Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ল্যান্ড মাইন পুঁতে রেখেছে অ্যামনেস্টি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী স্থল বোমা বা ল্যান্ড মাইন পেতে রাখার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বৃটেনের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, এভাবে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ স্থাল বোমা পেতে রেখে রাখাইনের হাজার হাজার মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
পলায়নরত রোহিঙ্গাদের অনেকে এতে মারা যাচ্ছেন। শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। একজন নিহত হয়েছেন। ৯ সেপ্টেম্বর অম্যানেস্টির ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, অ্যামনেস্টি নিশ্চিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মানব বিরোধী আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ স্থল বোমা পেতে রেখেছে মিয়ামনারের সেনাবাহিনী। এতে দুটি শিশুসহ কমপক্ষে তিনজন মারাত্মক আহত হয়েছে। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে একজন।
এতে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাতকার ও অস্ত্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে অ্যামনেস্টি এ বিষয়টি প্রামাণ্য আকারে দেখতে পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাখাইন থেকে সংকীর্ণ পথে এসব স্থল বোমা পেতে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায় গত ১৫ দিনে কমপক্ষে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রয়েছেন বর্তমানে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান। তিনি বলেছেন, রাখাইনে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পলানোর পথে ভয়ঙ্কর অস্ত্র পুঁতে রেখেছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন অকল্পনীয় ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তর কোরিয়া, সিরিয়ার মতো বিশ্বের অল্প কিছু দেশের মতো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে এই স্থল বোমা রয়েছে। পলায়নরত মানুষ অথবা যারা এরই মধ্যে পালিয়ে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে এমন অমানবিক চর্চা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইনের তাউং পাইও ওয়াল এলাকায় বেশ কিছু স্থল বোমা পাওয়া গেছে। এ এলাকা থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বহু মানুষ এই সীমান্ত দিয়ে আসা যাওয়া করেন। এখান দিয়ে অনেক জিনিস আদান প্রদান হয়। ৩ সেপ্টেম্বর ৫০ বছর উত্তীর্ণ একজন নারী বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে তাউং পাইও লেট ওয়াল অতিক্রম করেন। যাওয়ার পথে তিনি পুঁতে রাখা একটি স্থল বোমার ওপর পা রাখেন। এতে তার হাঁটু থেকে পা উড়ে যায়। তাকে বাংলাদেশের এক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার এক আত্মীয় কলমা (২০) অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, গোসলের জন্য পানি আনতে আমার শাশুড়ি আমাদের গ্রামে গিয়েছিলেন। এর কয়েক মিনিট পরেই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। আমি শুনতে পাই কেউ একজন স্থল বোমার ওপর পা রেখেছেন। পরে জানতে পারি তিনি আমার শাশুড়ি। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তারা দেখতে পেয়েছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত প্রহরীরা মিয়ানমার সীমান্তে স্থল বোমা পেতে রাখতে দেখতে পেয়েছেন। বিস্ফোরণের পরে পা উড়ে যাওয়া ওই নারীর মোবাইলে তোলা ছবির সত্যতা যাচাই করতে পেরেছে অ্যামনেস্টি। এতে বোঝা যায়, এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে শক্তিশালী কোনো ডিভাইস দিয়ে, যা মাটির নিচে পেতে রাখা হয়েছে স্থল বোমার সঙ্গে। অন্য গ্রামবাসী একই এলাকায় আরো স্থল বোমা দেখতে পেয়েছে। অ্যামনেস্টিও এর যথার্থতা খুঁজে পেয়েছে। এ সপ্তাহে সীমান্ত অতিক্রমণের পথে সন্দেহজনক চারটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। সীমান্ত অতিক্রমের ওই পথের কাছেই আত্মগোপন করে ছিলেন এমন একজন রোহিঙ্গা পুরুষ বলেছেন, তিনি ও অন্যরা ওই একই এলাকায় কমপক্ষে ৬টি স্থল বোমা দেখতে পেয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এর দুটি তারা উপড়ে ফেলে দিয়েছেন অন্যদের রক্ষা করতে। কমপক্ষে একটি স্থলবোমা দেখে মনে হচ্ছে সেটি পিএমএন-১ গোত্রের। এ বছর জুনে মিয়ানমারের সেনবাহিনী, কাচিন ও শান রাজ্যের সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে লড়াইয়ে স্থল বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে তা ডকুমেন্ট হিসেবে তুলে ধরে অ্যামনেস্টি। ওদিকে অস্ট্রেলিয়া সরকার মিয়ানমারের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। অস্ত্র সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া ও ইসরাইল, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এ বিষয়ে।

 



 

Show all comments
  • মনির ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:১৪ পিএম says : 0
    ইতোমধ্যেই কয়েকটি বিস্ফোরিত হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmad Hoseen ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪৮ পিএম says : 0
    এ অবস্থায় জাতিসংঙ্গের উচিত নেটো সেনা প্রেরন করা ৷ মানবতা ও মানবাধিকার রক্ষায় সবাইকে এক যোগে কাজ করা ৷মানুষ মানুষের জন্য ৷এটাই হওয়া উচিত ৷
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Hossan ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:০৮ পিএম says : 0
    ইসলাম শান্তির ধর্ম আর সেই শান্তির ধর্মের মানুষ গুলোর ঈমানি শক্তি দূর্বল হয়ে গেছে এই জন্যই আজ মুসলমানরা মার খাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ