর্বোচ্চ ৮৩ মিলিমিটার ভারী বর্ষণ হয়েছে। অন্যসব বিভাগে তেমন বৃষ্টি হয়নি। বরং বেড়েছে গরমের তেজ।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায় আগামী ২ দিনে দেশে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এর পরবর্তী ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি, রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
বিপর্যস্ত রাজশাহীর জনজীবন
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, প্রবাদ আছে আশ্বিনে গা শীন শীন করে। অর্থাৎ শীত শীত ভাব অনুভুত হয়। কিন্তু এবার আশ্বিনের দশটা দিন পার হয়ে গেলেও সমানে দাপট দেখাচ্ছে ভ্যাপসা গরম। যেমন তাপমাত্রা রয়েছে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে। তেমনি বাতাসে আদ্রতা ৮৮ শতাংশ। ফলে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অসহনীয়। বর্ষাকাল শেষে শরবত শুরু হলেও আবহাওয়াতে তার লক্ষণ নেই। যদিও মরা পদ্মার চরের কাশবন জানান দিচ্ছে শরতের শুরু হয়েছে। তবে শরতের মাঝামাঝি এমন আবহাওয়াকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন স্বাভাবিক। এদিকে একদিকে অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরম। অন্যদিকে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক আসা যাওয়ার খেলায় বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন। রাজশাহী অঞ্চলে লোশেডিংয়ের মাত্রা চরম আকার ধারণ করেছে। দিন রাত সমান তালে চলছে বিদ্যুতের আসা যাওয়া। একবার বিদ্যুত চলে গেলে দেড় দু’ঘন্টার মধ্যে আর ফিরছেনা। এলাকা ভেদে আট দশবার লোশেডিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। অস্বস্তিকর আবহাওয়া থেকে একটু স্বস্তি পাবার জন্য বৈদ্যুতিক ফ্যান ভরসা হলেও বিদ্যুতের অভাবে সেটিও চলছেনা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে নগরীর সব পানির পাম্প একসাথে না চালাতে পাবার কারণে লাইনে প্রেসার কম থাকছে। উপরে উঠছেনা। ফলে পানি সংকট চরমে উঠেছে। অথচ নগরবাসীর ভরসা সরবরাহের পানি। ঘন ঘন লোশেডিংয়ের কারনে জনজীবন বিপর্যস্ত হবার পাশপাশি অফিস আদালত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কলকারখানায় কাজে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে।
রাজশাহীর নর্থ ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, জাতীয় গ্রীড থেকেই বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ মিলছে। ফলে নগরীতে লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি নিয়ে আমরা নিজেরাও বিপাকে আছি। নগরীতে প্রায় ৯২ থেকে ৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ মিলছে ৫০ থেকে ৫৪ মেগাওয়াটের মতো। বাকিটা না পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। আগস্ট মাস থেকে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। সে কারনে উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছে। এর প্রভাব শুধু রাজশাহীতে নয় সারা দেশেই পড়েছে।
এদিকে বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে বইসহ অন্যান্য জিনিষপত্র ফটোকপি করতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এছাড়াও কম্পিউটার কেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। অনেক অফিসে জেনারেটর বা আইপিএস না থাকায় গুরুত্বপুর্ন তথ্য হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাজশাহী অঞ্চলে চলমান বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। চলমান বিদ্যুত সংকট নিয়ে নগরবাসীও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজশাহীতে এখন বিদ্যুতের ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে। দিন ও রাতের বেশীর ভাগ সময় বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছেনা। নামাজের সময় খাওয়ার সময় বিদ্যুত চলে যাচ্ছে। একবার বিদ্যুত গেলে দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থা কলকারখানায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। সকালে গোসলের পানি মিলছে না। রান্নাবান্নার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুতের এ অবস্থার মুখে তাদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটছে। এ অবস্থা কয়েকমাস ধরে থাকলেও পরিস্থিতি উন্নয়নে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নেই। বিদ্যুতের কাঙ্খিত সেবা মিলছেনা। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরও সেবা পাওয়া যাচ্ছেনা। যত্রতত্র অবৈধ মিটারেও সংযোগ দেয়া হচ্ছে বিদ্যুত। আর সাধারন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ভুতুড়ে বিল। কর্মকর্তা কর্মচারীরা অবৈধ ভাবে টাকা কামাইয়ের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তদারকি না থাকায় বিদ্যুতের এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বজ্রপাত

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ