Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সঙ্কট উগ্রবাদীদের সম্ভাব্য হাতিয়ার হতে পারে

| প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভয়েস অব আমেরিকা : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে যখন হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তখন বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে এবং তা সমাধানের ব্যবস্থা না নিলে বিদেশী জঙ্গিদের যোদ্ধা সংগ্রহের ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। পাকিস্তান ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা বিশ্লেষক হাসান আসকারি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ভিত্তিক কিছু জঙ্গি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এ পর্যন্ত মিয়ানমারে আল-কায়দা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উপস্থিতির কোনো নিরেট প্রমাণ মেলেনি যদিও আমরা রোহিঙ্গা বিষয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করে আইএসের বিবৃতি দেখেছি।
তিনি বলেন, তবে এই গোলযোগময় পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বা আরো খারাপ হলে মিয়ানমারে জঙ্গি গ্রুপ বা সন্ত্রাসী আন্দোলনের সক্রিয় হয়ে ওঠা ও সেখানে তাদের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নাকচ করা যায় না।
উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ও দেশের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বাড়িঘর ও গ্রাম ধ্বংসের প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা সেখান থেকে পালিয়ে আসছে। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) শুক্রবার বলে, গত দু’সপ্তাহে আনুমানিক ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য প্রবেশ করেছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র দুনিয়া আসলাম খান এ সপ্তাহে জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মিয়ানমারে অব্যাহত সংঘাতের বিষয়ে ও নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছার চেষ্টা করতে গিয়ে বেসামরিক লোকদের মৃত্যুর খবরে ইউএনএইচসিআর ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতা বৃদ্ধির মূল কারণ সমাধানের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে যাতে লোকজন আর পালাতে বাধ্য না হয় এবং তারা নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে তাদের বাড়িঘরে ফিরতে পারে।
সর্বশেষ সহিংসতার শুরু ২৫ আগস্ট যখন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা কয়েকটি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। রোহিঙ্গারা বলেছে , এটা ছিল তাদের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠিকে নিপীড়ন থেকে রক্ষার চেষ্টা।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও দেশের কার্যত নেতা অং সান সু কি এবং মিয়ানমারে দু’দিন সফরকারী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উভয়েই রোহিঙ্গা সহিংসতার জন্য জঙ্গি গ্রæপগুলোকে দায়ী করেছেন।
এ সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য সু কি চাপের মধ্যে রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি এ সমস্যাকে মিথ্যা অপপ্রচারের পাহাড় বলে আখ্যায়িত করে বিশ^ব্যাপী সমালোচনার সম্মুখীন হন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, যে কারণে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সে পরিস্থিতিকে সু কি যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন তা সত্য হতে পারে না।
উগ্রবাদের ভীতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে রাখাইনে যেখানে উগ্রবাদী গ্রুপগুলোর তৎপরতা সনাক্ত করা কঠিন সেখানে যুক্তিসম্মত উদ্বেগ রয়েছে যে বর্তমান সংকট যদি নিরসন করা না হয় তাহলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ নিপীড়িতদের দুর্দশার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে যা দেশে জঙ্গিবাদের পথকে প্রশস্ত করবে।
জানা গেছে, আল কায়দা ইন দি ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএস) বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় তৎপর। বাংলাদেশ ইসলামিক স্টেটের সহযোগী গ্রুপগুলোসহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী গ্রুপের নিকট থেকে অভ্যন্তরীণ হুমকির সম্মুখীন।
এ অঞ্চলে এ সব গ্রুপের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে তারা বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস দমন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিশ্লেষক ক্রিস বø্যাকবার্ন বলেন, গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার কথা স্বীকার করায় বোঝা যায় যে জেএমবি (নিষিদ্ধ গ্রুপ জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ) ও মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিশে^র সর্বাপেক্ষা নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের একটি বলে বিবেচনা করা হয়। বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমার যা বার্মা নামেও পরিচিত, রোহিঙ্গাদের বর্মী বলে বিবেচনা করে ন্ াতারা যুক্তি দেখায় যে সংখ্যালঘু গ্রæপটি বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তু।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বলে, তারা বর্মী।
মুসলিম বিশে^ প্রতিবাদ
রোহিঙ্গা সংকট বহু মুসলিম দেশে মিয়ানমার বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গা সহানুভূতিশীলরা কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচালিত নিষ্ঠুরতার ফটোগ্রাফ ও ভিডিও শেয়ার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র রাখাইনে পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মহিলা মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পাইকারি ভাবে আগুনে পোড়ানো এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বেসামরিক লোকদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতাসহ মানবাধিকার লংঘনের গুরুতর অভিযোগের পর স্থানীয় জনগণের উল্লেখযোগ্য রকম বাস্তুহীন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।



 

Show all comments
  • Afzal ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৯:১০ এএম says : 0
    মনে হচ্ছে বড় এক যুদ্দ্বের পূর্বাভাষ ৷
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ