পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা, নিপীড়ন বন্ধ না হলে মিয়ানমারের আরাকান অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল বাদ জুমা বন্দরনগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেইট চত্বরে আরাকানে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, গত কয়েকদিনে আরাকানে বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা লক্ষাধিক মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গণকবরে পরিণত করেছে। তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বতম হত্যাকান্ড চালিয়ে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছে। মানবতার শত্রæ মিয়ানমারের জালেম সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বার্মার সকল পণ্য বর্জন করতে হবে। তাদের সাথে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিজিপি সীমান্তের ভেতরে ঢুকে টহল এবং মিয়ানমারের হেলিকপ্টার আমাদের আকাশসীমা লংঘন করেছে। এটা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বে ওপর চরম হুমকী। এ ধৃষ্টতা মেনে নেয়া যায়না।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে উপর্যুপরি চাপ প্রয়োগে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কেও মানবতার পক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে। প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে হবে এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস গণহত্যা পরিচালনার দায়ে এবং মানবতার বিরোধী অপরাধে থেইন সেইন সরকারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অন সান সু চিকে বিশ্বের এক নাম্বার জঙ্গি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবিক ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণহত্যা বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। মিয়ানমার কথা না শুনলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা ও দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহŸান জানান। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রকে কর্পোরেট মানসিকতা পরিহার করে আর্তমানবতার স্বার্থে জাতিসংঘের শরণার্থী পুনর্বাসন আইন অনুযায়ী বাস্তু ও রাষ্ট্রহারা এবং সাগরে ভাসমান অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান ও পুনর্বাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহŸান জানান।
হেফাজতের নগর সভাপতি মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনূষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাওলানা শামসুদ্দোহা চৌধুরী, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি হারুন ইজহার, আবদুর রহমান চৌধুরী, ফজলুল করিম জিহাদী, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা মিয়া মোহাম্মদ শরীফ, প্রফেসর মুসা কলিমুল্লাহ, মাওলানা হাফেজ ফায়সাল, মাওলানা জয়নাল আবেদীন কুতুবী, মাওলানা মুবিনূল হক, মাওলানা আবু তাহের ওসমানী, মাওলানা আ ন ম আহমদুল্লাহ, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা অশরাফ বিন ইয়াকুব, মাওলনা নুর মোহাম্মদ, মাওলানা ওসমান কাসেমী, মাওলনা মাহমুদুল করিম, মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা মোস্তাক মাদানী প্রমুখ।
মায়ানমার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা
বার্মার সামরিক জান্তা ও সন্ত্রাসী সূ চী ও বৌদ্ধদের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর হামলা চালিয়ে জাতিগত নিধনের প্রাতিবাদ এবং আরাকান স্বাধীন করে রোহিঙ্গা মুলমানদের পূর্ণ নিরাপত্তায় স্থায়ী আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাাসিনাকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার দাবীতে গতকাল বাদ জুমা বাইতুল মোকাররম উত্তর গেট এলাকা ছিল উত্তাল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও আপামর ইসলামী জনতার ঢল নেমেছিল উত্তর গেটে। বাদ জুমা পৃথক সমাবেশ শেষে হেফাজত ঢাকা মহানগর সভপতি আল্লামা নূর হোসইন কাসেমীর নেতৃত্বে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উত্তর গেট সড়ক ও পুরাণা পল্টন মোড় এলাকা প্রদক্ষিণ করে । অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
হেফাজত মহানগরের বিক্ষোভ
কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে গতকাল বাদ জুমা রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের প্রতিবাদে এবং আরাকান স্বাধীন করার দাবীতে বাইতুল মোকাররম উত্তর গেট চত্তরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
মিছিলপূর্ব বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরাকান স্বাধীন করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্থায়ী আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করে পূর্ণ নিরাপত্তাসহ তাদের সকল নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মিয়ানমানেরর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার আহŸান জানান। এ যুদ্ধে অংশ নিতে জাতি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জোরদার কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করার আহŸান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে দশ লাখ মুসলিম পরিবার একেকজন করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিজেদের পরিবারভুক্ত করতে প্রস্তুত আছে।
সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন শুধু বিক্ষোভ করলে হবে না, বিশ্বমুসলিম নেতৃবৃন্দকে আরাকান স্বাধীন করতে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহŸান জানান। বক্তারা জাতিসংঘের অধিবেশনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি জোরালোভাবে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবী জানান। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে লুটপাট বন্ধ করার এবং আগ্রহী সংগঠনসমূহকে স্বাধীন ভাবে ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনায় সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করার দাবী জানান। সমাবেশে আগামী ১৮ই সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচী পালনে বাইতুল মুকাররম উত্তর গেটে ধর্মপ্রাণ সকল মুসলমানকে সমায়েত হওয়ার জন্য আহŸান জানানো হয়। অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মুজীবুর রহমান পেশোয়ারী, ড. আহমদ আব্দুল কাদের, হাকীম আব্দুল করীম, মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা শরীফুল্লাহ, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আজীজুল রহমান হেলাল ও মুফতী নাসীর উদ্দীন খান প্রমূখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন হেফাজত ঢাকা মহানগরের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী।
ইসলামী যুব আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিলাহ আল মাদানী বলেছেন, আরাকান রাজ্য হতে মুসলমানদের বিতাড়িত করতেই পরিকল্পিত গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে শান্তিতে কথিত নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি ও মায়ানমার সরকার। তারা রোহিঙ্গা নিধনের মদদদাতা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রীসের প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। শুধু লোকদেখানো নিন্দা নয় বরং মিয়ানমার সরকারকে গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে বাধ্য করতে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ^নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। জাতি নিধন ও গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে স’ূচি ও সামরিক জান্তার বিচার করতে হবে।
আজ বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবীতে ইসলামী যুব আন্দোলন ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মুফতী মানসুর আহমদ সাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কে এম আতিকুর রহমান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম। যুবনেতা মু. বশির উলাহ, আতিকুর রহমান মুজাহিদ, মোখতার হোসাইন, শেখ মু. নুর-উন-নাবী ও মাহবুব আলম। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাঈম, ঢাকা জেলা সভাপতি মাওলানা বিলাল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, মাওলানা আব্দুল আহাদ প্রমুখ।
তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে নিরাপদে স্বদেশে বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কফি আনান কর্তৃক প্রস্তাবিত সুপারিশমালা অবিলম্বে বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেণ, রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে আগত ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সভাপতি কে এম আতিকুর রহমান বলেন, মিয়ানমার সরকার যে যুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে তা একেবারেই অযৌক্তিক। মিয়ানমার যে বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে যৌক্তিকভাবে তার পাল্টা জবাব দিতে হবে বিশ^ মুসলিম নেতৃবৃন্দকে।
সভাপতির বক্তব্যে মুফতী মানসুর আহমদ সাকী বলেন, মিয়ানমার মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসবাস করছে। সে দেশের সামরিক শাসকরা হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে বসে যে, রোহিঙ্গা বার্মিজ নয়; তারা বাঙ্গালী। যদি রোহিঙ্গারা বাঙ্গালী ও বাংলাদেশী হয় তবে আরাকান রাজ্য বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সভাপতি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদেরকে সে দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য বিভিন্ন সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ চলছে। মুসলমানদের স্বাথেই তাগুতি শক্তির মোকারেলায় সীসাঢালা প্রাচীর তৈরী করে বিশ^ব্যাপী প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
মুসলিম লীগ
মুসলিম লীগ নেতারা বলেছেন, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতি নির্মূলে নারকীয় গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ থেকে এখনো কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য অবিলম্বে সেখানে জাতিসংঘকে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করার জন্য নেতারা আহŸান জানান।
গতকাল শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট নুরুল হক মজুমদারের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবী করেন। দলের প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র সদস্য আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, দলীয় মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, এডভোকেট হাবিবুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার ওসমান গনী, খোন্দকার জিল্লুর রহমান, এস এইচ খান আসাদ, কাজী এ.এ কাফী, ফারুক আহমেদ, আবু বক্কর সিদ্দীক, সাইফুল ইসলাম, আবদুল আলিম প্রমুখ। মরহুম নুরুল হক মজুমদারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন নির্লোভ রাজনীতিবিদ হিসাবে তাকে দেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে।
সুচির কফিনে অগ্নি সংযোগ খেলাফত আন্দোলনের
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় কর্তিক নিরীহ নিরপরাধ রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে গণহত্যা ও নিপীড়ন-নির্যাতন ও দেশান্তরিত করার প্রতিবাদে আজ ১৫ সেপ্টেস্বর শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পল্টন মোড়ে গিয়ে অংসান সুচির কফিনে ও মিয়ানমারের পতাকায় অগ্নি সংযোগ করে। পরে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুফতী ফখরুল ইসলাম, মুফতী সুলতান মুহিউদ্দিন, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা ফিরোজ আশরাফী, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হান্নান আল হাদী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান ও এডভোকেট কামরুদ্দিন প্রমূখ।
সভাপতির ভাষণে মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমাস্যা স্থায়ী সমাধানে আরাকানকে স্বাধীন করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার পার্শবর্তী রাষ্ট্রের সরকার হিসেবে রোহিঙ্গাদের পাশে থেকে সকল সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখা মানবিক দায়িত্ব।
রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে মসজিদে মসজিদে আর্থিক সহায়তার আহŸান
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাঁচাতে আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন হাজারো বাংলাদেশি মুসলমান। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য মসজিদে মসজিদে আর্থিক সহায়তার আহŸান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা। গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিয়ানমারের সরকারি সেনাদের হামলায় পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মহান আলাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া ও মোনাজাতের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তারা।
বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও ধর্মীয় নেতারা কক্সবাজার ও উখিয়াতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুরাবস্থার কথা বর্ণনা করে ধর্মপ্রাণ মুসলিদের কাছে যার যার তৌফিক অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা করার আহŸান জানান। এ সময় ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ প্রায় সকলেই রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য টাকা-পয়সা দেন। একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা ও মসজিদের মুসুল্লিদের সাথে আলাপকালে এ খবরের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আজিমপুর এলাকার একটি মসজিদের এক মুসলি জানান, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদনে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমার থেকে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসা, সেখানে অত্যাচারিত হওয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা ও বর্তমানে আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপনের ঘটনার খবর পড়ে ও সচিত্র প্রতিবেদন দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠছেন। আর তাই ধর্মীয় নেতারা আর্থিক সহায়তা দেয়ার আহŸান জানালে প্রায় সকলেই নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী অনুদান দিয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করা হবে, আগে থেকে এমন ঘোষণা না থাকায় অনেকেই আফসোস করে জানিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তারা এসে সাহায্য দিয়ে যাবেন। কেউ কেউ আবার টাকা না দিলেও তাদের নাম লিখে অনুদান কত দেবেন তা জানিয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল এলাকার একজন বয়স্ক মুসলি বলেন, মসজিদে টাকা ওঠানো নিয়ে নানা কথা শোনা গেলেও আজই তিনি প্রথম দেখলেন সব মুসলি একাট্টা হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ যদি নির্যাতিত ও আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাহায্যার্থে স্বল্প পরিমাণও আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে তবেই প্রকৃত মানবতার জয় হবে। তবে কেউ কেউ অনুদানের অর্থ স্বচ্ছতার সাথে ব্যয় করার বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শও দেন।
ঢাকা-৫ আসনের এমপি পুত্র ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোলা সজল মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাড়াঁতে সকলকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার মাতুয়াইল কবরস্থান জামে মসজিদে জুমা বয়ান শেষে উপস্থিত মুসলিদের উদ্দেশে তিনি এ আহŸান জানান। এ সময় উপস্থিত মুসলিরা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সাধ্যমত দান করেন। এছাড়াও বাঁশেরপুল বায়তুল সালাম জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হানিফ তালুকদারের নেতৃত্বে টাকা ওঠানো হয়।
যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তায় নুরে জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাহেব আলী মুসুিল্লদের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানালে তাতে সায় দেন মসজিদ কমিটির সভাপতি হাজী ফজলুল হক। এ সময় জিয়া নামে একজন মুসলি ১ লাখ টাকা দান করেন। পরে এসএম আলী হোসেন রানা নামে আরেকজন মুসলি মোটা অংকের অর্থ সহায়তার ঘোষনা দেন। এর পর একে একে উপস্থিত মুসলিরা সমর্থ অনুযায়ী অর্থ দেন।
কর্মসূচি: আজ শনিবার সকাল ১১ টায় রাজধানীর তেঁজগাওয়ে এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র উদ্যোগে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ভূমিকা শীর্ষক এক পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন সমাবেশ মিছিল
চট্টগ্রাম ব্যুরো : মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা ও বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল (শুক্রবার) নগরীর বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গাউসিয়া কমিটি
মিয়ানমারে গণহত্যার প্রতিবাদে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন বন্ধে মিয়ানমারকে নিভৃত করতে বিশ^ নেতৃবৃন্দের এগিয়ে আসার আহŸান জানান। নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ হতে মীর সেকান্দর মিয়ার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথি ছিলেন গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গাউসিয়া কমিটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল হক খান। প্রধান বক্তা ছিলেন গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইদ্রিস মো: নুরুল হুদা, সালামত উল্লাহ প্রমুখ।
জমইয়াতে হিযবুল্লাহ
বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর আমীর ছারছীনা দরবারের পীর ছাহেবের আহŸানে অরাজনৈতিক তরিকতভিত্তিক আধ্যাত্মিক সংগঠন জমইয়াতে হিযবুল্লাহ চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদ হতে দামপাড়াস্থ ওয়াসা চত্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা, পৈশাচিক অত্যাচার, নিপীড়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি মুহাম্মদ খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংগঠনের কর্মী, দরবারের ভক্ত মুরিদানসহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মাওলানা মুছা আমানী, আব্দুল মান্নান হাওলাদার, মুহাম্মদ জাহেদুল হাসান খান, মাওলানা মুহাম্মদ ফারুক, মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, মুহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রমুখ।
বাকলিয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা, নির্যাতন ও জুলুমের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় জুমার নামাজের পর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাকলিয়ার বলিরহাট এলাকায় হামিদ উল্লাহ জামে মসজিদের সামনে মানববন্ধন মসজিদের খতিব মাওলানা নোমান ছালেহ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মসজিদের খতিব মাওলানা আজিজুল হক বিপ্লবী, মাওলানা জিয়াউল হক, মুজিবুর রহমান, আলী আকবর, মো: সাহেদ, মো: শওকত প্রমুখ। মানববন্ধনে মুসল্লিসহ স্থানীয় বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
আহলে সুন্নাতের ত্রাণ বিতরণ
কক্সবাজার উখিয়া কুুতুপালং উদ্বাস্তু ক্যাম্পে ৫০ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত সমন্বয় কমিটি। ত্রাণবিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা এম এ মতিন, আল্লামা এম এ মান্নান, এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, পীরে তরিকত হারুনুর রশিদ রেজভী প্রমুখ। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল বিশুদ্ধপানি, চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি, লবণ, নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নতুন-পুরাতন কাপড় ইত্যাদি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।