Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শ’ শ’ রোহিঙ্গা শিশু নিঃসঙ্গ ঝুঁকিতে প্রায় আড়াই লাখ

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে গত প্রায় তিন সপ্তাহে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন তার অর্ধেকের বেশি শিশু। এর মধ্যে শত শত শিশু রয়েছে, যাদের সঙ্গে পরিবারের কোনো সদস্য নেই। এতে শরণার্থীতে উপচে পড়া ও কর্দমাক্ত আশ্রয় শিবিরগুলোতে তারা পড়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। এমনটা বলছেন ত্রাণকর্মীরা। জাতিসংঘ বলছে, ২৫ শে আগস্ট মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইন ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।
এখন তারা খাদ্য, আশ্রয় ও পরিষ্কার পানির জন্য লড়াই করছে। ইউনিসেফের মুখপাত্র ক্রিস্টোফে বোউলিয়েরাক বলেছেন, শরণার্থীতে শিবিরগুলো উপচে পড়ছে। প্রতিদিনই প্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এসব স্থান মারাত্মক কর্দমাক্ত হয়ে পড়ছে। ২৫ শে আগস্টের পর যারা বাংলাদেশে এসেছেন তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক এসেছেন গত সপ্তাহে। এতে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো তীব্র থেকে তীব্র চাপে পড়েছে। এক রকম লড়াই করতে হচ্ছে ত্রাণ দিতে গিয়ে। তিনি বলেন, খোলা মনে বলছি। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু অপ্রত্যাশিত মাত্রায় শরণার্থী আসছেন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইউনিসেফ গণনা করে দেখেছে, আশ্রয় শিবিরগুলোতে ১২৬৭টি শিশু রয়েছে। তাদের সঙ্গে পরিবারের কোনো সদস্য নেই।
অর্থাৎ তারা নিঃসঙ্গ। তিনি আরো বলেন, শরণার্থীদের যে দ্রুত সংখ্যা বাড়ছে তাতে, নিঃসঙ্গ শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাদের সামনে রয়েছে পাচার, যৌন নির্যাতন, শিশু শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার ও বাল্য বিয়ের মতো ভয়াবহ সব ঝুঁকি। শিশুদের বিশ্রাম ও খেলাধুলার জন্য ৪১টি স্থান নির্ধারণ করেছে ইউনিসেফ। কোন শিশু নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছে অথবা তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে তা সনাক্ত করতে এটা ত্রাণকর্মীদের জন্য সহায়ক হয়েছে। শিশুদের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন খাদ্য, পুষ্টির যোগান, মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা ও মানসিক কাউন্সেলিং। ২৫ শে আগস্ট থেকে শিশু-বান্ধব স্থানগুলো থেকে সহায়তা নিয়েঝে কমপক্ষে ১৮ হাজার শিশু। কমপক্ষে দুই লাখ ৩০ হাজার শিশু পৌঁছেছে শিবিরগুলোতে। তাদের অনেকেরই জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের হিসাবে শরণার্থীদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই হলো নারী ও শিশু। এর মধ্যে আবার শতকরা ১৩ ভাগ নারী হয়তো অন্তঃসত্ত¡া না হয় তারা কোলের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান। এ জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য পাঠানো হয়েছে কয়েক ডজন ধাত্রী। ক্রিস্টোফে বোউলিয়েরাক বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা, এমন বিপন্ন নারী, শিশুর সংখ্যা বাড়ছেই। উদ্বেগের বিষয় হলো- আমরা এখনও এই শরণার্থীর ঢল কমার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। রোহিঙ্গারা হলো বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘু। তারা দশকের পর দশক দেশের পশ্চিমাঞ্চলে কোণঠাসা হয়ে আছেন। তাদেরকে নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। তাদের গ্রামের বাইরে যাওয়ার বা কাজ করার কোনো অনুমতি দেয়া হয় না। গত বছর অক্টোবরে বিদ্রোহীরা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে ৯ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। তারপর থেকে রাখাইনের রোহিঙ্গারা কর্কশ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবদ্ধ। ২৫ শে আগস্ট রোহিঙ্গা উগ্রপন্থি আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির সদস্যরা পুলিশ পোস্ট ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এরপর থেকে সেনাবাহিনী নৃশংস দমনপীড়ন শুরু করে। এর ফলে বাণের পানির মতো শরণার্থীদের দেশ ছাড়া শুরু হয়। সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষকে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কথা বলছে বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ও শরণার্থীরা। সীমান্তে স্থল বোমা পেতে রেখেছে মিয়ানমার। এতে এরই মধ্যে কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতও হয়েছেন। এ বিষয়ে মিয়ানমারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জায়েদ রাদ আল হোসেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতি নির্মূল বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই, বিশপ ডেসমন্ড টুটু এরই মধ্যে মিয়ানমারের নেত্রী, শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত অং সান সুচির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তাকে সহিংসতার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। ওদিকে নিউ ইয়র্কে আগামী সপ্তাহে শুরু হবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। এতে যোগ দেয়া বাতিল করেছেন অং সান সুচি। তিনি এখনও এটা বিশ্বাস করেন যে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাস করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এমন ইতিহাস আছে। তা সত্তে¡ও তাদেরকে দেখা হয় বিদেশী বা বহিরাগত হিসেবে। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন অবিলম্বে বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি লিখেছেন ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস সহ ১২ জন নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও অন্যরা। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করছে মিয়ানমার সরকার, এ বিষয়টি হাস্যকর। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দা অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গা সঙ্কটে মিয়ানমার সরকারকে শাস্তি দেয়ার উদ্যোগ সীমিত। রোহিঙ্গাদের মানবিক সঙ্কট ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। মানবাধিকারের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে। এমন যুক্তি তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও মিয়ানমারের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার তহবিল বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার প্রভাবশালী সিনেটর জন ম্যাককেইন। তিনি সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান। রাখাইনে সাংবাদিক ও মানবাধিকার বিষয়ক তদন্তকারীদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। গত সপ্তাহে সেখানে সরকারের তত্ত¡াবধানে একদল সাংবাদিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ সময় তাদের কেউ কেউ রিপোর্ট করেন যে, একটি রোহিঙ্গা গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে বের হয়ে যাচ্ছিলেন বৌদ্ধদের একটি দল। ওই এলাকায় মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোকে প্রবেশের অধিকার না দেয়ায় তারা নির্ভর করছে স্যাটেলাইটে পাওয়া ডাটা ও পালিয়ে আসা শরণার্থীদের দেয়া বর্ণনার ওপর। বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর ৮০টি ভয়াবহ অগ্নিকান্ড রেকর্ড করেছে তারা। গত চার বছরে এত বিশাল আকারে কোনো অগ্নিকান্ডের রেকর্ড নেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত শুক্রবার বলেছে, ২৫ শে আগস্ট থেকে রাখাইনে ৬২টি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একটি বিবৃতি দিয়েছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন। তিনি বলেছেন, মাঠপর্যায়ে আমাদের গবেষকরা স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবির পক্ষে কথা বলেছেন। বলা হয়েছে, রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে গণহারে আগুন দেয়া হয়েছে। এ জন্য সরাসরি দায়ী মিয়ামনারের সেনাবাহিনী। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।



 

Show all comments
  • Md Ariful Islam ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০৭ পিএম says : 0
    আললাহ তুমি রোহিংগাদের প্রতি কুদরতি হাত দিয় সাহায্য কর আর জালিমদের ধংস করে দেও
    Total Reply(0) Reply
  • Saim ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০৮ পিএম says : 0
    Allah tumi ruhomath koro ay muslim baschader
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmun Nahar Ali ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২০ পিএম says : 0
    Yea allha Muslim bassa ma bon sobai k Rakkah koren Ameen
    Total Reply(0) Reply
  • Arman Hosain Kabir ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২১ পিএম says : 0
    আল্লাহ তুমি ছাড়া এ জগতে এদের আর কেউ নাই । তুমি হেফাজাত কর। ইয়া আল্লাহ ।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazim Uddin ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২২ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ এই দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না ছোট শিশু বাচ্চাগুলো আরেফিন কোথায় যাবে কোথায় থাকবে নাই কোন ঠিকানা তুমি রহম করুন তুমি রহম কর
    Total Reply(0) Reply
  • Habibur Rahman Habib ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২৩ পিএম says : 0
    Orai akdin itihas gorbe ciniye anbe shadinotar ranga probat inshallah
    Total Reply(0) Reply
  • Azmul Hossin ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    Allah tomar rahmat dea eder k bachao...
    Total Reply(0) Reply
  • Ramesh Chandra ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    মাননতার লজ্জা!
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    বলার ভাষা পাইনা
    Total Reply(0) Reply
  • Maksuda Siddiqua ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২৫ পিএম says : 0
    ফী আমানিল্লাহ।আল্লাহ তুমি ওদেরসহ আমাদের হেফাজত করো। আমীন সুম্মা আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Latest senaris ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:০৬ পিএম says : 0
    Allah tumi rham koro.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ