বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে: নরসিংদীর বাজারে এসেছে গ্রীষ্মের সুস্বাদু সবজি সজিনা। স্থানীয় ভাষায় যাকে সাজনা এবং কোনো কোনো জায়গায় সজনে বলা হয়ে থাকে। এক সময়ের ফেলনা সবজি হিসেবে পরিচিত এই সাজনা এখন ধনিক শ্রেণীর মানুষের খাবারে পরিণত হয়েছে। সজিনা এখনও পরিপক্ব বা খাবার উপযোগী হয়নি। এরপরও লতার মতো চিকন চিকন এ সবজি বাজারে আমদানি হয়েছে। এক কেজি সজিনা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। নতুন সবজি হিসেবে বাজারে সজিনার আমদানি দেখে মানুষ আগ্রহভরে কিনতে যায়। কিন্তু দাম শুনে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়। তবে সমাজের ভাগ্যবানরা এই চিকন লতিসদৃশ সজিনাই চড়া দামে কিনে নিচ্ছে। সজিনা বা সজনেকে বলা হয় পুষ্টির ডিনামাইট। সজিনার ফুল, ফল, পাতা, ছাল খুবই উপাদেয় খাবার। নরসিংদীসহ দেশের অনেক এলাকার মানুষ সজিনাকে ওষুধি সবজি হিসেবে জানে। তারা মনে করে সজিনা একটি মহৌষধ। ঠাÐা লাগলে সজিনার ছাল বেটে ভর্তা বানিয়ে গরম ভাতের সাথে রোগীকে খেতে দেয়া হয়। প্রচÐ গরমের সময় ডালবাটা ও সজিনার পাতা একত্রে মিশিয়ে বড়া বা কাটলেট তৈরি করে পানতা ভাতের সাথে খাওয়া হয়। সজিনার ফুল বেটে ভর্তা বানিয়েও খাওয়া যায়। গা- গেরামে বসন্ত রোগের প্রাদুুর্ভাব দেখা দিলে সকলেই সজিনা ও দেশী আলুর নিরামিষ ঝোল রেধে খায়। দেশীয় টোটকা চিকিৎসকদের মতে, সজিনার ঝোল যেমন প্রতিষেধক তেমনি নিরাময়কারী ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভোজনবিলাসী লোকজনের মতে, সজিনার সাথে চিংড়ি দিয়ে ঝোল তরকারি খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। শিংমাছ সজিনা ও দেশীয় আলু মিলিয়ে ঝোল রান্না করলে কৃষকের হাঁড়ির ভাতে টান পড়ে যায়। অনেক পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে মহিলারা সজিনা, গুঁড়া আলু, উচ্ছে একত্র করে শুঁটকি দিয়ে রেধে খেতে খুবই পছন্দ করে।
কিন্তু এত স্বাদ ও ওষুধি গুণসমৃদ্ধ সবজি হওয়া সত্তে¡ও কিন্তু দেশের অনেক অঞ্চলের মানুষ সজিনা খুব একটা খায় না। উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তার পাশে, গাছে গাছে সজিনা শুকিয়ে থাকতে দেখা যেত। আশির দশকেও বাংলাদেশ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তালিকায় সবজি সজিনার নাম ছিল না। সজিনা ছিল গৌণ বা ফেলনা সবজি। কিন্তু গত আড়াই দশকে সজিনার কদর বেড়েছে বহু গুণ। সেই সাথে দাম বেড়েছে কয়েক শ’ গুণ। সজিনা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে লম্বা ত্রিকোণাকৃতির। আর অপরটি হচ্ছে লম্বা গোলাকৃতির। ত্রিকোণাকৃতির সজিনাকে নরসিংদী অঞ্চলের মানুষ বাজনা বলে থাকে। আর গোলাকৃতিরটিকে বলা হয় সজিনা বা সাজনা। প্রতি বছর বসন্তের শেষ দিকে গাছে গাছে সজিনার ফুলে ভরে যায়। গাছের ডালগুলোতে এত বেশি ফুল ধরে যে, ফুলের ভারে গাছের ডাল পর্যন্ত ভেঙে যায়। এরপর সজিনা লতা আকারে ঝুলতে শুরু করলে কৃষকরা ডালে ডালে বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিয়ে রাখে। গ্রীষ্মকালে ঝড়-তুফান হলে সজিনার ডাল ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। তখন বাজারে সজিনার ব্যাপক আমদানি হয়। দামও কমে যায়। আবার কোনো বছর খরা হলে ফুল, ফল দুটোই কমে যায়। সে বছর দামও থাকে খুব চড়া। সজিনার গাছ খুবই নরম কাÐের বিধায় চাষিরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সজিনার চাষ করে না। বাড়ির আনাচে-কানাচে ১-২টি গাছ লাগালে কৃষকেরও খাওয়া চলে, আত্মীয়দেরও দেয়া যায় এবং বাকিগুলো বাজারে বিক্রি করা যায়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সজিনাকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করতে হলে এর ওপর আরো ব্যাপক গবেষণা চালাতে হবে। সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করলে ১২ মাসই সজিনা উৎপাদন সম্ভব হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।