Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৮ দিনে নো ম্যানস ল্যান্ডে শতাধিক রোহিঙ্গা নারীর সন্তান প্রসব

| প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা : ১৮ দিনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নো ম্যানস ল্যান্ডে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী সন্তান প্রসব করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে শুরু হওয়া সহিংসতা পরবর্তী ৬দিন পায়ে হেঁটে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টের ওপারে কুয়ানচিবং এলাকায় মিয়ানমারের টংবাজার এলাকার বাসিন্দা নাছির মোহাম্মদের (৪০) স্ত্রী রোহিঙ্গা নারী হাছিনা বেগম (৩৫) পৌঁছান। ১০ সেপ্টেম্বর রোববার সকালে ১০টায় সেখানে থেকে কৌশলে এপারে চলে এসে আশ্রয় নেন উখিয়ার পালংখালী আঞ্জুমানপাড়াস্থ নাফ নদীর পাড়ে। নাফ নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে সন্তান প্রসব করেছেন।
মিয়ানমারের কোয়াংচি বনের স্বামী ও পরিবারের সঙ্গে অজানা গন্তব্যে পা বাড়ান নয় মাসের অন্তঃসত্ত¡া জনৈক নূর বিবি। অবশেষে পাহাড় জঙ্গল ডিঙিয়ে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের উখিয়ার বালুখালী পাহাড়ে আশ্রয় নেন। অনুপ্রবেশের ১৩ দিন পর আশ্রয় নেয়া সেই পাহাড়ের চূড়ায় হঠাৎ শুরু হয় প্রসব বেদনা। এরপর নূর বিবির অন্ধকার চোখ আলো করে ভূমিষ্ঠ হয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে বালুখালী পাহাড়ের চূড়ায় সদ্য জন্ম নেয়া মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যায় প্রথমবারের মতো মা হওয়া নূর বিবিকে। তবে প্রথম মা হওয়ার আনন্দ স্পর্শ করতে পারছে না নূর বিবিকে। কারণ তার মা-বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একই সময় সবাই বাড়ি থেকে বের হলেও তারা কোথায় আছেন তা জানেন না তিনি।
একদিকে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর নির্যাতনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার লোম হর্ষক বর্ণনা, অপরদিকে সন্তান প্রসব যন্ত্রণা। উভয়ের মাঝে অসহায় অস্থির হাছিনা বেগম। পাশে ছিলেন স্বামী আর ‘জা’ মর্জিনা বেগম। তাঁদের সহযোগিতা নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ ভ‚খন্ডের নাফের কাদামাটিতে সন্তান প্রসব করেন হাছিনা। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই একমত হয়ে বলেন, মুসলমানদের উপর জুলুম, নির্যাতনের মাসে সন্তানের জন্ম হওয়ায় নাম রাখব জিহাদ হোসেন। হাছিনা বেগম বলেন, খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টি হলে কি করব এই চিন্তায় আছি।
২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছিল। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ ৮৯ জন মারা যায় বলে মিয়ানমার সরকারের ভাষ্যে জানা যায়। এরপরই রাজ্যটিতে শুরু হয় সেনা অভিযান।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী সেনা অভিযানে রাখাইনে অন্তত তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। আর প্রাণ বাঁচাতে সর্বস্ব হারিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় তিন লাখের অধিক রোহিঙ্গা। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এভাবে কোনোরকম চিকিৎসা সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমারের নো-ম্যানস ল্যান্ডে গত ১৮দিনে শতাধিক নবজাতকের জন্ম হয়েছে। এছাড়াও আশ্রয় নেয়া সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় জন্ম হয়েছে অসংখ্য শিশুর। এমনকি পারাপারের সময় নৌ-যানেও অনেকেই সন্তান প্রসব করেছেন। যাদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ