Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়াতে পারে

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দেড় লাখ : দু’সপ্তাহে নোম্যান্স ল্যান্ডে জন্ম ৪শ’ শিশুর : আশ্রয় কেন্দ্র, খাদ্য ও পানি সঙ্কটে মারা যেতে পারে হাজার হাজার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান থেকে পালাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। তাদের অধিকাংশই শিশু। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-র আশঙ্কা চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গত ২৫ আগস্টের পর শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। দু’দেশের সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। সেখানে গত ১৫ দিনে অন্তত ৪০০ শিশু জন্ম নিয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো বলছে, পরিবার ছাড়া এদেশে আসা অনেক শিশু হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে একটি ত্রাণ সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, বাংলাদেশে ঢুকে পড়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র, খাদ্য ও পানির সঙ্কটে মারা যেতে পারে।
ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪ লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু। এই হিসেবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। আর এসব শিশুর মধ্যে পরিবারহীন শিশুর সংখ্যা শুক্রবার পর্যন্ত ছিল হাজার ২৬৭। দ্রুত রোহিঙ্গা এবং পরিবারহীন শিশুদের সংখ্যা বাড়ার কারণে মানবপাচার, যৌন নিপীড়ন, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়ছে ক্যাম্পগুলোতে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, শিশুদের খাবার ও পুষ্টি, মৌলিক চিকিৎসা, মানসিক পরামর্শ প্রয়োজন। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার শিশুদের শিশুবান্ধব স্থানের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে আসা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর জন্য আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ধারণা, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দুই তৃতীয়াংশ নারী ও মেয়ে। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ গর্ভবতী ও সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন ধাত্রীকে ক্যাম্পগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ কিশোরী এবং ২১ শতাংশ গর্ভবতী ও প্রসূতি। শিশুদের মধ্যে ৬-১৮ বছর বয়সী শিশুর হার ২৩ শতাংশ, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর হার ২১শতাংশ এবং ১ বছরের কম বয়সের শিশুর হার ৭ শতাংশ।
গত রোববার ইউনিসেফ জানিয়েছে, সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেড় লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। হাম, রুবেলা ও পোলিও রোগের টিকা দেওয়া হবে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের। মিয়ানমার সীমান্তে ৬৮টি রোহিঙ্গা শিবিরে এসব টিকা দেওয়া হবে। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের প্রধান মার্ক পিয়ার্স বলেছেন, যদি এভাবে শরণার্থীরা বাংলাদেশে আসতে থাকে তাহলে বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ লাখ শিশু এবং রোহিঙ্গার সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে ১০ লাখ।
দুই সপ্তাহে নোম্যান্স ল্যান্ডে ৪০০ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম
মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর নৃশংস অভিযান থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নোম্যান্স ল্যান্ড আটকা পড়েছে আরও অনেক রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারীও। সহিংসতা শুরুর গত ১৫ দিনে এই নোম্যান্স ল্যান্ডেই পৃথিবীর আলো দেখেছে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা শিশু। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা জীবনের ভয়ে নোম্যান্স ল্যান্ডের আশপাশে লুকিয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছে গর্ভবতী নারীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানেই সন্তান প্রসব করতে হচ্ছে তাদের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের দাবি, ১৫ দিনে জন্ম নিয়েছে ৪০০ রোহিঙ্গা শিশু।
এমনই এক রোহিঙ্গা নারী হামিদা। গর্ভবতী অবস্থায় জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা ছিল তার। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ হামিদার গর্ভে থাকা সেই অনাগতের ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর দিয়েছে। জানিয়েছে, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে, পথের মধ্যেই দেশহীন-নাগরিকত্বহীন, আশা-স্বপ্ন-ভবিষ্যতহীন আরেক মানব শিশুর জন্ম হয়েছে।
শিশুটির জন্মের সময় সেখানে ছিলে কোনো ডাক্তার বা হাসপাতাল। আদিম প্রক্রিয়ায় সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে হামিদা। ব্যথার কথা বলে বোঝানো যাবে না। কোনও ডাক্তার নেই, কোনও ওষুধ নেই। তীব্র ব্যথা...’ এভাবেই পরিস্থিতির বর্ণনা হাজির করে হামিদা।
তার মতো অনেক অসহায় নারীই বিপজ্জনক অবস্থায় তাদের সন্তানদের আলোর মুখ দেখিয়েছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সুরাইয়া সুলতানা নামে আরেক নারীর কথা। বিজিবি সদস্যদের সহায়তায় একটি নৌকায় সে কন্যা সন্তানের মা হয়। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক গার্ডিয়ানকে জানান, সুরাইয়ার মতো অনেককেই তারা সহায়তা করেছেন, যাদের অবস্থা ছিল খুবই সঙ্কটাপন্ন। মমিনুল আরও বলেন, আমরা অসহায় মানুষদের সহায়তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু সবকিছু এখন আমাদের ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক জানিয়েছেন, সীমান্তের দুই পাশেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছে মা ও শিশুরা। তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে আইএস : মালয়েশিয়া
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মালয়েশিয়ার সদস্যরা। মালয়েশিয়া পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। মালয়েশিয়া পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান আইয়ূব খান মাইদিন পিটাসে জানান, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, আইএস’র মালয়েশিয়ান সদস্যরা রাখাইন রাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। যদি তাদের আমরা চিহ্নিত করতে পারি, আমরা অবশ্যই গ্রেফতার করব (তাদের)।’
তিনি এর আগে জানিয়েছিলেন, নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্কটের মানবিক জায়গা ব্যবহার করছে আইএস। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তান্ডবের ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে শুরু করে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তারা সহানুভূতি তৈরির চেষ্টা করছে।
আইয়ূব খান মাইদিন পিটাসে’কে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা বার্নামা জানিয়েছে, ‘সিরিয়া ও সংঘাতপূর্ণ দক্ষিণ ফিলিপাইনের তুলনায় মালয়েশিয়ার কাছাকাছি রয়েছে মিয়ানমার। ‘জিহাদের’ জন্য রাখাইন তাদের সর্বশেষ গন্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও জানান যে, গত সপ্তাহে মালাক্কা থেকে ৩৮ বছর বয়সী একজন জুতা বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইএস এর পতাকা এবং তাদের সংগঠনের রাখাইন ও ফিলিপাইনের গ্রুপে যোগদানের লিফলেটসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা ও দ্য ইকোনমিকস টাইমস।



 

Show all comments
  • Md Bazlu ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৯:৩০ এএম says : 0
    These innocent kid can be adapted by rich family. Our gov can advertise to world over to accept these innocent kids . But it should be done by guaranteed way. It should lead to child tracking. Some draft resolution to be drawn to protection these kids. Adpating family must deposit some money to gov to secure these innocent kids future if any wrong doing . You may have better idea and contribute more Regards to everybody
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ