Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য অব্যাহত থাকবে ওবায়দুল কাদের

‘অপারেশন ইনসানিয়াত’ ৭ হাজার টন ত্রাণ দেবে ভারত

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪৩ এএম | আপডেট : ১:৪৩ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মিয়ানমারে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রথম দফায় ৫৩ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে ভারত। ‘অপারেশন ইনসানিয়াতের’ আওতায় মোট ৭ হাজার ত্রাণসামগ্রী পাঠাবে দেশটি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভারতীয় বিমানবাহিনীর সি-১৭ বিমানে ত্রাণসামগ্রীর প্রথম চালানটি আসে। রোহিঙ্গাদের জন্য এসব ত্রাণসামগ্রী গ্রহণকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক সাহায্য দেয়া অব্যাহত থাকবে। তিনি ভাগ্যাহত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণসামগ্রী দেয়ায় ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশের দুঃসময়ের বন্ধু। ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে।
ভারতীয় ত্রাণবাহী বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় দুপুরে। তার আগে মরক্কোর একটি কার্গো বিমানে করে মজলুম রোহিঙ্গাদের জন্য সেদেশের পক্ষ থেকে ১৪ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’ নামে ভারতীয় ত্রাণ সহায়তার প্রথম দফার চালানে চাল, ডাল, বিস্কুট, লবণ, চিনি, সাবান, মশারি ও গুঁড়ো দুধসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো ত্রাণে বিভিন্ন পণ্য দিয়ে ১৫ কেজি করে প্যাকেট করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে মোট সাত হাজার টন ত্রাণ পাঠানো হবে। আরও একটি চালান বিমানে আসবে, বাকিগুলো আসবে জাহাজযোগে।
বিমানবন্দরের রানওয়েতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ত্রাণ হস্তান্তর করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। ত্রাণসামগ্রী প্রেরণের জন্য ভারত সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ওবায়দুল কাদের। যে কোন প্রাকৃতিক-মানবিক বিপর্যয়ে ভারত বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পাশে ছিল আছে এবং থাকবে। ১৯৭১ সালে মানবিক বিপর্যয়ের সময়েও ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এখন মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলা করছে তাতেও ভারত আমাদের পাশে আছে। ভবিষ্যতে দু’দেশের বন্ধুপ্রতীম এ সম্পর্কের আরও উন্নয়ন হবে এবং বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। বাংলাদেশে যত সংখ্যক রোহিঙ্গা এসেছে তারা এদেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এরপরও বাংলাদেশ তাদের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। শ্রীংলা বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ। পুরো বিষয়টিতে আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করি। বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। জনবহুল জনসংখ্যার দেশে তাদের খাদ্য ও বস্ত্র যোগান দেয়া বড় চ্যালেঞ্জ। বিষয়টি অনুধাবন করে ভারত জরুরী ভিত্তিতে ৭ হাজার টন ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টানা ৪৮ ঘণ্টা কাজ করে ৫৩ টন পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো ভারতের বিশাখা পত্তম বন্দর থেকে জাহাজে এবং বিমানে করে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম আসবে।
ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, চট্টগ্রামে ভারতের ভারপ্রাপ্ত সহকারী হাই কমিশনার অরুন্ধতী দাশ, জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ওবায়দুল কাদেরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ভারতীয় হাই কমিশনার।
রোহিঙ্গাদের জন্য এল মরক্কোর ত্রাণ
এদিকে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠাল উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো। গতকাল সকাল সোয়া ৯টায় ১৪ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মরক্কো এয়ারের একটি বিমান চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হাবিবুর রহমান এবং জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কাছে এসব ত্রাণ হস্তান্তর করেন কিংডম অব মরক্কোর বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এম ভি মজিদ হালিম। পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মরক্কোর দেওয়া ত্রাণের মধ্যে রয়েছে ৭০টি তাবু, এক হাজার কম্বল, এক লট মেডিকেল কিটস, দুই টন দুধ, চার টন চাল ও মেট্রেস। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠানো হয়। তার আগে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে রোহিঙ্গাদের দেখতে যান তুরস্কের ফাস্ট লেডি।
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা তিন দশক ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ আগস্ট রাতে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার পর নির্বিচারে গণহত্যা নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নির্যাতনের মুখে গত তিন সপ্তাহে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউনিসেফের তথ্য।
রোহিঙ্গাদের জন্য ইন্দোনেশিয়ার ৪০ টন ত্রাণসামগ্রী
মিয়ানমারে গণহত্যার মুখে পালিয়ে আসা ভাগ্যাহত রোহিঙ্গাদের জন্য ৪০ মেট্রিক টন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টায় ত্রাণ নিয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে ইন্দোনেশিয়া বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইট।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিকদার ও মোঃ হাবিবুর রহমান। এ সময় সে দেশের রাষ্ট্রদূত রিনা পি সুমার্নো, থার্ড সেক্রেটারী ফাজার পিমানন্দা, বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির উপস্থিত ছিলেন।
সরকার চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে
বন্যা ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সরকার চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা সিটিসহ নির্মিত এবং নির্মিয়মান অনেকগুলো ফ্ল্যাইওভার রয়েছে। এছাড়া ১৪টির মত রেলওভার পাস এবং ফ্ল্যাইওভার নির্মাণাধিন রয়েছে। কাজেই যেসব কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে, সেগুলোই ঠিক করার পর অন্য কাজ করতে পারব। যেটা করতে পারব না সেই ধরণের ওয়াদাও দিতে পারব না।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর উত্থাপিত ‘বগুড়া জেলার সামাথা থেকে দত্তবাড়ী পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ’ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম তলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এমপিরা যে প্রস্তাবগুলো করেছেন এবং এর সঙ্গে যেসব সংশোধনী প্রস্তাব এসেছে এগুলো যুক্তি সঙ্গত ও বাস্তবমুখি। কিন্তু এগুলো নির্মাণ করা অত্যান্ত ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। আর এক সঙ্গে এত প্রকল্প গ্রহণ করাটা বাস্তবসম্মতও নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে এই মুহুর্তে খুব ’চ্যালেঞ্জিং টাইম’ অতিক্রম করছি। বন্যায় আমরা মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। হাওরে, উপকূলে এবং স¤প্রাতিক বন্যা আমাদের রাস্তাগুলো মারাতœক ক্ষতি করেছে। এখন আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে একটা ’ফ্যাটাসটিক সিচুয়েশন (হৃদয় বিদারক অবস্থা)।’ রোহিঙ্গাদের জন¯্রােত। এরইমধ্যে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রবেশের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, টানা বর্ষণজনিত প্লাবনের কারণে রাস্তাগুলো ভাল অবস্থায় নেই। যে কারণে রাস্তায় এখন প্রচন্ড যানজট। আমরা কোনটাকে অগ্রাধিকার দিব। আগে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করব, নাকি নতুন নতুন ফ্ল্যাইওভার নির্মাণ করব।
সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, সময়মত কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করতে পেরেছিলাম বলেই সেদিন ৩৬ টি দেশের কূটনৈতিকরা উখিয়ার কুতুপালং এ যেতে পেরেছিল। সেই রাস্তাও নিয়মিত সংস্কারে প্রয়োজনিয়তা রয়েছে। মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করতে এককালীন অনেক অর্থ ব্যায় হয়েছে। বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। অপ্রত্যাশিত অনেক ব্যয় সামনে চলে এসেছে। যা আমাদের বাজেটে নেই। বন্যায় রাস্তা ধুয়ে গেছে। এসব জায়গাতেও বাজেট বরাদ্দ নেই। এগুলোকে আবার পূর্বাস্থায়ে ফিরিয়ে আনা জরুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ