পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লাগামহীন পাইকারি চালের বাজারে চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো খুচরা বাজারে তার প্রভাব পরেনি। গতকাল শুক্রবার পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমায় কেজিতে দাম কমেছে ২ থেকে ৩ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চাল বিক্রেতারা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা চালের বাজারে দাম কমার প্রভাব এখনও পড়েনি। দাম কমতে আরও কয়েকদিন লাগবে। ক্রেতাদের অভিযোগ, নিয়মিত বাজার তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। তাদের মতে, সরকার নিয়মিত বাজার তদারকি করে না। আর এ সুযোগে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, চালের দাম নির্ধারণে সরকারি বিপণন ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হবে। গত ১২ সেপ্টেম্বর হঠাৎই গুজব ছড়ায়, চাল রপ্তানী বন্ধ করছে ভারত। দেশটির কয়েকটি গণমাধ্যম এ খবরকে মিথ্যা প্রচারণা বললেও গুজব ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ জুড়ে। যার ফলে একরাতের ব্যবধানে দেশের বাজারে অন্তত দশটাকা বাড়ে সব ধরনের চালের দাম। এরপর থেকে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ে প্রতিদিন।
রাজধানীর কয়েক জন পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল আমদানির সুযোগ দেয়ায় বাজারে সরবরাহ বাড়ছে। এতে চালের দামও কমেছে। বাজারে মোটা চাল কেজিপ্রতি ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকার উপরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। তবে অন্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে বাবুবাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৮-৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৬৬-৬৮ টাকায় বিক্রি হয়। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ফলে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক চাল আমদানি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা জাতের চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে। দুই-তিনদিন আগে এসব চাল ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। আর রতœা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। দুই-তিন দিন আগে এসব চাল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামী রোববারের আগে খুচরা দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ আগের চাল বিক্রি শেষ হলেই তারপর দাম কমা শুরু হবে। এর আগে গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চালের দাম কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের প্রথমে নতুন ফসল উঠবে। কাজেই চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। চালের কোনো সংকট নেই বলেও দাবি করেন তিনি। বন্যা ও হাওরের পানি বেড়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি চাল আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্র মতে, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারত থেকে চাল আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। এছাড়া বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে উপজেলা পর্যায়ে ওএমএস চালু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
কোরবানি ঈদের পর কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠে দেশের চালের বাজার। বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে প্রায় ১০ দরে বেড়ে যায়। অবশ্য চাল ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, সংকট কাটাতে চাল আমদানির শুল্ক দেরিতে কমানো, চাল ও ধান সংগ্রহে সরকারের দাম অনেক কম হওয়াসহ নানা কারণে এবার চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য, শুল্ক কমিয়েও চালের বাজারে স্বস্তি আনতে পারছিল না সরকার। এ অবস্থায় মজুতবিরোধী অভিযান শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ মঙ্গলবার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিন মন্ত্রী। সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিলে চালের দাম কমে আসবে বলে ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। এর পরই পাইকারী বাজারে চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করে।
সাড়ে ৪ লাখ টন চাল কোথায়
চট্টগ্রাম বন্দরে সাতটি জাহাজের দেড় লাখ টন চাল খালাস চলছে আসছে আরও এক লাখ টন : অথচ বাজারে সুফল নেই
শফিউল আলম : চট্টগ্রাম প্রধান সমুদ্র বন্দর দিয়ে গত প্রায় আড়াই মাসে চাল আমদানির পরিমাণ ব্যাপক। যার বেশিরভাগই আমদানি করা হচ্ছে সরকারি খাতে। প্রতিদিনই বন্দরে প্রচুর চালের চালান খালাস ডেলিভারি পরিবহন করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবারও বন্দরের বহির্নোঙরে ও জেটি-বার্থে চাল খালাস ও সরসারি ডেলিভারির কাজ চলেছে পুরোদমে। চট্টগ্রাম বন্দর-শিপিং-কাস্টমস সূত্রগুলো জানায়, গত জুলাই আগস্ট মাসজুড়ে ও চলতি ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আড়াই মাসেরও কিছু বেশি সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পর্যায়ক্রমে ২১টি জাহাজ আমদানিকৃত চাল নিয়ে আসে। জাহাজবহর থেকে এ যাবত চাল খালাস ও ডেলিভারি পারিবহন করা হয়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। সরকারি ও বেসরকারি উভয়খাতে বিভিন্ন দেশ থেকে আনীত হয়েছে এই বিপুল পরিমাণ চাল। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাল খালাস খুব দ্রæতায়িত করতে বন্দরের সিসিটি-এনসিটির দুইটি জেটি-বার্থ বিশেষভাবে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। গতকাল বন্দরের জেটি-বার্থ ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত সাতটি জাহাজবাহিত প্রায় দেড় লাখ টন চাল খালাসের কাজ চলে। আগামী এক সপ্তাহে আসছে আরও প্রায় এক লাখ টন চাল।
চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও ইতোপূর্বে (রোহিঙ্গা নিপীড়ন-গণহত্যার আগে) মিয়ানমার থেকেও আমদানি করা বিপুল পরিমাণ চাল টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে খালাস করা হয়। অথচ অব্যাহত চাল আমদানি, খালাসের পরও বাজারে তেমন কোনো সুফল দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আড়াই মাসে আনীত সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল চলে গেল কোথায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আর জোরালো সন্দেহ-সংশয় ঘুরপাক খাচ্ছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম মহানগরী ও শহরতলীর কয়েকটি গুদামে আমদানিকৃত চালের ‘গোপন’ মজুদের হদিস লাভ ও মোবাইল কোর্টের অভিয়ানে গুদাম সিলগালা করে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অতিলোভী মজুদদার ও মুনাফাখোরদের আমদানির চালের গন্তব্য, এ নিয়ে চালবাজির আসল চেহারা উন্মোচিত হতে শুরু করেছে সবেমাত্র। যদিও চাল মজুদদার সিন্ডিকেটের অনেকেই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। শহরের বাইরে সীতাকুÐসহ বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত ও রুগ্ন কল-কারখানার গোডাউনগুলোতে আমদানির চাল বন্দর থেকেই সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতবার মাহে রমজানের আগে চিনিসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও এমনটি দেখা গেছে।
এদিকে দেশে চালের মজুদ তলানিতে ঠেকে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধির পর চাল, গমসহ খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের অতিকৌশলী চাপাচাপি ও আবদার রক্ষা করতে গিয়ে সরকার আমদানি শুল্ক-কর ছাড়ের অবারিত সুযোগ অবারিত করে দেয়। তখন থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে চালের আমদানি চালানবাহী বিদেশি জাহাজ আসতে থাকে আসে একের পর এক। চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে খুব কাছাকাছি চাল আমদানির বড় উৎস হওয়ার কারণে মিয়ানমারের আরাকানের আকিয়াব (সিটুইয়ে) থেকে টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে চাল আমদানি হয় ব্যাপক। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ও জেটি-বার্থে দ্রæততর সময়ের মধ্যে চাল খালাসের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সরকারিখাতে গত জুলাই মাস থেকেই জাহাজবহর বোঝাই চাল খালাস, ডেলিভারি পরিবহন কাজ অব্যাহত রয়েছে। অথচ এতোসব উদ্যোগ-আয়োজন সত্তে¡ও অব্যাহত চাল আমদানির তেমন কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা। চালের দাম আগের মতো আকাশছোঁয়াই থেকে গেছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ চালের আড়ত ও বাজার পাহাড়তলী, রেয়াজুদ্দিন বাজার ও চকবাজারে মূল্য হালচাল যাচাই করে জানা যায়, গত সপ্তাহে নগরীর ৫টি স্থানে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের অভিযান ও বিপুল মজুদকৃত চালের গুদাম সিলগালা করার ফলে পাইকারি দরে কোনো কোনো ধরনের চালের দাম বস্তাপপ্রতি একশ’ টাকা পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। অধিকাংশ ক্যাটাগরির চালের দাম অপরিবর্তিত অর্থাৎ চড়া দামেই রয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় গরিবের মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা ও চায়না ইরি। যা গতকাল খুচরা বিক্রি হয়েছে কেজি ৫০ টাকা থেকে ৫৪ টাকা। এক মাস আগেও এই চালের দাম ছিল কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। অবশ্য টিসিবি গতকালের বাজারদরে এ চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) মূল্য উল্লেখ করেছে কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। গতবছরের ঠিক এ সময়ের তুলনায় গরীবের মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে টিসিবির হিসাবেই প্রায় ৪৫ শতাংশ। গরিবের মোটা চাল ছাড়াও মধ্যবিত্তের পছন্দের পাইজাম, মিনিকেট, জিরা শাইল, নাজির শাইল, লতা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৪ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। যা এক মাস আগে ছিল ৫২ টাকা থেকে ৬২ টাকা। এসব মধ্যমমানের চালের মূল্য বৃদ্ধির হার গতবছরের দরের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনীত চাল খোলা বাজারে ক্রেতা সাধারণের কাছেই পৌঁছে যেতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগী, মজুদদদার কিংবা মুনাফাখোরদের অপতৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না। অবৈধ মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলবে। তবে এতে প্রকৃত ও সৎ ব্যবসায়ীদের ভয় পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ জানান, দেশে সার্বিকভাবে চালের যে ঘাটতি রয়েছে তার বিপরীতে চালের আমদানি এখনো পর্যাপ্ত নয়। আমদানি আরও বৃদ্ধি পেলে বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই। সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে চাল আমদানি যেহেতু বাড়ছে ধীরে ধীরে দামও কমে আসবে বলে আমরা আশা করি। চালের মজুদ ঘাটতি নিরসনে এ বছর এককভাবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ চাল আমদানি করা হচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে। মোট ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল জি-টু-জি চুক্তির ভিত্তিতে দ্রæত প্রক্রিয়ায় আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।