পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাগর মোহনা ও ভাটি অঞ্চলে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা বাড়লেও ইলিশের বাড়ী খ্যাত চাঁদপুর-ল²ীপুর মোহনায় উৎপাদন কমেছে। এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ইলিশের ভিড়ে নকল ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর আসল ইলিশ পাচার হয়ে যাচ্ছে সাগর থেকেই।
কিছু দিন আগে ইলিশের দাম ছিল অস্বাভাবিক। এ সুযোগে ইলিশের মতো দেখতে সামুদ্রিক সার্ডিন ও চৌক্কা মাছ কে ইলিশ মাছ বলে বাজারে বিক্রি করছেন কতিপয় মাছ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র। এ মাছ স্বাদে-গন্ধে ইলিশের মত না হলেও এ মাছ ক্রয় করে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন ভোক্তা সাধারন।
জানা গেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের কাঁচা বাজারে রাতের আঁধারে অলিতে গলিতে বড় বড় পাতিলে করে এসব মাছ ইলিশ বলে প্রতিনিয়তই বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর হাতিরপুল, ঝিকাতলা কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিক্রেতারা বলছেন স্যার দু’ধরনের ইলিশ মাছ আছে। একটির দাম বেশী, একটির কম। কোনটি নেবেন? বিশেষ করে গত এক দেড় মাস রাজধানী ঢাকার অলিতে গলিতে বড় বড় পাতিল ভরে অসাধু ব্যবসায়ি চক্রের প্রতিনিধিরা এ মাছ অবাধে বিক্রি করে চলছে।
গত শনিবার রাতে রাজধানীর কাঠাল বাগান এলাকায় হেঁটে যেতে আলো আধারীতে এক ব্যবসায়ী ক্রেতা সাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য চিৎকার দিয়ে বলছেন ১ হালি ১ হাজার টাকা। পথচারীরা থমকে দাড়িয়ে দেখছেন। কেউ কেউ দাম ঠিক করে ক্রয় করছেন। মাছগুলো দেখতে জাটকা ইলিশের একটু বড়। প্রকৃত পক্ষে এ মাছগুলোই হচ্ছে সার্ডিন মাছ। একজন বলছেন এগুলো ইলিশ মাছ নয়। বিক্রেতা বলেন সমুদ্রের ইলিশ তাই নদীর ইলিশের চেয়ে একটু ভিন্ন রকমের।
বাংলাদেশ মৎস গবেষনা ইনিস্টিটিউটের চাঁদপুরের উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, দেশে জাটকা ছাড়াও ইলিশের মতো দেখতে সার্ডিন ও চৌক্কা মাছ পাওয়া যায়। এ মাছ ইলিশের মতই তবে ইলিশের চেয়ে চওড়ায় কম এবং চোখের আকার বড়। মাথা লম্বা সামনের অংশ ভোতা। এ মাছে ইলিশের গন্ধ নেই। এ মাছ সমুদ্রে থাকলেও মাঝে মধ্যে নদীর মোহনায় চলে আসে। জেলেদের জালে ইলিশের সাথে এ মাছও ধরা পড়ছে। চেহারা মিল থাকায় মাছ ব্যবসায়িরা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করছেন। এই কর্মকর্তা আরো বলেন একটি পরিপূর্ণ ইলিশ লম্বায় ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। সমুদ্রের এই সার্ডিন-চৌক্কা আকারে ইলিশের ধারে কাছেও যেতে পারেনা। সাগরে সারা বছরই এ মাছ ধরা পড়ছে। এ মাছ বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে।
মৎস্য সমিতির নেতা আশরাফ হোসেন মাসুদ ইনকিলাবকে জানান, সার্ডিন মাছ ওমান থেকে আমাদের দেশে আসছে। দাম কম হওয়ায় এটি আমদানি করা হচ্ছে।
আমাদের চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা বি এম হান্নান, বিভিন্ন মাছ ব্যবসায়ী, জেলে ও মৎস্য বিভাগের সাথে আলাপ করে ইনকিলাব জানান, ইলিশের বাড়ী খ্যাত চাঁদপুর-ল²ীপুরে ইলিশের উৎপাদন এবার কম হবে। উৎপাদন বেড়েছে ভাটি অঞ্চলে এবং সাগর মোহনায়। বি এম হান্নান বলেন উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের বন্যার পানি পদ্মা-মেঘনা হয়ে বে অব বেঙ্গলে পতিত হচ্ছে। এ দূষিত পানি নদী দু’টির পানি ঘোলা হয়ে যায়। তাছাড়া এ দুটো নদীতে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে এ কারনে সাগর মোহনা ও ভাটি অঞ্চল থেকে ইলিশ এ নদী দুটিতে আসতে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। এজন্য চাঁদপুর-ল²ীপুর অঞ্চলে এ বছর ইলিশের লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হবে না। তবে সাগর মোহনা বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ ভাটি অঞ্চলগুলোতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।
বাংলাদেশ মৎস্যজীবি সমিতির কেন্দ্রিয় নেতা মোস্তফা পাটোয়ারী ইনকিলাবকে জানান, সাগর পথে রুপালী ইলিশ পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। এবার পদ্মা মেঘনায় মাছ কম ধরা পড়ায় সাগরের মোহনায় বেশী ধরা পড়ায় ইলিশ মাছ সাগর পথে কালো বাজারে পাচার হচ্ছে। সরকারীভাবে রপ্তানি কম হচ্ছে। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়িরা এবার শত শত কোটি টাকা অবৈধ ভাবে আয় করছেন। সরকার হারাচ্ছে প্রচুর রাজস্ব।
উল্লেখ্য কয়েকদিন আগেও ইলিশের সরবরাহ কম ছিলো। দামও ছিলো আকাশ ছোয়া, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাধ পুষ্টি নিতে পারছিলেননা। গত কয়েক বছর জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ার কারনে ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে বাজারে সাগর মোহনা ও ভাটি অঞ্চলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। বর্তমানে দামও সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। গত দু’দিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মূল্য কেজি প্রতি সাড়ে ৪শ’ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮শ’ টাকা ও ১ কেজী ওজনের ইলিশ ১হাজার থেকে ১২শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মৎস বিভাগ সূত্রে জানা গেছে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ইলিশের উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ৪লাখ টন ধারনা করা হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে সাড়ে ৫ লাখ টনের বেশী উৎপাদন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মৎস ও প্রানী সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, জাটকা সংরক্ষন ও মা ইলিশ রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রমের আওতায় ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০টি মোবাইল কোর্ট ও ৩৩ হাজার ৬৩৫ টি অভিযান চালানো হয়েছে। জেলেদের বিরুদ্ধে ৬ হাজার ৬শ’ ৫০টি মামলা হয়েছে।
জেলেদের থেকে ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৫হাজার ৯৩জন জেলেকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এ অভিযানে ৮৮ কোটি ৭৮ লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যেগের ফলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।
প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ আসলেই ইলিশের চাহিদা বাড়ায় ব্যবসায়িরা দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ সুযোগে নকল ইলিশ সার্ডিন ও চৌক্কা কে ইলিশ বলে বাজারে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ী অসাধু সিন্ডিকেট। এ সময় এসব মাছ ব্যবসায়িরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।