পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদের তিন দিন আগে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন মোঃ জামাল হোসেন। কিন্তু সে কন্যা আরো দুই মেয়ে ও স্ত্রীর কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি। তিন কন্যা ও স্ত্রীর খোঁজ না পেয়েই সীমান্তের পানে ছুটে এসেছেন রোহিঙ্গা মুসলিম তরুণ জামাল। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের নাক্ষ্যংদিয়া মদিনা পাড়ায় তার বাড়ি। বোন রুয়াইদাকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ায় অস্থায়ী আশ্রয় থেকে বুধবার উখিয়ার বালুখালি এলাকায় চলে গেছেন।
মোঃ জামাল হোসেন ও তার আত্মীয়-স্বজনরা তিন দিন বয়সী কন্যাসহ তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে পালিয়ে আসার করুণ কাহিনী শুনিয়েছেন সাংবাদিকদের। জামাল ও রুয়াইদা বেগম ভাইবোন। জন্মভূমি রাখাইনে বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু বর্মী সেনাবাহিনী ও মগদের বিভৎসা নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ তাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। রুয়াইদা বেগমের চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তার বুকের ধন মোঃ শহীদ হোসেন। ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে পারলেও মৃত ছেলের লাশ রেখেই পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। কবর দিতে পারেননি। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে এলেও তার মন যে পড়ে রয়েছে মিয়ানমারের রাখাইনের জন্মভিটায়। ছেলের নানা স্মৃতি স্মরণ করে মাঝে মাঝেই চিৎকার করে উঠছেন। ঘটনার ১৫ দিনেও স্বাভাবিক হতে পারছেন না রোহিঙ্গা মুসলিম ওই নারী। রুয়াইদার বড় ভাই মোঃ জামালের জীবনেও ঘটে গেছে এক বিশাল ট্র্যাজেডি! ঈদের দু’দিন আগের ঘটনা। নবজাতকসহ স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে রেখে রাখাইনের মংডু আলী তাইনজু বাজারে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। হঠাৎ বর্মীদের আক্রমন। বর্মীরা তার দোকান লুট করে নেয়। পরে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি কোনো মতে প্রাণে বেঁচে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। দোকান লুটপাটের পর বাড়ির পথে রওনা করেছিলেন মোঃ জামাল। পৌঁছাতে পারেননি। পথেই শুনতে পান তার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে মগ যুবকরা। গ্রামে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছে সুচির আর্মিরা। বাড়ির লোকজন যে যার মতো করে পালিয়েছে। অনেকে হতাহত হয়েছে। কেউ পুরে ছাই হয়ে গেছে। গুরুতর আহত অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। মোঃ জামাল জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন। ঘটনার ৪ দিন পর্যন্ত বার্মায় ছিলেন তিনি। সেখানে দিনে জঙ্গলে কাটালেও রাতে রাস্তায় বেরিয়ে নানা কায়দায় খোঁজাখুঁজি করেছেন স্ত্রী-সস্তানদের। রক্তের টান; সীমাস্তের এপারে খোঁজ নিয়েছেন। টেকনাফে এসে নিজের ভাই ও মা আর কক্সবাজারে আরেক বোনের সন্ধান পেয়েছেন। কিন্তু নিজের স্ত্রী আর ৩ কন্যার খোঁজ পাননি। বাংলাদেশে এসেও মোঃ জামাল প্রতিদিনই ছুটছেন সীমান্তে। যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল। যদি স্ত্রী-সন্তানের দেখা পাওয়া যায়। কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়ায় মোঃ জামাল যখন সাংবাদিকদের করুণ কাহিনী শোনাচ্ছিলেন তখন তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে পানি। হায়রে জীবন!
মোঃ জামাল বলেন, ভাই আমার সব শেষ করে দিয়েছে হিতারা (বর্মী, মগরা)। স্ত্রী, ৩ কন্যা ছিল আমার। ছোট মেয়েটা ঈদের ৪দিন আগে জন্মেছে। আকিকা দেইনি বলে নামও রাখতে পারিনি। এরা আছে না মরেছে তাও খোঁজ পাচ্ছি না। জামাল হোসেন জানান, আলী তাইনজু বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নাক্ষ্যংদিয়া মদিনা পাড়ায় তার বাড়ি। বাজারে তার মোবাইল যন্ত্রাংশের দোকান ছিল। তিনি কিভাবে প্রাণে বেঁচেছেন কোন পথে বাংলাদেশে ঢুকেছেন সে বিবরণ দেন। মোঃ জামাল হোসেনের সঙ্গে বোন রুয়াইদা ও তার শ্বশুর নুরুল ইসলাম ও জা মাহমুদা খাতুন ছিলেন। মাহমুদা বাংলাদেশে আছেন ১৪ বছর ধরে। মাহমুদা খাতুন ঘটনার দূর্বিসহ বণর্না দিয়ে জানান, তার জা রুয়াইদার সুখের সংসারে সবই ছিল। মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামীর আয়ে সুন্দর একটি বাড়ি ছিল। মংডু আলী তাইনজু ওয়াইশা পাড়ায় ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে বেশ ভালোই ছিল তার জীবন-সংসার। অর্থনৈতিকভাবেও সচ্ছল পরিবার। সবকিছু হারিয়ে এখন তার কিছুই নেই। সুচির সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও মগদের আগুন তার সব শেষ করে দিয়েছে। ওই আগুনে পুড়ে মরে গেছে তার ছেলে। মেয়েটাকে রক্ষা করতে পেরেছেন। সীমান্তের দিকে পালানোর সময় মগ যুবকদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা কেটেছে তার পুরোটা পথ। তারা প্রথমে মংডু আলী তাইনজু, ওয়াইশা পাড়া থেকে পৌঁছান শাহপরীর দ্বীপ। প্রায় ১৪ কিলোমিটার। দিনে লুকিয়ে আর রাত কেটেছে হাঁটা আর দৌড়ের মধ্যে। সঙ্গে বৃদ্ধ শ্বশুরসহ পরিচিত-অপরিচিত ১৪ জন। এক সঙ্গেই তাদের পাড়ি দিতে হয় দরিয়া বঙ্গোপসাগর। তবেই তারা নিরাপদ। রুয়াইদার শ্বশুর নুরুল ইসলাম বয়োবৃদ্ধ। তবে চলাফেরা করতে পারেন। সন্তান হারানোর কষ্টে থাকা ছোট ছেলের বৌকে পুরো পথ সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন নুরুল ইসলাম। কিন্তু মায়ের মন! সান্তনায় মানে নারী ছেঁড়া ধন ভোলার কষ্ট? শুধুই কেঁদেছেন সন্তানের জন্য। পথে বহুবার অসুস্থ হয়েছেন। এখনো তিনি অসুস্থ। জানালেন জা মাহমুদা ও শ্বশুর নুরুল ইসলাম। জামাল হোসেন বললেন, বোনের দিকে তাকিয়ে আমি আমার কষ্ট ভোলার চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না ভাই। নবজাতন মেয়েটার বয়স এখন ২২ দিন হতো। ওর জন্যই বেশি মন কাঁদছে। বড় মেয়ে উমা আমিন এবং মেজো মেয়ে সুরমা আমাকে অনেক আদর করতো। মোঃ জামাল হোসেন বলেন, মেয়ের নাম রাখতে পারিনি। হে আল্লাহ তুমে আমার স্ত্রী-কন্যাদের সুস্থ রাখো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।