Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসল কাজ থেকে বহুদূরে সিডিএ

টাকা পায় ছালাম গালি খায় নাছির

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। নামই বলে দিচ্ছে এ সংস্থার কাজ কী। সিডিএ’র মূল কাজ হলো নগরীর পরিকল্পিত উন্নয়ন। এ উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে কিংবা এর সুফল নগরবাসী আদৌ পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে এখন নাগরিকমহলেই প্রশ্ন উঠেছে সঙ্গত কারণে। সবাই বলছেন, মহানগরী বিস্তৃত হয়েছে। উন্নয়নও হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে। তবে তার পুরোটাই হয়েছে ও হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। এরফলে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই তীব্র যানজট। কেন্দ্রীয় বাস-ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় সড়কের উপরেই টার্মিনাল স্ট্যান্ড। যত্রতত্রই নির্মিত হচ্ছে অপরিকল্পিত ভবন। সড়কের পাশে বহুতল ভবন, কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল-কলেজ; অথচ নেই পার্কিং সুবিধা। মূলত সিডিএর স্বঘোষিত ‘কর্মবীর’ আবদুচ ছালামের হাতে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সুফল নয় বরং এর কুফল ভোগ করছে নগরবাসী। পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলতে ১৯৯৫ সালে প্রণীত হয়েছিল মাস্টারপ্ল্যান। মেয়াদ শেষ হয়েছে বাস্তবায়ন হয়নি সেই মহাপরিকল্পনা। প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছর পর সিডিএ’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এখন সর্বত্রই। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসল কাজ থেকে সিডিএ এখনো অনেক দূরে। ছালাম বেশি ব্যস্ত ‘অন্য’ কাজে।
এদিকে চাটগাঁর প্রাণপ্রবাহ চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদী মরে যাচ্ছে। অবাধে গিলে খাচ্ছে দখলবাজরা। ১২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে পাহাড়-টিলা কেটে-খুঁড়ে অবাধে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। এককালের সবুজ নগরীর পাহাড়-টিলা এখন ন্যাড়া এবং ক্ষত-বিক্ষত। এখন পুকুর দীঘি জলাশয় হ্রদ ভরাট করে নির্বিচারে তৈরি হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর ভবনরাজি। আর এসব কিছুর প্রেক্ষাপটে অপরিকল্পিত মহানগরী চট্টগ্রাম ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী ও ভারসাম্যহীন হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তিত ও হতাশ হয়ে পড়েছেন সচেতন সাধারণ নাগরিকগণ। অর্ধ শতাব্দী পূর্বের মাস্টার প্ল্যান থাকলেও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই আজও। রাস্তাঘাট, সড়কগুলোর পরিকল্পিতভাবে স¤প্রসারণ নেই। এতে দুর্বিষহ নগরজীবন-যাত্রা। এমনকি ছালামের নিজ বাড়ি চান্দগাঁও, মোহরা, কালুরঘাট, কাপ্তাই রাস্তার মোড় থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এসব রুটে চলাচলকারী লাখো মানুষের কষ্ট সীমাহীন। আবাসিক এলাকাতেই নির্বিচারে ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কারখানা, গ্যারাজ, বাসস্ট্যান্ড, হাট-বাজার গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। প্রায় ৬০ লাখ নগরবাসীর জন্য অবসর ও নির্মল চিত্ত-বিনোদনের জায়গা নেই তেমন। যা আছে তা খুবই অপ্রতুল। গড়ে উঠছে না ভাল মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নবপ্রজন্মের চাহিদা পূরণের জন্য আদৌ নেই কোন বাস্তবধর্মী ও দূরদর্শী পরিকল্পনা। সবকিছু মিলিয়ে নাগরিকদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। বেড়েছে অস্বস্তি— আর অসন্তোষ।
ছালামের দিনে দিনে সিডিএ’র ‘কর্ণধার’ হয়ে ওঠা, নিজেকে ‘কর্মবীর’ ঘোষণা দিয়ে নগরজুড়ে কিছুদিন পর পর পোস্টার বিলবোর্ডে ছেয়ে দেয়ার বিরল নজির বা ‘কালচার’ চালু, এমনকি হাফ-ডজন সংখ্যকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো, তার স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার প্রশ্ন মন্ত্রী-মেয়র-এমপিসহ কাউকেই ‘থোড়াই কেয়ার না করা’ এসব নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর কথাবার্তায় আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। অনেকেই ক্ষোভ-বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, সিডিএর বিধি-বিধান মোতাবেক সিডিএ আওতাধীনে (জুরিসডিকশন) এ যাবত কী কাজ করতে পেরেছে সিডিএ তথা এর ‘কর্ণধার’ ছালাম? চট্টগ্রামের ব্যাপক এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন দূরে থাকুক; বেড়ে গেছে এসব কর্মকান্ডে ভোগান্তি। নগরী হারিয়ে ফেলছে তার অপরূপ ভূ-প্রাকৃতিক শোভা ও বৈশিষ্ট্যগুলো।
সিডিএ’র মূল কাজ পরিকল্পিত উন্নয়ন। কিন্তু চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত যা হয়েছে তার বেশিরভাগই হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া বলেন, পরিকল্পিতভাবে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা এ নগরের বাসিন্দারা সবাই বুঝতে পারেন। কারণ অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফল নগরবাসী ভোগ করছে। সিডিএ মূলত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করছে। প্ল্যানিং অথরিটি হিসেবে তাদের ভূমিকা এখনো গৌন থেকে গেছে। অর্থাৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবনার ক্ষেত্রে সিডিএ এখনো অনেক পেছনে। এতে করে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। মহানগরী বিকশিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। সাম্প্রতিককালে সিডিএ’র উদ্যোগে কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ড হলেও তার পুরোপুরি সুফল জনগণ পাচ্ছেন না। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় মহানগরীতে ক্ষণে ক্ষণে দুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।
প্রকৌশলী আলী আশরাফ মনে করেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য সিডিএ’র পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়হীনতাও দায়ী। কারণ সিডিএসহ অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের কাজে কোন সমন্বয় নেই। সিডিএ’র তদারকির অভাব যেমন রয়েছে তেমনি এ নগরবাসীও অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য কম দায়ী নয়। তিনি বলেন, ভিআইপি টাওয়ারের নিচতলায় যেখানে গাড়ি পার্কিং থাকার কথা সেখানে কমিউনিটি সেন্টার ও স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। আর এটি বছরের পর বছর টিকেও আছে। এটি দেখার দায়িত্ব সিডিএ’র। মহানগরীর আবাসিক এলাকাগুলোতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। সড়কের পাশে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। অথচ সেখানে কোন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। মহানগরীতে কেন্দ্রীয়ভাবে কোন বাস-ট্রাক টার্মিনাল এখনো হয়ে উঠেনি। সিডিএ’র মাস্টারপ্ল্যানে এসব টার্মিনালের পরিকল্পনা ছিল কিন্তু তা হয়নি। এর ফলে মহানগরীতে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানজটের কারণে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম মহানগরীর সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে মহানগরীর সুষম বিকাশ বিঘিœত হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় পানিবদ্ধতাসহ নানা সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পিত নগরায়নের মূল দায়িত্ব সিডিএ’র। কিন্তু সিডিএ পরিচালনায় যারা আছেন তারা ওইদিকাঁ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শও আমলে নিচ্ছেন না তারা। ফলে কিছু উন্নয়ন হলেও তার সুফল নগরবাসী পাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ