Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই

ত্রাণ বিতরণে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ এবং দীপন বিশ্বাস উখিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চিকিৎসার অভাবে বাড়ছেই শিশু মৃত্যুর হার
মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি, চলমান প্রচন্ড তাপদাহে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে জটিল সব রোগবালাই। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। গরমে ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, শিশুর নিউমোনিয়া, জন্ডিস ও আমাশয় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে ক্যাম্পে। এ কারণে গত এক সপ্তাহে অনন্ত: ১৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা ক্যাম্প খোলা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা রোগীদের ভিড়। অধিকাংশ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোহিঙ্গা মহিলা চিকিৎসা ক্যাম্প না চেনায় চিকিৎসা নিতে পাচ্ছেন না। তবে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি শিশুরা। চিকিৎসা ক্যাম্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগীর চাপ বেশি। তবে বৃষ্টিতে ভেজা, তাপদাহের তীব্রতা চলতে থাকলে এ সংকট আরো বাড়তে পারে।
জানা গেছে, প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ৫০০০ হাজারের অধিক রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও মহিলা। এতো রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা ক্যাম্পের ডাক্তার ও নার্সগণ।
টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া, লেদা, হোয়াইক্যং পুটিবিলা, উখিয়ার থাইংখালী ও বালুখালী, কুতুপালং এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে। পাহাড়ের ঢালুতে ছোট ছোট পলিথিন মোড়ানো ঘরে আক্রান্ত রোহিঙ্গা রোগীরা চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছেন।
এদিকে ক্যাম্পগুলোতে খাবারের পানি ও গোসলের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এবং কোন টয়লেট না থাকায় যত্রতত্র পায়খানা ও ময়না আর্বজনা যুক্ত পাহাড়ের চরার পানি দূর্ষিত হওয়ার ফলে ক্যাম্পের সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মশা। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, মশা ডেগু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালিরিয়াসহ মারাত্মক রোগের জীবাণু বহন করে। দ্রæত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরো সংকট দেখা দিতে পারে।
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণে চলছে চরম বিশৃংঙ্খলা
হ-জ-ব-র-ল এর মধ্য দিয়ে চলছে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ। যে যেভাবেই পারছে, সেভাবেই দিচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। সরকার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করার ঘোষণা দিলেও মূলত বেশির ভাগই ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চলছে এই ত্রাণ কার্যক্রম। কেউ বা দিচ্ছেন গাড়ি থেকে ত্রাণ সামগ্রী নামিয়ে আবার কেউ বা চলন্ত গাড়ী থেকে ছুড়ে মেড়ে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলা। এসব ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। রেহাই পাচ্ছেন না বৃদ্ধরাও।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে দেখা গেছে, ব্যক্তি উদ্যোগে পর্যাপ্ত ত্রাণ না থাকায় চলন্ত গাড়ি থেকে কাপড়, ওষুধ ও খুচরা টাকার বান্ডিল ছুড়েও দেওয়া হচ্ছে। আর এসব ছুড়ে মারা ত্রাণ নিতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঝগড়া- লেগেই আছে। আবার অনেকেই ত্রাণ নিতে ছুটা-ছুটি করতে গিয়ে আহত হয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ।
এদিকে, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গতকাল স্থান নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলার কারণেই রোহিঙ্গা শিবিরে ১২টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্থান নির্ধারণের পর বিশৃঙ্খলা কমে যাবে। নির্ধারণ করা স্পটেগুলোতে পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘যারা এলোমেলোভাবে ত্রাণ বিতরণ করছেন, তারা বাইরে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। একটু কষ্ট করে ভেতরে গিয়ে বিতরণ করলে এ ধরনের পরিস্থিতি হতো না।’
উখিয়া সদর রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিত ত্রাণ দেওয়ার কারণে গাড়ি থেকে ছুড়ে মারায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাঠি হচ্ছে। ত্রাণ নিতে দৌঁড়া-দৌঁড়িতে আহত হচ্ছে অনেকেই। ছুড়ে মারা এসব ত্রাণ নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা পাচ্ছে না। অনেক সময় দেখা যায় বৃদ্ধার হাতে পড়ছে বাচ্চার টি শার্ট, কিশোরের হাতে শাড়ি। এরই মধ্যে অনেকে আহতও হয়েছেন।’ তিনি বলেন এ বিষয়ে প্রশাসনের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ