পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা বিমান বন্দর থেকে একজন যাত্রী আসবেন কমলাপুরে। যানজট এড়াতে গত কয়েকদিন ধরেই ট্রেনেই আসা-যাওয়া করেন তিনি। গতকাল রোববার দুপুরেও বিমান বন্দর স্টেশন থেকে টিকিট কেটে ট্রেনের জন্য াপেক্ষা করছিলেন। স্টেশন মাস্টারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন আন্তঃনগর ট্রেন আসতে আরও আধা ঘণ্টা সময় লাগবে।
তার আগে একটি ডেমু ট্রেন আসছে। কিছুক্ষণ পর আসলো সেই ডেমু ট্রেন। প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর ট্রেনটি বিমান বন্দর ছাড়লো। স্টেশন অতিক্রম করার পর আউটারে সিগনালের আগে থেমে গেল। কোন কারন ছাড়াই প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে অপেক্ষা করলো ৩৫ মিনিট। এরপর বনানী স্টেশনে আবার ১৫ মিনিট বিরতি দিয়ে তেজগাঁও স্টেশনে এসে দাঁড়ানোর পর ছাড়ার কোনো আলামত নেই। ওই যাত্রী খুবই বিরক্ত হলেন। প্রায় ৫৫ মিনিট অপেক্ষার পর বিরক্ত হয়ে তেজগাঁও স্টেশনেই নেমে গেলেন তিনি। ট্রেন থেকে নেমে তিনি ইঞ্জিনের দিকে গেলেন। দেখলেন দুজন চালক (এলএম ও এএলএম) দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। তাদের কাছে জানতে চাইলেন ট্রেনটি কখন ছাড়বে।
তারা হতাশ হওয়ার মতো তথ্য দিয়ে বললেন, আরও দুটি ট্রেন ঢাকার দিকে যাবে, তারপর ছাড়তে এক ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টাও লাগতে পারে। হতাশ হয়ে ওই যাত্রী ডেমু ট্রেন থেকে নেমে গেলেন। এতো গেল একজন ভুক্তভোগি যাত্রীর কথা। প্রতিদিনই ডেমু ট্রেনে উঠে হাজার হাজার যাত্রী বিরক্ত হচ্ছেন, বিরক্ত হচ্ছেন। একবার কেউ ডেমুতে উঠলে আর উঠতে চান না। এক বছর আগেও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ডেমু ট্রেনের যাত্রী খোঁজা হয়েছিল। যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এবং রেলকে আধুনিকায়ন করতে কেনা হয়েছিল ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন। সাত বছরে ডেমুর যাত্রীসেবার মান বাড়েনি, বরং এই ডেমু ট্রেনের কারনে রেলের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। যাত্রীদের কাছে এখন চরম ভোগান্তির নাম ডেমু ট্রেন। এটি পরিচালনা করতে গিয়ে রেলের লোকসানের বোঝা বেড়েইে চলেছে। ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ডেমু ট্রেন নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ অনেকটাই বিব্রত। অভিযোগ রয়েছে, চীন থেকে কেনার সময়ই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ভর করেছিল ডেমুতে। যে কারণে আমাদানী করার কয়েক মাসের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায় ১০ সেট ট্রেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সে সময় ডেমু ট্রেন কেনার ৬৫৪ কোটি টাকায় ১০টি ইঞ্জিন ও উন্নতমানের ১শ’টি কোচ কেনা যেতো। তাতে রেলের কোচ ও ইঞ্জিন সঙ্কট অনেকটাই কমে যেতো।
২০১০ সালে চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০ জোড়া ডেমু ট্রেন ক্রয় করে। এতে সর্বমোট খরচ হয় ৬৫৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এই ট্রেন উদ্বোধন করেন। দুই পাশে দুইটি ইঞ্জিন ও মাঝখানে বগিসহ ডেমু ট্রেন বাহ্যিকভাবে দেখতে বেশ সুন্দর। কিন্তু এর ভেতরের অবস্থা একেবারে উল্টো। যাত্রীদের অভিযোগ, আকারে ছোট হওয়ায় ডেমুর ভিতরে অত্যন্ত গরম। এর দরজাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলে এবং বন্ধ হয়। জানালাগুলো সরু হওয়ায় ভেতরে বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে না। এ কারণে ভিতরে ভয়াবহ তাপের সৃষ্টি হয়। গাদাগাদি করে চলতে গিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চালুর পর পরই এরকম ঘটনায় যাত্রীদের রোষানলে পড়ে ডমু ট্রেন চারদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এখনও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০ জোড়া ট্রেনের মধ্যে অর্ধেকই বন্ধ থাকে। ডেমু ট্রেনে কোনো বাথরুম নেই। বিষয়টি যাত্রীদের অজানা থাকায় প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের পাশপাশি যানজট কমাতে ডেমু ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়। অথচ অধিক যাত্রীর ডেমু ট্রেন এখন এতোটাই অবহেলার শিকার যে বিমান বন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পৌঁছতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেমু ট্রেনগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, অনুপযোগী, নকশাবহির্ভূত, নিম্নমানের। চলতে গিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ বগিগুলোও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অথচ কেনার সময় এগুলো নন এসি জেনেই কেনা হয়েছিল। রেল সূত্র জানায়, চালুর পর থেকে ডেমু ট্রেন রেলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসান কমাতে মাঝে মধ্যে ডেমু ট্রেন বসিয়ে রাখা হয়। ২০১৩ সালের (অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) এই ৪ মাসে ডেমু ট্রেন পরিচালনায় রেলের লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। চলতে গিয়ে প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে এই ট্রেন। সে কারণে সব রুটে নিয়মিত পরিচালনা করা সম্ভবও হয় না। সময়মতো চলাচল না করায় এই ট্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা।
জানা গেছে, অধিক টাকায় অত্যন্ত নিম্নমানের ডেমু ট্রেন চলাচল শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই ১০ সেট ট্রেন বিকল হয়ে যায়। রেলের প্রকৌশল শাখার তথ্য মতে, একটি ডেমু ট্রেনের আপ-ডাউন মিলে জ্বালানী ও ম্যাকানিক্যাল খরচ গড়ে ৭০ হাজার টাকা। ২০ সেট ডেমুর মধ্যে সারাদেশে গড়ে ১৬ সেট ডেমু সচল থাকে। প্রতিদিন এ বাবদ খরচ প্রায় ১২ লাখ টাকা। এর বাইরে লোকো মাস্টারসহ রেলের কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য খরচ মাসে প্রায় ৭ লাখ টাকা। অথচ একটি ডেমু থেকে রেলের আয় হয় দৈনিক গড়ে ২৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে ১৬ সেট ডেমুতে প্রতিদিন গড়ে লোকসান ৮ লাখ টাকা। রেলের হিসাব মতে, গত বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে প্রতিটি ডেমু গড়ে চলাচল করেছে ৫০ দিন। এই সময়ে ডেমু চালাতে গিয়ে রেলের লোকসান হয়েছে কমপক্ষে ৪ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের ৪ রুটে ৪ মাসে ( মে-সেপ্টেম্বর) ডেমু ট্রেন পরিচালনায় লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। সে সময় রেলের পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে বলা হয়, যাত্রী কমে যাওয়ায় প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে ডেমুর আয়। চট্টগ্রামে যাত্রীদের চাপের মুখে ডেমুর স্বয়ংক্রিয় দরজা ভেঙে সার্বক্ষণিক খোলা রাখা এবং জানালা ভেঙে বড় করা হয়। কিন্তু তারপরেও যাত্রী বাড়ানো যায় নি। গত বছর কয়েক দফা সংবাদপত্রের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডেমুর প্রতি যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে ১১ রুটে মোট ১৬ সেট ডেমু চালু আছে। এর মধ্যে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম-লাকসাম, ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর, আখাউরা- কুমিল্লা রুটে ২ সেট, চট্টগ্রাম সার্কুলার রুট, পার্বতীপুর- ঠাকুরগাঁও- সৈয়দপুর-রংপুর- লালমনিরহাট, লাকসাম- কুমিল্লা, লাকসাম-নোয়াখালি-কুমিল্লা ও আখাউরা- সিলেট রুটে এক সেট করে ডেমু ট্রেন চলাচল করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।