Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সবাইকে হত্যা কর, সবকিছু লুট কর, পুড়িয়ে দাও

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান একটি যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করে চীনে অভিযানের সময়। চীনে ‘থ্রি অল পলিসি’ বলে পরিচিত ওই কৌশল ছিল সবাইকে হত্যা করো, সব কিছু পুড়িয়ে দাও, সবকিছু লুট করো। জাপানিরা অবশ্য এই যুদ্ধকৌশলকে পুড়িয়ে ছাই করার কৌশল হিসেবে আখ্যায়িত করে। ১৯৪০ সালে শুরু হওয়া এই ‘থ্রি অল পলিসি’ পূর্ণোদমে বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৪২ সালে। ওই সময় জাপানি বাহিনী উত্তর চীনের ৫টি প্রদেশে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। প্রায় সাত দশক পর জাপানের এই কুখ্যাত যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিম স¤প্রদায়কে উৎখাতে এই সবাইকে হত্যা ও সবাইকে পুড়িয়ে দেওয়ার যুদ্ধকৌশল নিয়ে মিয়নামারের সেনাবাহিনী হত্যায় নেমেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চলমান ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে এরই মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের সহিংসতায় ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী স্থানীয়ভাবে টাটমাডো নামে পরিচিত। ব্যাংককভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিস জানান, রাখাইনে সহিংসতার এই ব্যাপক মাত্রা অনেক বিষয়ের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। রাখাইনে শুধু মুসলমানরা নয়, বার্মার বৌদ্ধদের একটি অংশও বাস করে। যাদেরকে সংখ্যালঘু হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। আর রোহিঙ্গাদের বাঙালি মুসলিম হিসেবে মনে করে মিয়ানমার। ফলে এরিয়া ক্লিয়ারেন্স অভিযান নৃশংসতা ও কাঠামোগতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কাচিন ও সান রাজ্যে এতো নৃশংসভাবে চালানো হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার আঞ্চলিক ডেপুটি ডিরেক্টর ফির রবার্টসন জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের যুদ্ধকৌশল সবাইকে মারো, সবকিছু ধ্বংস করো অবলম্বন করছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, টাটমাডো সেইসব গ্রাম ও এলাকা টার্গেট করছে যেগুলোতে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করে। অভিযানে ওই অঞ্চলের সবাইকে সাজা দেওয়া হয়। গত শুক্রবার বাংলাদেশের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে কয়েকজন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সহিংসতার বিবরণ দিতে গিয়ে রোহিঙ্গারা জানায়, রাখাইনের বৌদ্ধদের দ্বারা যে সহিংসতার শিকার হয়েছেন তারা টাটমাডো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রবার্টসন জানান, অভিযানের সময় কেউ দৌড়ালে তাকে বিদ্রোহী হিসেবে ধরে নেওয়া হয় এবং তাকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশে সেনাবাহিনী পরিচালিত হচ্ছে। পুরুষ ও কিশোরদের বিদ্রোহী হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে এবং নির্যাতন, বন্দি ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছে। প্রকাশ্যে নারীদের উলঙ্গ করে তল্লাশী চালানো হচ্ছে, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। মিয়ানমার সরকার হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে পরিস্থিতি অতিরঞ্জিত করার অভিযোগ করেছে। তবে সংগঠনগুলো জানিয়েছে, তাদের দাবি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বক্তব্য ও স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবির তথ্য অনুসারে তুলে ধরা হয়েছে। সহিংসতা কবলিত অঞ্চলে মানবাধিকার, ত্রাণ ও সংবাদকর্মীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় সরাসরি কোনও তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না। ডেভিস জানান, রাখাইনে সেনাদের যে অংশকে মোতায়েন করা হয়েছে তারা দেশটির ৩৩তম ও ৯৯তম লাইট ইনফ্যানট্রি ডিভিশনের সদস্য। টাটমাডো বিদ্রোহ দমন অভিযানের সম্মুখে এরাই রয়েছে। এরা মিয়ানমারের স্বাভাবিক সেনাদের তুলনায় নির্দয় ও যুদ্ধলিপ্সু। মানবাধিকার সম্পর্কে এদের কোনও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি, এদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়াই হয়েছে হত্যা করার জন্য। ডেভিস বলেন, এরিয়া ক্লিয়ারেন্স-র মতো অভিযানের লক্ষ্যই থাকে তাত্তি¡কভাবে বিদ্রোহীদের এলাকা থেকে সমূলে উৎপাটন করা। বাস্তবে প্রয়োগের সময় তা পুরো এলাকা পুড়িয়ে দেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। রবার্টসন দাবি করেছেন, রাখাইনে সহিংস অভিযান শুধু তখনই বন্ধ হতে পারে টাটমাডো কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির কর্মকর্তারা চাইলে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যা ইচ্ছে তা করতে পারে এই অবস্থান যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ এই সহিংসতা বন্ধের কোনও সুযোগ নেই। চলমান এই সহিংসতার বিষয়ে নীরব রয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং লাইং। শুধু ১ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছিলেন, টাটমাডো রাখাইনের বিদ্রোহীদের কাছে অঞ্চল হারানোর বিষয়টি কোনওভাবেই মেনে নেবে না। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কারণ হিসেবে ডেভিস বলেন, টাটমাডো কয়েক দশক ধরে ছোটখাটো বিদ্রোহ দমনে অভিযান চালিয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ওই সময়গুলোতে তাদের নৃশংসতার কোনও বিচার না হওয়ার ফলে সেনারা আরও বেশি আগ্রাসী ও নৃশংস হয়ে উঠেছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।



 

Show all comments
  • Shyikhat Hasan Rahim ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:১৫ পিএম says : 0
    Allah tomi hafajot koro. amin
    Total Reply(0) Reply
  • Ibrahim Ali ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:২৬ পিএম says : 0
    হায়রে মানবতা
    Total Reply(0) Reply
  • জীবন ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:২৯ পিএম says : 0
    পাক হানাদারকে হার মানিয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Noman Reza ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:৪৫ পিএম says : 0
    এই বর্বর হত্যাকান্ডের বিচার আল্লাহ পাক করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Arafat ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:১১ পিএম says : 0
    ওদের চরম মূল্য দিতে হবে, মুসলিম এর রক্ত বৃথা যাবে না।।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mahade Hassan ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:১৩ পিএম says : 0
    এদেরকেও আল্লাহ পুড়িয়ে মারবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আতিক ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:৩৬ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অত্যাচার কি করে সইতেছে মুসলমান দেশ গুলো???!!!মুসলিম দেশগুলোর প্রতি ও বিশ্বের মুসলিম সমাজের প্রতি আমাদের একটাই দাবি আপনারা এসব রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাঁচান ওইসকল নরপষুর হাত থেকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kobita Akter ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:৪৩ পিএম says : 0
    আন্তর্জাতিক আদালতে সুচির বিচার হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Arman ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৪:৪৪ পিএম says : 0
    বিশ্বমানব ঐক্য গড়ো রোহিঙ্গাহত্যা বন্ধ করো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ