Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের দুঃখ বাড়ালো বৃষ্টি

দীপন বিশ্বাস, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ায় শিশুদের অবস্থা চরম
থেমে থেমে টিপটিপ বৃষ্টি। কখনো বা ভারী আবার কখনো বা হাল্কা। গত দু’দিন ধরে উখিয়া ও টেকনাফে এমনি অবস্থা। কখনো বা ভোর রাতে আবার কখনো দিনের শুরুতে অথবা শেষে।
গতকাল সোমবার ও রোববার সকাল থেকেই বেগ বেড়েছিল বৃষ্টির। বিশেষ করে উখিয়া উপজেলায় বেশ ভারী বৃষ্টিই হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গাদের অনেকেই তাদের জন্য তৈরি করা উখিয়া ও টেকনাফের নতুন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে না গিয়ে বসেছিল সড়কের দুই পাশে। উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের গতকাল সড়কে পাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বৃষ্টির মধ্যেই ঝুপড়ি বস্তি ভেঙে পাহাড়ের ঢালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেতে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে কাদাপানিতে পিচ্ছিল পথে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা চলতে-ফিরতে সমস্যায় পড়েছেন।
মিয়ানমারের বুছিদং এলাকা থেকে মোহাম্মদ ইসলাম আটজন সদস্য নিয়ে গতকাল সকালে উখিয়ার বালুখালীতে আসেন। সকালে যখন এই পরিবারটির দেখা মেলে, তখন তাদের কাছে কোনো ছাতা ছিল না। বৃষ্টিতে ভিজছিল।
রোহিঙ্গাদের এসব নতুন আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে উখিয়ার থাইংখালি, বাগগুনা ও টেকনাফের পুটিবুনিয়ায়। উখিয়ার কুতুপালং এবং টেকনাফের লেদা ও নয়াপাড়ার পুরোনো আশ্রয়কেন্দ্রেও উঠেছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়াও এই দুই উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাঝারি ও ছোট আকারের অনেকে রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে উঠেছে। এসব নতুন বস্তিতে এখনো শক্তপোক্ত অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। অসমতল মাটির ওপরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার ওপর ত্রিপল বা লবণ খেতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সিট বিছিয়ে ছাউনি করা হয়েছে। এই ছাউনি হালকা ছিটেফোঁটা বৃষ্টির পানি আটকাতে পারলেও একটু ভারী বর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপযোগী নয়। সে কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অনেক ঝুপড়ি ঘরেই পানি প্রবেশ করেছে।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসন সঙ্কটের পাশাপাশি খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি, শৌচাগার ও চিকিৎসার সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে স্যানেটিশন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই অসহনীয়।
সরেজমিনে উখিয়া ও টেকনাফের নতুন-পুরোনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো কেন্দ্রে আগে যে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা ছিল, নতুন আসা লোকের চাপে তা নাজুক হয়ে পড়েছে। আর নতুন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাই করা যায়নি। একই অবস্থা শৌচাগারের ক্ষেত্রেও।
বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিশেষ করে শিশুরা ব্যাপকভাবে ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে বা ভেজা মাটির ওপর শুয়ে থেকে শিশু ও বয়স্ক অনেকেই সর্দি-জ্বরে রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কিছু কিছু মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। তবে লাখ লাখ মানুষের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়।
বাড়ছে রোগবালাই
দিন যতই যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের কষ্টের ভার প্রকট আকার ধারণ করছে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটানো বেশিরভাগ রোহিঙ্গার অবস্থায় নাজুক। তাদের সঙ্গে থাকা শিশুদের অবস্থা আরও ব্যাপক হুমকি হয়ে পড়ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা গুলো পর্যাপ্ত ঔষুধ সরবরাহ দিতে না পারায় করুণ হাল হয়েছে রোহিঙ্গাদের।
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের জন্য বিশেষ ইপিআই কর্মসূচি চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল থেকে উখিয়া-টেকনাফ-নাইক্ষংছড়ি উপজেলা রেজিষ্ট্রার ও আনরেজিষ্ট্রার এবং রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য এই কর্মসূচি চালু করেছে। উখিয়া উপজেলার সবকয়টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ২৪টি ইপিআই বিশেষ সেন্টারে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি। রোহিঙ্গা শিশুদের হাম, পোলিও, রুবেলা ও ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে।
রোহিঙ্গা মায়েরা না খেয়ে দীর্ঘপথ হেঁটে বাংলাদেশে আসার কারণে শিশুকে বুকের দুধ দিতে না পারায় শিশুদের অবস্থা হাড্ডিসারে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার শিশুর শরীর জ্বরে পুড়লেও কোলে নিয়ে বসে থাকা ছাড়া মায়েদের কিছু করা নেই। তার উপর সবখানে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় শিশুদের অবস্থা আরও চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকলেও বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জন্য এ সেবা নিতান্তই অপ্রতুল বলে জানা গেছে।
গতকাল সকাল থেকে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও হাকিমপাড়া সহ কয়েকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ। এদের মধ্যে অনেক শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশুর ঝুঁকিতে থাকার কথা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের এ সংস্থার শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান জ্যঁ লিবি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ইউনিসেফের সহায়তার জরুরী সামগ্রী কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ক্যাম্পগুলোয় সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।
বালুখালী হাতির ডেরা ও তাজনিরমার খোলা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান পার্শ্ববর্তী গ্রামের বসতবাড়িতে টিউবয়েল থাকলেও রোহিঙ্গাদের চাহিদা বেশি থাকার কারণে ঠিকমত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গা নারীরা খাল ও ছরার পানি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারছেন। এর ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে তাদের।



 

Show all comments
  • MD. HASIBUR RAHMAN ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৯:২৭ এএম says : 0
    kj
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ