পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য প্রচার করেছে আলেম সমাজ। আর এ খুতবা স্থানীয়ভাবে মনিটর করেছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার আগে থেকেই রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকার মসজিদে অবস্থান নেন সংশ্লিষ্ট এলাকার আওয়ামী লীগের পদস্থ নেতাকর্মীরা। তারা নামাজের আগেই বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও ইমামদের নামাজের খুতবার আগে অন্তত ১০ মিনিট করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বয়ান রাখার অনুরোধ করেন। দলীয় নেতাদের তদারকিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে সংশ্লিষ্ট খতিব ও ইমামগণ জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্যও রাখেন।
জনগণকে সচেতন করতে এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে খুতবার মাধ্যমে এই উদ্যোগ নেয়ার জন্য দেশবাসীকে বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানায় ইসলামী ফাউন্ডেশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ ইনকিলাবকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসের অনাকাক্সিক্ষত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার পর দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণেই মানুষজনকে সচেতন করতে রাজধানীর মসজিদগুলোতে খুতবার আগে অন্তত ১০ মিনিট জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বয়ানের নির্দশনা দিয়েছে সরকার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মুরাদ বলেন, ইসলাম কখনও সন্ত্রাসে-জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না। ইসলামের নামে যারা এসব অপকর্ম করছে আইনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজধানীর প্রতিটি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিরোধ কমিটি ঘোষণার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. শাহে আলম মুরাদ বলেন, আমরা মসজিদে মসজিদে মনিটরিং করিনি। বলতে পারেন সম্মানিত খতিব ও ইমাম সাহেবদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা যাতে খুতবার আগে অন্তত ১০ মিনিট বাংলায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী বক্তব্য রাখেন সে সম্পর্কে আমাদের নেতাকর্মীরা অনুরোধ করেছেন এবং তাদের সহযোগিতা করেছেন।
মহানগর থেকে এমন নির্দেশনামূলক চিঠি পেয়েছেন এবং নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান মোল্লা সজল।
জুরাইন মেডিকেল রোডে অবস্থিত মুজাদ্দেদীয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ওলামা লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন ১০ মিনিট জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খুতবায় বয়ান করার ব্যবস্থা করেন। মসজিদের খতিব হাফেজ কারি মাওলানা আবদুর রহিম বিপ্লবী জুমার খুতবার আগে এ বয়ান করেন।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান মোল্লা সজল কাঠেরপুল বায়তুর রহমান জামে মসজিদের ঈমামকে অনুরোধ জানিয়ে নামাজের আগে ১০ মিনিট জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ানের ব্যবস্থা করেন। এ সময় মসজিদে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। একইভাবে শ্যামপুর খেয়া বাজার মোল্লাবাড়ি মসজিদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস ড. আওলাদ মসজিদের খতিব মাওলানা মজিবুর রহমানকে দিয়ে ১০মিনিট জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বয়ান করান।
যাত্রাবাড়িতে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মুন, সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না, সূত্রাপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ, মতিঝিলে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন, গে-ারিয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতি সহিদুল ইসলাম মিনু, ধানম-িতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবলা, হাজারীবাগে আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াছুর রহমান, খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মসজিদের খতিবকে দিয়ে বয়ানের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রসঙ্গত, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে গতকাল ১৫ জুলাই শুক্রবার ‘অশান্তি এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সম্পর্কে সতর্কীকরণ’ খুতবা পাঠ করার আহ্বান জানানো হয়। শুধু তাই নয়, ‘অশান্তি এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সম্পর্কে সতর্কীকরণ’ করতে বাংলাদেশের সব মসজিদকেও তা (বায়তুল মোকাররম মসজিদ) অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর কোথাও জুমার খুতবায় উগ্রবাদের প্রচার হয় কি না, তা নজরে রাখার কথা জানানোর পর এবার জাতীয় মসজিদে পাঠের জন্য খুতবা ঠিক করে দিয়ে এই অনুরোধ জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এছাড়াও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি দুই পৃষ্ঠার খুতবার আরবি ও বাংলা তরজমাও পাঠানো হয়।
খুতবার বাংলা তরজমায় বলা হয়েছে, ‘হে মসুলমানগণ! একজন মানুষ সে যাই হোক না কেন তার জন্য পৃথিবীকে নিরাপদ জীবনধারণের অধিকার স্বীকৃত। সে মুমিন হোক কিংবা কাফির হোক কিংবা ফাসেক হোক। অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে খুন করা কিংবা তার সম্পদ গ্রাস করা কিংবা তাকে অপমানিত করা হারাম। কুরআন বলেছে, আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না এবং আরও এরশাদ হচ্ছে যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল। ‘মহানবী বলেন, সর্বোচ্চ কবিরা গোনাহ হল মানুষ খুন করা। এখানে মুসলিম অমুসলিম পার্থক্য করা হয়নি।’
ইসলামের নামে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে জঙ্গিবাদীরা হত্যাকা-ে প্ররোচনা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিভ্রান্তিকর প্রচারে তরুণ-যুবকরা প্ররোচিত হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় উঠে এসেছে।
খুতবায় অভিভাবকদের সচেতন করে বলা হয়েছে, আপনারা আপনাদের সন্তান-সন্ততির বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী ও সাবধান থাকুন। তাদেরকে সুন্দর চরিত্রের শিক্ষা দিন। তাদের বিষয়ে সজাগ থাকুন যে আপনার সন্তানকে আপনার চোখ ফাঁকি দিয়ে যেন সন্ত্রাসীরা কেড়ে নিতে না পারে। সন্ত্রাসীরা এই অবুঝ সরল কিশোরদেরকে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে ভাগিয়ে নিয়ে নানা অপকর্মের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গি বানাতে চেষ্টা করে থাকে।
সবশেষে আমরা আহ্বান করি আমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের যুবকদেরকে সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে বেঁচে থাকতে, হে আল্লাহ! আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশকে আপনি সন্ত্রাস ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন এবং একে শান্তি ও সমৃদ্ধির দেশে পরিণত করুনÑবলা হয়েছে খুতবায়।
খুতবাটি কোন বই থেকে নির্বাচিত হয়েছে বা কে লিখেছেনÑজানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন বলেন, আমাদের যা বক্তব্য, তা বিজ্ঞপ্তি আকারে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
খুলনার মসজিদগুলোয় জঙ্গিবাদবিরোধী খুৎবা
খুলনা ব্যুরো : জুমার নামাজের পূর্বে জঙ্গিবাদবিরোধী বয়ান হয়েছে খুলনার মসজিদে মসজিদে। কোন কোন মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্ধারিত খুৎবাও পাঠ করেছেন খতিব-ইমামরা। আবার, খুৎবা ও বয়ানে জঙ্গি প্রতিরোধ বা উসকানিমূলক কোন বক্তব্য ইমামরা উপস্থাপনা করছে কিনা তা মনিটরিং করেছেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পবিত্র জুমা’র নামাজে নির্ধারিত খুৎবাটি দেশের সব মসজিদে অনুকরণ ও অনুসরণ করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। তাই- গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এ সম্পর্কে নানান আলোচনা-সমালোচনার শুরু হয়। ফলে মুসল্লীদের মধ্যে কৌতূহলেরও কমতি ছিল না জুমার খুৎবা ও বয়ানকে ঘিরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বেশিরভাগ মসজিদে শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা, পবিত্র হজ্ব পালনের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং দীর্ঘ একমাস সিয়াম পালন পরবর্তী ১১ মাসে রমজানের শিক্ষা বাস্তবায়নের গুরুত্বারোপ করে বয়ান দেন খতিব-ইমামবৃন্দ। তবে গড়ে সকল মসজিদেই বয়ান কিংবা মোনাজাতে জঙ্গীবাদবিরোধী বিভিন্ন বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্ধারিত খুৎবার আলোকে বয়ান দেয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও টাউন জামে মসজিদের খতিব আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ বলেছেন, ‘জুমা’র খুৎবায় কোন খতিব বা ইমাম জঙ্গি উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে পারেন না। তবুও উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনা করে জঙ্গিবিরোধী বয়ান দিয়েছি। সন্ত্রাসী কোন কার্যকলাপ ইসলাম সমার্থন করে না। ইসলামের মূলমন্ত্রই হল শান্তি।’
নির্ধারিত খুৎবা প্রেরণের তুমুল সমালোচনা করলেও হয়রানির ভয়ে মিডিয়াতে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক খতিব-ইমাম ও ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে-এটা জঙ্গি দমনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নয়। বরং ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা।
রাজশাহীর মসজিদে জঙ্গিবিরোধী বয়ান
রাজশাহী ব্যুরো : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশ অনুযায়ী শাহ মখদুম (র.) জামে মসজিদসহ রাজশাহীর সব মসজিদেই জুমার নামাজে খুতবার সময় চার পৃষ্ঠার জঙ্গিবিরোধী বিশেষ বার্তা মসজিদের মাইকে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে পড়ে শোনানো হয়।
রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শাহ মখদুম (র.) জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুপুরে জুমার নামাজের সময় দু’টি খুতবা পাঠ করা হয়। তবে প্রথম বিশেষ খুতবাটি ছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের অনুরোধের। আর দ্বিতীয় খুতবাটি ছিল আরবিতে।
এনিয়ে মুসল্লিদের মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও ইসলামী ফাউন্ডেশনের পাঠানো বার্তাটিকে সরকারী ফরমান বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। অনেক মসজিদে অন্যান্য জুমার মত হাদিস কোরআনের বয়ানের পর আরবি খুতবার আগে পাঠানো বার্তাটি পড়ে শোনানো হয়। রাজশাহীসহ গোটা দেশের সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি-শৃঙ্খলা সুসংহত রাখতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।