পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশের নিবন্ধিত মোট মোটরযানের ৬০ ভাগই মোটরসাইকেল : রাজধানীতে অনিবন্ধিত প্রায় ৫ লাখ
‘মোটরসাইকেল’ মানেই বেপরোয়া। রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কে-মহাসড়কে বেপরোয়া এ দুই চাকার যান নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। মোটরসাইকেলের কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতা ও নিয়ম না মানা, এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পথচারীদের। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, এর নিয়ন্ত্রণও জরুরী। রাজধানীতে নিয়মমতো সব গাড়িই দাঁড়ায় সিগন্যালে। শুধু নিয়ম নেই যেন মোটরসাইকেলের। কখনো এগিয়ে চলে একেবেঁকে ফুটপাতে পথচারীদের ঝুঁকিতে ফেলে। কখনো উল্টো পথে, কখনো নিষিদ্ধ বাঁকে মোড় নিয়ে, কখনো আবার বিপজ্জনক গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরজুড়ে। শুধু ফুটপাতই নয়, রাজপথেরও আতঙ্ক এই দুই চাকার যান। মোটরসাইকেল আরোহীদের প্রতিদিনকার এই উৎপাতে সাধারণ পথচারীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ফুটপাতে যান চলাচল বন্ধে রুল জারি করার পরও এখনো ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চলে ট্রাফিক বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। বিআরটিএ হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৬ দশমিক ৭ ভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মোটরসাইকেল। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম কমাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে ট্রাফিক বিভাগকেই। মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চলাচল বন্ধে জরিমানা বাড়িয়ে আইন সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর হিসাব মতে, সারাদেশে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা ১৮ লাখের কিছু বেশি। আর নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এই হিসাবে সারাদেশে মোটর সাইকেলের সংখ্যা মোট মোটরযানের প্রায় ৬০ ভাগ। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার। পরের বছর ২০১৩ সালে নিবন্ধিত হয় ৮৫ হাজার ৮০৮, ২০১৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ হাজার ৬৮৫। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজারে। এর পরের বছর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৩২ হাজার। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মোটর সাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে ৮০ হাজার ৪৬৫টি। বিআরটিএ’র সূত্র মতে, রাজধানীতে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক। এছাড়া নিবন্ধন ছাড়া প্রায় ৫ লাখ মোটর সাইকেল রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে বেশকিছু অবৈধ মোটর সাইকেল আটক করলেও ভারত থেকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অবাধে ঢুকছে ঢাকাসহ সারাদেশে। তবে বিআরটিএ-এর কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ভারত থেকে অবৈধ পন্থায় আনা মোটরসাইকেল কোনোভাবেই নিবন্ধিত করা হয় না। এ কারনে গত কয়েক বছরে অবৈধ পথে মোটরসাইকেল আসার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটক অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযান জোরদারের পর থেকে মোটর সাইকেল নিবন্ধনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বিআরটিএ’র হিসেবে প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৩০ জন। এ হিসাবে বছরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার ৮০০ জন। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে নিহত হয় ১২ হাজার। আর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার। বুয়েটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে আর ১৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে বেপরোয়া মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য। মহাসড়কে মোটরসাইকেলের সঙ্গে বাস বা অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মোটরসাইকেল আরোহীরা।
জানা গেছে, মোটরসাইকেলে সাধারণত একজন মাত্র যাত্রী বহনের কথা আইনে উল্লেখ রয়েছে। কোনো কারনে দুজন আরোহী হলে শর্ত দেয়া আছে ,সে ক্ষেত্রে দুইজনকেই মাথায় হেলমেট পড়তে হবে। রাজধানীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুইজনের হেলমেট ব্যবহার করতে দেখা যায় না। আর তিনজন ওঠা বে-আইনী হলেও এ চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়ে। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্তদের অনেকেই পুরো পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেলে চলাচল করে। দেখা যায়, মোটরসাইকেলের সামনে এক সন্তান আবার মায়ের কোলে অন্যজন বসে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। গুলিস্তানের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এক মোটরসাইকেলে পুরো পরিবার মানে তিন সন্তান বাবা ও মা চলাচল করছে এমন দৃশ্য দিনের মধ্যে কয়েকশ’বার চোখে পড়ে। তিনি বলেন, কেবলমাত্র আইন না মানার জন্যই নয়, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণেও বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। এভাবে দুই চাকার এ যানবাহনে পুরো পরিবার সওয়ার হয়ে চলাচল করলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি। পুরো পরিবারকে নিয়ে এমন আনন্দযাত্রা নিমিষেই শোকযাত্রায় পরিণত হতে পারে।
ট্রাফিক পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বেশকিছু রাস্তায় মোটর বাইক রেস হয়। এর মধ্যে হাতিরঝিল, আফতাবনগর, এয়ারপোর্ট রোড, ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোড, বেইলি রোডসহ বেশকিছু রাস্তাায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আইন অমান্য করেই ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করে। এতে ফুটপাতনির্ভর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়, ঘটে দুর্ঘটনা। ভুক্তভোগিদের মতে, যানজটে সব যানবাহন আটকে থাকলে থেমে থাকে না মোটরসাইকেল। ফুটপাত দিলে ছুটে চলে আরোহীরা। অথচ ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচল করতে না দিতে মহানগর পুলিশকে ২০১২ সালের ৫ মার্চ নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই প্রতিনিয়ত ফুটপাত দিয়ে চলছে মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, মহাসড়কের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন মোটরসাইকেল। দুই চাকার এ বাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়লে চালক বা আরোহীর অনেক সময় উভয়েরই মারাত্মক অঙ্গহানির ঘটনা ঘটতে পারে। কাজেই মোটরসাইকেল চালনোর সময় সবার আগে আরোহীকে সচেতন হতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, মোটরসাইকেলের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সজনিত নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করা প্রয়োজন। তাদেরকে এ ধরণের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে জরিমানা করা, লাইসেন্স বাতিল করাসহ কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।