পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে শরণার্থী সঙ্কটের নিরসনে তিনি বাংলাদেশর প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন । কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়নেরও দবিী জানাবেন।
গতকাল এ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশন বসবে। ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে সাধারণ বিতর্ক। অধিবেশনে অংশ নিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়ার্কে পৌঁছাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম সাধারণ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন এই বিশ্ব সংস্থার রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো তুলে ধরে এর আশু সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাববগুলো জাতিসংঘে তুলে ধরবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে অবিলম্বে কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দাবি জানাবেন। মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপরে পরিচালিত জাতিগত নিধন অভিযানকে মানবতা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহŸান জানাবেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলন এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন লাখ লাখ নিরীহ রোহিঙ্গা প্রাণ ভয়ে মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে বাংলাদেশ সীমান্তে ৪০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যে প্রায় চার লাখ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন,এর আগে থেকে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থন করছিল। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি ।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সঙ্কট যে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, জাতিসংঘ মহাসচিবও সে কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এই শরণার্থী সঙ্কট অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুতর আকার ধারণ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই মহিলা, শিশু ও বয়ষ্ক।
এছাড়া সহিংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আসা আরও চার লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছে। ফলে লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিতে এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখোমুখি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের চলমান ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ অবিলম্বে বন্ধ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সকল রোহিঙ্গার নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলমান থাকবে ।
গত বছর অক্টোবরে রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার পর সেনা অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনর প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশন তাদের তদন্ত শেষে গত ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির হাতে প্রতিবেদন দেন।
সেখানে তিনি বলেন, নাগরিকত্ব না পাওয়ায় এবং নিদন বৈষম্যের কারণে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন রাজ্যে মুসলমান রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। তাদের ওপর বলপ্রয়োগের পথ ছেড়ে মিয়ানমার সরকারকে যৌক্তিক সমাধানের পথে আসতে হবে।
কফি আনান ওই প্রতিবেদন দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলা হয়। এরপর নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল চলছে।
মাহমুদ আলী বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বরাবরের মতই বাংলায় বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিও বিশ্বসভায় তুলে ধরবেন বলে জানান মন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ যে বিবৃতি দিয়েছে, বাংলাদেশ তাকে সময়োপযোগী ও জোরালো অবস্থান বলেই মনে করছে।
রোহিঙ্গা সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার আলোচনায় বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহŸান জানানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এবার বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন।
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রæপের একটি সভা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে মিয়ানমারের সহিংসতা ও শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ওই সভায় অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তুলে ধরবেন। এ সমস্যার আশু সমাধানে তিনি মুসলিম বিশ্বের কাছে দ্রæত ও কার্যকর পদক্ষেপ চাইবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবার প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হচ্ছেন।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।