হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
একটি দেশের অন্যতম সুরক্ষা এবং উন্নতির মাপকাঠি হলো খাদ্য নিরাপত্তা। খাদ্য নিরাপত্তা মানে, সকল নাগরিকের দুবেলা দুমুঠো খাবার সুলভে পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি খুব একটা সামনে আসেনি। সরকারের তরফ থেকে অনবরত বলা হয়েছে, দেশে খাদ্য সঙ্কট নেই। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ নিয়ে সরকারের মধ্যে বেশ উচ্ছ¡াস এবং ফুরফুরে মেজাজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কথা সত্যি, বিগত বছরগুলোতে দেশের কৃষক সমাজ ব্যাপক ফসল উৎপাদন করেছে। প্রকৃতিও তাদের সহায় ছিল। প্রতি বছরই ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকদের আহাজারির দৃশ্য আমরা দেখেছি। রাস্তায় ফসল ফেলে প্রতিবাদের দৃশ্যও দেখা গেছে। এ চিত্র প্রায় নিয়মিতই হয়ে উঠেছিল। কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পেল কি পেল না, এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো বক্তব্য ছিল না। সরকারের নীরবতা দেখে মনে হয়েছে, সে যেন মনে মনে খুশি। দেশ ফসলে ভরপুর, এটাতো খুশি হওয়ারই কথা। ভাবটা এমন ছিল যেন, কৃষক এত ফসল ফলিয়ে অপরাধ করে ফেলেছে। সরকার এত ফসল কোথায় রাখবে! সব গুদাম তো পরিপূর্ণ! একটু কম উৎপাদন করলে কী হতো! সরকারের এমন আচরণে কৃষকদের হতাশা ও দীর্ঘশ্বাস কেবল বাড়িয়েছে। এতে উত্তরাঞ্চলের অনেক কৃষককে ধান উৎপাদন থেকে অন্য লাভজনক ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হতে দেখা গেছে। এর কারণ হচ্ছে, যে ফসলের উৎপাদন খরচ উঠাতেই কৃষককে বেগ পেতে হয়, সে ফসল উৎপাদনে তাদের আগ্রহ কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে বিগত কয়েক মাসে দেশের খাদ্য উৎপাদনের চিত্রে আমূল পরিবর্তণ এসেছে। খাদ্য সঙ্কটের চিত্র দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে হাওর এলাকায় অকাল বন্যায় লাখ লাখ একরের বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। বলা হয়, দেশের চালের প্রায় ১৭ শতাংশ এ হাওর অঞ্চল যোগান দেয়। বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় এ ফসলের প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। দেশের ধান-চাল উৎপাদনের অন্যতম প্রধান দুইটি অঞ্চল যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন খাদ্য পরিস্থিতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিরূপ প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এর প্রভাবও বাজারে পড়েছে। চালের দাম গত এপ্রিলে এক লাফে কেজি প্রতি গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যায়। এ দাম এখনও কমেনি। বরং বেড়ে চলেছে। সরকার চালের বাজার সামাল দেয়ার জন্য বিদেশ থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করছে। বেসরকারিভাবে চাল আমদানির শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনলেও চালের বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।
দুই.
খাদ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, চাল নিয়ে একটি মহল চালবাজি করছে। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, দেশে খাদ্য সঙ্কট নেই। কাজেই চালের দাম বৃদ্ধিরও কোনো কারণ থাকতে পারে না। খাদ্যমন্ত্রী যতভাবেই বলুন না কেন, দেশে খাদ্য সঙ্কট নেই, এখন তা আর কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সঙ্কট যদি না-ই থাকতো, তবে লাখ লাখ টন চাল কেন আমদানি করতে হচ্ছে? দেশের গুদামে কেন পর্যাপ্ত চাল নেই? দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এ কথা কি এখন বলা যায়? এ কথা যে ফাঁকা বুলি, তা কি অস্বীকার করার উপায় আছে? সাধারণত দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে যে কোনো আপদকালীন সময়ে তা সামাল দেয়া সম্ভব। আমদানির প্রয়োজন পড়ে না। মজুদকৃত চাল দিয়ে পরবর্তী ফসল উঠা পর্যন্ত নির্বিঘেœ চালিয়ে নেয়া যায়। দেশের মানুষ দেখছে, সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত চালের মজুদ নেই। এ মজুদ বিপদসীমা ৩ লাখ টনের নিচে নেমে গেছে। বিদেশ থেকে চাল আমদানি করে এ ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, চালের দাম হু হু করে বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে গত সপ্তাহে একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খেটে খাওয়া মানুষ অত্যন্ত বিপাকে পড়েছে। চালের এক দোকান থেকে আরেক দোকান ঘুরেও সামর্থ্য অনুযায়ী চাল কিনতে পারছে না। তাদের বক্তব্য, চাল কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভাত খাব কী দিয়ে! শাক-সবজির দামও সাধ্যের বাইরে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সাধারণ মানুষ কতটা কষ্টে আছে। দেশে খাদ্য সঙ্কট কতটা তীব্র হয়ে উঠেছে, তা সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, গত তিন মাসে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই সময়ে দেশে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান- এই তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। খাবার পাওয়ার সুযোগ কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে এ কথাও বলা হয়েছে, গত এক মাসে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, দামও কমেছে। বিশেষ করে চাল-গম বা দানাদার খাবারের দাম কমতির দিকে। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের আটটি দেশের বাজারে প্রধান খাদ্য চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশে হঠাৎ কেন, এমন করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, তা বোঝা মুশকিল। কারণ খাদ্যে যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ তা বোঝাতে সরকার একবার শ্রীলঙ্কায় চালও রপ্তানি করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশকেই লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। অবশ্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দাবী করাকালীনও যে চাল আমদানি করা হয়নি, তা নয়। বেসরকারিভাবে প্রতিনিয়তই শুল্ক দিয়ে আমদানি কার্যক্রম চলেছে। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, খাদ্য আমদানির মধ্যে, স্বয়ংসম্পূর্ণতা দাবীর বিষয়টি বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছু ছিল না। আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকার তার উন্নয়ন দেখানোর জন্য বরাবরই বাগাড়ম্বরতার আশ্রয় নিয়েছে। মাথাপিছু আয় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক থাকলেও বছরের পর বছর তা বাড়িয়ে দেখিয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি যা হয়নি, তার চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে। সরকারের সুবিধা হচ্ছে, এসব হিসাব বেশ জটিল এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজবোধ্য নয়। হাইপোথেটিক্যাল এ হিসাবের প্রতি তাদের খুব একটা আগ্রহও নেই। সাধারণ মানুষকে এসব শুনে যেতে হয়। সরকারের উপরতো কথা বলা যায় না। তবে সরকারের অতি প্রচারের বিষয়টি ধরা পড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবীর ক্ষেত্রে। কারণ চালের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়া, চাল আমদানি করা- এসব বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি সাধারণ মানুষ হচ্ছে। তাদের উপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে। এখন সরকারকে এ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বেশ জোর দিয়ে বলতে হচ্ছে, খাদ্য সঙ্কট হবে না। সরকার এ কথা বলতেই পারে এবং তাকে বলতে হবে। কারণ তার কাজ হচ্ছে সঙ্কট মেটানো। বর্তমান খাদ্য সঙ্কটকালে আমদানি করেই মেটাতে হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং রপ্তানিকারক একটি দেশকে যদি আমদানি করে সঙ্কট মেটাতে হয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, দেশটির খাদ্য পরিস্থিতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা কী করুণ অবস্থায় রয়েছে।
তিন.
দেশের পত্র-পত্রিকাসহ সব মিডিয়া জুড়ে এখন কেবল রোহিঙ্গা সমস্যার খবর। মিডিয়াগুলোর প্রধান শিরোনামই হচ্ছে রোহিঙ্গা। নিঃসন্দেহে রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় সঙ্কট হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ না পারছে তাদের ঠেলে দিতে, না পারছে রাখতে। আবার অনুপ্রবেশকৃত এসব রোহিঙ্গা যে খুব শিঘ্রই তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে, তার নিশ্চয়তা আপাতত নেই। ফলে এদের বাসস্থান, খাদ্য সংস্থান, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সুবিধাদি বাংলাদেশকেই নিশ্চিত করতে হবে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে এবং কিছু কিছু দেশ থেকে ত্রাণ সহায়তা এসেছে, তারপরও দীর্ঘ মেয়াদে এসব রোহিঙ্গাদের সেবা বাংলাদেশকেই দিতে হবে। এবার রোহিঙ্গা সমস্যা এমন সময় ঘটেছে, যখন দেশে খাদ্য সঙ্কট চলছে। এ পরিস্থিতি যে সরকারকে আরও বিপাকে ফেলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। তার এ কথায় বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশ যখন একটি সঙ্কটজনক সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে, তখন রোহিঙ্গা সমস্যা অনেকটা খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে। তাও এক-দুই হাজার নয়, সবমিলিয়ে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে এবং প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। জাতিসংঘ বলেছে, বাংলাদেশে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিচ্ছে। বিশ্বের আর কোনো দেশে এত মানুষের আশ্রয় দেয়ার ঘটনা নেই। রোহিঙ্গারা যেহেতু এসেই পড়েছে, তাই যতদিন না তারা ফিরে যাচ্ছে বা ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে, ততদিন তারা বাংলাদেশের জনসংখ্যার উপর চাপ হয়ে থাকবে। বলা যায়, জনসংখ্যা এক লাফে দশ লাখ বেড়ে গেল। এই বিপুল মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের সংস্থান করতে গিয়ে বাংলাদেশকে দীর্ঘ মেয়াদে চাপে থাকতে হবে। কারণ যতই সময় যাবে, ইস্যুটি ধীরে ধীরে ¤্রয়িমাণ হয়ে আসবে। আলোচনাও থেমে যাবে। তখন এ বোঝা বাংলাদেশকেই বইতে হবে। বিদেশি ত্রাণ কতদিন চলবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, ষোল কোটি মানুষের খাদ্য সংস্থান করতে পারলে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরও খাদ্য সংস্থান করা যাবে। কেউ না খেয়ে থাকবে না। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এ ঘোষণা নিঃসন্দেহে মানবিক এবং তা করা উচিত। সমস্যা হচ্ছে, সরকারকে যেখানে নিজ দেশের জনগণের খাদ্য সঙ্কট নিরসন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সেখানে এই বাড়তি দশ লাখ মানুষের খাদ্য সংস্থান করবে কীভাবে। এর প্রতিক্রিয়া যে দেশের সকল মানুষের উপর পড়বে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এফএও খাদ্য নিয়ে যে সতর্কবার্তা দিয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। সরকারি চালের মজুত সময়মতো বাড়ানো হয়নি। এরপর হাওর ও বন্যায় ফসলের ক্ষতি পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য তিন বেলা নিয়মিত খাবার দিতে হবে। সেই চালের জোগান দিতে গিয়ে সরকারকে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। শুধু চালের জোগানই দিতে হবে না, দামও মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে ওএমএস চালু করেছে। সরকার আশা করছে, এ কর্মসূচির কারণে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে চালু হওয়া ওএমএস-এর চাল কেজি প্রতি ১৫ টাকা থেকে একলাফে দ্বিগুণ করে ৩০ টাকা করা হয়েছে। তাও আবার সিদ্ধ চালের পরিবর্তে আতপ চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এতে দরিদ্র মানুষ খুবই হতাশ হয়েছে। তারা সিদ্ধ চাল খেয়ে অভ্যস্ত। আতপ চালের ভাতে অভ্যস্ত নয়। ফলে চাল কিনতে এসে অনেকে ফিরে গেছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেঁচে থাকার জন্য কিনছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওএমএস-এর চাল সাধারণত খেটে খাওয়া মানুষ ও নি¤œবিত্ত পরিবারগুলো কিনে থাকে। মধ্যবিত্ত বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ পড়েছে দারুণ বিপাকে। তারা না পারছে ওএমএস-এর চাল লাইন ধরে কিনতে, না পারছে যে ধরনের চাল খেয়ে অভ্যস্ত তা কিনতে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়ে গেছে। চালসহ শাক-সবজি ও অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের অত্যন্ত টানাপড়েনের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের এ কষ্ট সরকার উপলব্ধি করছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তবে বোঝা যাচ্ছে, সরকার বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা চালিয়েও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, মিল মালিকদের সিন্ডিকেট সরকারকে বিপাকে ফেলতে চাল নিয়ে কারসাজি করছে। দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির পায়তারা করছে। এ অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তবে তা খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার। এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। যে কোনো মূল্যে এই ভয়ংকর অপকর্মের সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করা জরুরি। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে এই সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ পেল কিভাবে? এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিশ্চয়ই গাফিলতি রয়েছে। মন্ত্রণালয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টি সবসময় মাথায় রেখে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা হয়তো ঘুর্নাক্ষরেও ভাবতে পারেনি। এটা চরম অসচেতনতা ছাড়া আর কী হতে পারে!
চার.
দেশে যে খাদ্য সঙ্কট চলছে, তা সামাল দেয়া খুবই কঠিন একটি কাজ। সরকার হয়তো লাখ লাখ টন চাল আমদানি করে গুদাম ভরাতে পারবে, তবে দাম মানুষের নাগালের মধ্যে কতটা আনতে পারবে, তা বলা মুশকিল। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, চালের দাম এক লাফে ১০-১৫ টাকা বেড়ে গেলেও আমদানিকৃত চাল দিয়ে সে দাম কমাতে পারেনি। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, সরকার যদি চাল আমদানি করে পুরো বাজারে ঢেলে দেয়, তাতেও দামের খুব একটা হেরফের হবে না। অন্যদিকে এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এ প্রশ্নও সাধারণ মানুষের মনে উদয় হতে পারে, তাহলে কি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিন ফুরিয়ে গেল? দেশে উৎপাদিত চাল দিয়ে গোডাউন ভরার দিন শেষ হয়ে গেল? আমাদের কি বেশি দামে বিদেশ থেকে আমদানি করা চাল দিয়ে চলতে হবে? বলা বাহুল্য, আমাদের দেশে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভরের অন্যতম মাপকাঠি চালের মূল্য। যে সরকার চালের মূল্য জনগণের সাধ্যের মধ্যে রাখতে পারে, সে সরকার সফল বলে বিবেচিত হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায়, বেশ কয়েক বছর ধরে ধানের বাম্পার ফলনে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ নিয়ে সরকারও স্বস্তির মধ্যে ছিল। এ বছর প্রকৃতি বিরূপ হওয়ায় হঠাৎ করেই যেন সঙ্কট দেখা দেয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টি যেন মুহূর্তে উবে যায়। এর কারণ এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর উদাসীনতা এবং সমন্বয়হীনতাকে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন। সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে- এ ধরনের চিন্তা সরকারের মধ্যে ছিল না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মনে করেছিল, যেভাবে ফসলের বাম্পার ফলন হচ্ছে তা অব্যাহতই থাকবে। দুঃসময় আসতে পারে, এ চিন্তা করেনি। ফলে দুঃসময় হাজির হওয়ায় তা সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। সুসময় সবসময় থাকে না এ চিন্তা মাথায় নিয়ে আগে থেকে সচেতন ও সতর্ক হলে খাদ্যের এ সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।