পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আশ্বিন মাসে এসেও এখন হচ্ছে বজ্রপাত। বজ্রাঘাতে মারা পড়ছে মানুষ। গত শনিবার দেশের অনেকস্থানে স্থানভেদে সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যা ও মধ্যরাতে কড় কড় বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়েছে মুহুর্মুহু। বজ্রপাতে দিনাজপুরে ৮ জনসহ সুনামগঞ্জ, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও নওগাঁয় মোট ১৩ জনের মৃত্যু ঘটে। মাঝরাতের পরপরই প্রায় এক ঘণ্টা ধরে প্রচন্ড আওয়াজে বজ্রপাতের সময় চট্টগ্রাম মহানগরীজুড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষজন। এর ক’দিন আগে বিকট বজ্রের সময় ভয়ে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান একজন মহিলা। গতকালও (রোববার) দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বজ্রপাত হয়েছে।
অসময়েই এভাবে বজ্রপাত কেন? জানতে চাইলে গতকাল জলবায়ু, পরিবেশ ও বিদ্যুৎক্রিয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এর অন্যতম কারণ। ক্রমাগত রুগ্ন-রুক্ষ আবহাওয়া-জলবায়ুর আলামত বহন করছে অসময়ে বজ্রপাতের আধিক্য। তাছাড়া পরিবেশ বিপর্যয়, তাল-সুপারি গাছের মতো উঁচু গাছপালা ব্যাপকভাবে নিধনের কারণে বাংলাদেশে ব্রজপাতের প্রবণতা বেড়ে গেছে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া মোবাইল ফোনসহ হরেক ধরনের ইলেকট্রিক-ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী (গেজেট) অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারও দায়ী।
এদিকে শরতঋতুর আশ্বিনে যেখানে হালকা শীতের আমেজ শুরু হওয়ার কথা সেখানে মানুষ ভ্যাপসা গরমে কাহিল হয়েছে গতকালও। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল (আগের দিনের চেয়ে আরও বেড়ে গিয়ে) যশোরে ৩৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫ এবং ২৮.৮ ডিগ্রি সে.। তবে বাস্তবে গরমের অনুভূতিতে তাপমাত্রা ৪০/৪৩ ডিগ্রি সে.। অপরিকল্পিত ও বদ্ধ-বিকারগ্রস্ত মহানগরী ঢাকা বহু আগেই পরিণত হয়েছে ‘গ্যাস চেম্বারে’। এই নগরীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা গা-সওয়া হয়ে গেছে নগরবাসীর।
অসময়ে ব্রজপাতের কারণ সম্পকে জানতে চাইলে গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসই হচ্ছে বজ্রপাত বা বজ্রঝড়ের মূল সময়কাল (পিক পিরিয়ড)। তবে বর্তমানে একটি পশ্চিমা লঘুচাপ (ওয়েস্টরলি ডিস্টারবেন্স) বিরাজ করছে। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায়। তাই বর্তমান সময়টাতে অর্থাৎ মৌসুমি বায়ুর বিদায়ের আগে আবহাওয়ার পালাবদল ঘটতে শুরু করেছে। এই ট্রানজিশনাল সময়েও বজ্রপাত হতে পারে। যা এখন হচ্ছে। এমনকি অক্টোবর পর্যন্তও বজ্রপাতের ঘনঘটা থাকতে পারে। তবে সেই সাথে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বজ্রপাতের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে এই আবহাওয়াবিদ উল্লেখ করেন।
এদিকে বাংলাদেশে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের তালিকায় সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত, বজ্রবৃষ্টি, বজ্রঝড়ের প্রকোপ বেড়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি বাড়ছে। বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণে জনমনে ভয়-আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১০ বছরে দেশে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ২ হাজার ৫৭৪ জন। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। চলতি বছরে এ যাবত বজ্রাঘাতে প্রায় সাড়ে ৩শ’ মানুষ মারা গেছে। প্রচুর গবাদিপশুর মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে বজ্রপাতের মাত্রা এখন বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধি ছাড়াও জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি, খোলা জায়গা ও ডোবা-জলাশয় নির্বিচারে ভরাট, বন-জঙ্গল হ্রাস, তাল, সুপারি, নারকেল গাছের মতো উঁচু উঁচু গাছপালা নিধনের কারণে সরাসরি বজ্রপাত নেমে আসছে মানুষের উপর। মেঘে মেঘে ঘর্ষণে বজ্র এবং তা মাটির সংস্পর্শে এলেই বজ্রপাত হয়। বজ্রের ভেতরে ৫০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত ভয়াবহ তাপমাত্রা বা ‘সুপার হিট’ তৈরি হয়ে থাকে। যার আওয়াজ ১০ মাইল দূর থেকে শোনা যায়। আকাশে বিদ্যমান জলকণাগুলোতে চার্জ সঞ্চিত হওয়ার কারণে বিপরীত পোলারাইজেশন তৈরি হয়। জলকণায় ব্যাপক চার্জ হওয়ার কারণে যখন তা ধরে রাখতে পারে না। নিচের দিকে চলে এসে বজ্রপাত হয়।
খোলা মাঠে-ময়দানে, বিলে, হাওর-বাওরে, নদীতে খোলা জায়গায় বজ্রপাত সরাসরি আঘাত করতে পারে এবং এতে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। এর ফলে প্রধানত কৃষক-কিষাণী, জেলে ও মাঝি-মাল্লা, শ্রমজীবি, পথচারীসহ খোলা জায়গায় বিচরণকারী মানুষ বজ্রপাতের শিকার হয় সবচেয়ে বেশি। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন গুমোট হয়ে আসলে কিংবা বৃষ্টির সময় এ ধরনের খোলামেলা জায়গা এড়িয়ে বাড়িঘরে নিরাপদ স্থানে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞগণ। সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্র-নিরোধক প্রাকৃতিক ‘টাওয়ার বৃক্ষ’ ১০ লাখ তালগাছের চারা ও বীজ রোপনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন বজ্র-প্রবণ এলাকায় বজ্রনিরোধক টাওয়ার এবং পূর্বাভাসের জন্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।