Inqilab Logo

বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চাল গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস

ওএমএস’র সুযোগ থেকে বঞ্চিত খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চল

আবু হেনা মুক্তি : | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাত্র ২০টি পয়েন্টে দ্বিগুণ দামে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু : সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে ১১-১২ টাকা বৃদ্ধি
সিডর আইলা সহ নানা দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের জনপদে চাল গ্যাস সহ নিত্যাপণ্যের লাগামহীন মূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনাঞ্চলের চালের দাম কেজিতে ১১-১২টাকা বৃদ্ধি, এ যেন মগের মুল্লুক। ৫২ টাকার চাল এখন ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের চালবাজিতে যেমন দিশেহারা আমজনতা তেমনি এলপি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে হাপিয়ে উঠেছে সর্বস্তরের মানুষ। সেই সাথে ২০ টাকার সব্জি এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। পেয়াজ ডালের দাম বেড়েছে গত বছরের তুলনায় শতকরা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গতকাল থেকে খুলনা মহানগরীর ২০টি পয়েন্টে ২০জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল বিক্রি করা হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। এছাড়া দ্বিগুন দামে ক্রেতাদের এই চাল কিনতে হচ্ছে। গত বছর ওএমএস’র চালের মূল্য ছিল ১৫ টাকা কেজি। এবার ৩০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। একজন সাধারণ ক্রেতা ৫ কেজি করে চাল নিতে পারবেন। খুলনা জেলায় ৭২ জন ডিলার খোলা বাজারে চাল বিক্রি করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে গতকাল সোমবার থেকে নগরীর ২০টি স্থানে ২০জন ডিলার চাল বিক্রি শুরু করেন। এক একজন ডিলার এক টন চাল বিক্রি করতে পারবেন। নাগরিক নেতা শেখ আব্দুল হালিম ইনকিলাবকে বলেন, সিডর আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সহ উপকুলীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের হত দরিদ্র বা সাধারণ মানুষেরা প্রকৃতভাবে ওএমএস’র সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও খুলনায় এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনা নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে বলা হয়, একদিকে উৎপাদনকারী কৃষকরা ধান-চালের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে লুটেরা মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ক্রেতারা নিষ্পেষিত হচ্ছে। সব সময়েই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে থাকে। এজন্য প্রয়োজন নিবিড় মনিটরিং ব্যবস্থা ও কঠোর আইন প্রয়োগ। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে দায়িত্বহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে খুলনায় একের পর এক এলপি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। কি কারণে এ অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি খুলনাবাসীর তা বোধগম্য নয়। গত দু’মাসে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে ৪ বার। বিবৃতিদাতার হলেন-খুলনা নাগরিক সমাজের পক্ষে সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড. আ ফ ম মহসীন এবং সদস্য সচিব এ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদার।
সূত্রমতে, এক অস্থির অবস্থা চলছে চালের বাজারে। কম-বেশি প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে চালের দাম। আজ যে দামে চাল কেনা হলো, কাল সেই দামে তা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। কিছু না কিছু বাড়ছেই। এভাবে ক্রমাগত দাম বাড়ার সঠিক কারণ কেউ বলছেন না। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন পাইকাররা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন, পাইকাররা বলছেন মিল মালিক ও মোকামের কথা। তবে ভারতের চাল রপ্তানি না করার খবর দাম বাড়ার একটি কারণ বলে জানান ব্যবসায়ীরা, যদিও সরকার বলছে সেটি গুজব। দাম বাড়ার পেছনে সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত দেখছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বড় ব্যবসায়ীরা বস্তায় ৫০০-৬০০ টাকা বাড়ানোর সাহস দেখাবে না। তাদের দৌঁড় বড়জোর ৫০-৬০ টাকা।
এদিকে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোর দায়ে দু’একদিনের মধ্যেই খুলনাঞ্চলে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হচ্ছে। এছাড়া আমদানিকারক, পাইকার এবং খুচরা ব্যবসায়ী পর্যায়ে চাল বেচাকেনার খোঁজখবর নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আমদানি শুল্ক ২৮ থেকে নামিয়ে ২ শতাংশ করায় বেসরকারী পর্যায়ে ভারত থেকে চালের আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। এছাড়া সরকারী পর্যায়ে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চাল কেনা হচ্ছে। তথাপি চালের বাজার লাগামহীন। আর চালের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্য। বেগুন আলু করলা বিভিন্ন শাক লাউ পেঁপে চিচিংগা বরবটি ঝিঙা সহ প্রতিটি শাক সব্জির মূল্য একমাসের ব্যবধানে দ্বিগুন। গত বছরের তুলনায় পিয়াজের মূল্য এখন তিনগুন। বেড়েছে ডালের দাম। আর এলপি গ্যাসের মূল্য বাড়ছে দফায় দফায়। খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার উপকুলীয়াঞ্চলে শ্রমজীবী ও প্রন্তিক চাষিরা চাল ডাল সহ নিত্যাপণ্যের অগ্নিমূল্যে দিশেহারা। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও’র কাছে ঋনের বোঝা বেড়েই চলেছে। জীবন বাঁচাতে উপকুলীয়াঞ্চলের ছিন্নমুল মানুষগুলো এনজিও’র ঋনের জালে আটকে যাচ্ছে। শহর ও উপজেলা সদর গুলোতে কিম্বা ইউনিয়নের প্রাণ কেন্দ্রে ওএমএস চালু হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার কোন প্রভাব পড়ছে না। তারপরেও সফলভাবে এবং সঠিক মনিটরিং এর মাধ্যমে ওএমএস চালু থাকলে অনেক সাধারন মানুষ উপকার পাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ