Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রশ্নে বিশ্বনেতাদের কণ্ঠে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিধ্বনি

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়। সঙ্কট সমাধানে শেখ হাসিনার দেওয়া ৫ দফা প্রস্তাব প্রতিধ্বনিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কণ্ঠে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন বিশ্বনেতারা। শেখ হাসিনার ভাষণের পরেই এশিয়ার দেশ পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কাজাখাস্তান, পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন, আরব আমিরাত, কুয়েত, সউদী আরব, তিউনিসিয়া, আর ইউরোপের আয়ারল্যান্ড ও জার্মানি মিয়ানমার সঙ্কট নিরসনের প্রশ্নে সরব হয়।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১ সেপ্টেম্বর দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কট উত্তরণে পাঁচটি প্রস্তাব হাজির করেন। এগুলো হলো: এক: কোনও শর্ত আরোপ ছাড়াই অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের সহিংসতা ও জাতিগত নিধন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। দুই: জাতিসংঘ মহাসচিবের মাধ্যমে একটি অনুসন্ধানী কমিটি গঠন করতে হবে। তিন: জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত রাখাইনের সব নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিককে সুরক্ষা দিতে হবে। এজন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা তৈরি করা যেতে পারে। চার: বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তুচ্যূত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সে ব্যবস্থা করা। পাঁচ: রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশাল হলরুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কণ্ঠেও একই দাবিগুলো প্রতিধ্বনিত হয়। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার যে দমননীতি চালাচ্ছে ও তাদেরকে পালাতে বাধ্য করছে সেগুলোর ব্যাপারে কঠোর নিন্দা জানান সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আহমেদ আল-জুবেইর। চলমান ট্র্যাজেডির দ্রুত অবসানের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি। রোহিঙ্গাদেরকে নিয়মিতভাবে সউদী সরকার মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আল-জুবেইর আরও বলেন, সউদী বাদশাহ ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ করছেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ পথ নিশ্চিত করা ও তাদের জীবনমানের উন্নয়নে সহায়তা করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছেন।
কুয়েতী আমির জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাগ অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকার প্রদান এবং নিরাপদ জীবন-যাপন নিশ্চিত করার জন্যও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেন, ‘ভোগান্তি দূর করতে এবং সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে রাজনৈতিক ও মানবিক দুই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদেরকে যত দ্রæত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রসের মাধ্যমে জার্মানি আবারও রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা জোরালো করবে।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ জায়েদ আল-নাহিয়ান রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস কর্মকান্ড, স্থানচ্যূতি এবং কালেকটিভ পানিশমেন্ট তথা নির্বিচার সাজার (কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংগঠনের অপরাধ সংঘটনের দায়ে গোটা জনগোষ্ঠীর ওপর সাজা আরোপ) নিন্দা জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের ভোগান্তি কমাতে আমিরাত সরকার সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।
রোহিঙ্গাদের সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে দায়ী করেন বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালিদ বিন আহমেদ বিন মোহাম্মদ আল খলিফা। মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে আইরিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন কোভিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে আয়ারল্যান্ড। এ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আমাদেরকে সামরিক কর্মকান্ড (মিয়ানমারে) বন্ধ; সহিংসতার অবসান ঘটানো, আইনের শাসন বজায় রাখা এবং যারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে তাদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে জোর দিতে হবে।’
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো শ্রি আনিফাহ আমান বলেন, মিয়ানমার ও রাখাইন রাজ্যে যে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চলছে তাতে অগণিত নিষ্পাপ জীবন ঝরে পড়ছে। সহিংসতা বন্ধ এবং জীবন ও সম্পদের ধ্বংস ঠেকাতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী খেমিয়াস ঝিনাওই।
এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি তার ভাষণে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর যে জাতিগত নিধন চালানো হয়ে থাকে তার মধ্য দিয়ে কেবল মানবিকতাই ক্ষুন্ন হয়নি, বরং বিশ্ব বিবেককেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।’
কাজাখস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ, ওআইসি এবং মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাধারণ অধিবেশনের এক ফাঁকে দেওয়া বক্তব্যে তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান বলেন, এমন দিন ও যুগে এ ধরনের ‘দৃশ্য দেখাটা লজ্জার’। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। রোহিঙ্গা প্রশ্নে তুর্কি ফার্স্ট লেডি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে বার বার উদ্ভূত হওয়া এ সঙ্কট সমাধানে একটি দীর্ঘস্থায়ী উপায় নিশ্চিত করাটা প্রত্যেকের মানবিক দায়িত্ব। কূটনৈতিক ও মানবিক দুই দিক থেকেই তুরস্ক এ পরিস্থিতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত রয়েছে।’
অবশ্য, মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট উ হেনরি ভান থিও বলেছেন, বাংলাদেশের দিকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার পালিয়ে আসা অব্যাহত থাকার যে খবর রয়েছে নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। এ ধরনের দলবদ্ধ প্রস্থানের কারণ এখনও নির্ণয় করা যায়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি। মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিশাল সংখ্যক মুসলিম তাদের গ্রামে থেকে যাওয়াকেই সিদ্ধান্ত হিসেবে বেছে নিয়েছে।
থিও বলেন, ‘রাখাইনের পরিস্থিতি জটিল। আমরা যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি তা তাৎপর্যপূর্ণ।’
মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের সঙ্গে কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার দেশ। সীমান্ত নিরাপত্তায় পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে যেকোনো সময় আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।



 

Show all comments
  • Mohammed Mansoor ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৫:৩১ পিএম says : 0
    Absolutely right
    Total Reply(0) Reply
  • রাকিব ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৬:০১ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ভুমিকা অনন্য
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ