পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আরো ১০ হাজার টন ত্রাণ দেয়া হবে -এরদোগান
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে এবং ওআইসি’র মতো সংগঠনগুলোর সহায়তায় একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন। কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় ওআইসি সম্মেলনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এরদোগানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকে আবদুল হামিদ বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠির জন্য জাতিসংঘ অথবা ওআইসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলা যেতে পারে।’
প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। এই জনস্রোত ঘন জনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে এবং পূর্বপুরুষের ভূমিতে তাদের সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে দেশটির সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে তুরস্কের নেতার পাশাপাশি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে সম্প্রতি তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের জন্য এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান। রোহিঙ্গারা বিগত কয়েক বছর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নিচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া চলমান সহিংসতায় প্রায় ৩ লাখ শরণার্থী নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রেসিডেন্ট ওআইসি সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়ায় তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, তুরস্ক ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশে এক হাজার টন মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছে। তিনি অবিলম্বে আরো ১০ হাজার টন ত্রাণ সাহায্য পাঠাবেন বলে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য অন্যান্য দেশগুলোও যেন সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে পারে সে জন্য ইস্তাম্বুল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানান এরদোগান। বৈঠকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীতে দ্রুত এই অগ্রগতির ফলে সমাজে কাজকর্ম ও যোগাযোগ বৃদ্ধি, সময় ও দূরত্বের প্রতিবন্ধকতা দূর এবং গতি ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে একটি জাতি বদলে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে অন্যের প্রতিযোগিতাও হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হামিদ মনে করেন, ‘পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক উদ্ভাবন কাউকে পেছনে ফেলে দেয় এবং বিভাজন সৃষ্টি করে কাউকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বিজ্ঞানসম্মত জীবনের আলোকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতে একসময়ে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিতো, যার সুফল একদিন তারা ভোগ করেছে, সেই ঐতিহ্য আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি ওআইসি দেশসমূহকে গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন এবং এই কাজে নিবেদিতচিত্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনগুলো প্রয়োগ ও দ্রুত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হারানো নেতৃত্ব অর্জন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমাদের সহযোগিতা উম্মাহকে আরো বেশি শক্তিশালী ও গতিশীল করবে এবং বিশ্বে মুসলমানদের ভাবমর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি বলেন, ওআইসি দেশসমূহকে যুগপৎভাবে অবশ্যই উন্নত দেশের অগ্রগতির সঙ্গে মুসলিম গবেষক, বিজ্ঞানীদের যুক্ত করতে হবে এবং সামিল হতে হবে। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ‘দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নে পরিবর্তনের খেলা’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং ওআইসি’র প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্র নির্বাচন, ব্যবহার ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সুবিধা নেয়ার জন্য যৌথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন- ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনযাপনে সুবিধা প্রদান করেছে, যা দেশের উদীয়মান ওষুধ শিল্প ও বিকল্প ওষুধ তৈরি এবং সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের মতো হাই-টেক শিল্পে অগ্রগতির মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হামিদ বলেন, বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে উন্নত ও জলবায়ু সহনীয় জাতের শস্য, পাট ও মহিষের জীন মানচিত্র উদ্ভাবন, মহাকাশ ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরমাণু প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। আস্তানা বিজ্ঞান সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নজরবায়েভ, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওসাইমীন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও ওআইসিভুক্ত প্রায় ২০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ওআইসি সদস্যদের হস্তক্ষেপ কামনা
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওআইসি’র সদস্যদের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেছেন, নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর বারংবার অত্যাচারের ফলে তাদের অস্তিত্ব যেমন হুমকির মুখে পড়ছে এবং তেমনি বাংলাদেশকে বিপুল সংখ্যক অসহায় রোহিঙ্গার বোঝা বহনের মতো মারাত্মক সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গতকাল কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় প্যালেস অব ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)’র প্রথম ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলন’-এ ভাষণ দানকালে তিনি একথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, নিজ দেশের নাগরিকত্বসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমি আপনাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই রোহিঙ্গারা উপর্যুপরি নির্মমতা ও বাস্তুচ্যূতির শিকার। প্রেসিডেন্ট বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট বাংলাদেশের ওপর ‘সরাসরি বিরূপ প্রভাব’ সৃষ্টি করেছে। রাখাইন রাজ্যে তাদেরকে নির্মমভাবে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ফলে প্রাণ রক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী দেশে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মিয়ানমারের এই সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কাজাকস্তানের রাজধানীতে এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মুসলিম বিশ্বকে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জগতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন। সূত্র : বাসস।
তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ সংগ্রহ অভিযান
গণহত্যা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য দেশব্যাপী সহায়তা সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে তুর্কি রেড ক্রিসেন্ট। ‘বি অ্যা লাইফ ফর রাখাইন স্টেট’ শিরোনামে ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনার কথা গত শুক্রবার ঘোষণা করা হয়। সংস্থার প্রেসিডেন্ট কারীম কিনিক বলেন, যারা এখনো রাখাইনে অবস্থান করছেন আর যারা বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হয়েছেন তাদের সবার জন্য সুপেয় পানি, ওষুধ, খাবার এবং তাঁবু প্রয়োজন। রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের প্রয়োজন নিরুপণ এবং সহায়তার পদ্ধতি বের করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। সংস্থাটি ২০১২ সাল থেকে রাখাইনের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছে এবং সেখানে তাদের একটি শাখাও রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।