পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কক্সবাজার ব্যুরো এবং টেকনাফ উপজেলা সংবাদদাতা : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সেনাবাহিনী ও নাডালা বাহিনী জ্বালাও পোড়াওসহ বিভিন্ন ধরনের নিযার্তন ও হত্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রাণে বাঁচতে গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছেছে। জা্তসিংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-কে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এই খবর জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১ লাখ ৬৪। তবে নতুন করে বেশকিছু শরণার্থী দলের খোঁজ পেয়ে একদিনের ব্যবধানে অনুপ্রবেশকারীর নতুন সংখ্যা হাজির করলো সংস্থাটি। এ সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হয়েছে। গতকাল জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র ভিভিয়ান তান বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে নতুন তথ্য জানান। ভিভিয়ান তান বলেন, ‘গত ২৪ ঘন্টায় ঠিক কত জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে পূর্ববর্তী শরণার্থী বিষয়ক পরিসংখ্যানে তা সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। সীমান্ত অঞ্চলে আমরা আরও কিছু শরণার্থীর সন্ধান পেয়েছি। পূর্বে তাদের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।’ শরণার্থীর এ বিপুল সংখ্যাকে উদ্বেগজনক আখ্যা দেন তিনি।
এদিকে, রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে একদিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় মন্তব্য করতে গিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন, আনান কমিশনের প্রস্তাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতের যে সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন তিনি। তবে কমিশনের প্রস্তাবে রাখাইন পরিস্থিতির সংকট উত্তরণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের জোরালো আহŸান জানানো হলেও সু চি এ ব্যাপারে কিছু বলেননি।
অন্যদিকে বৈধ কাগজপত্রহীন রোহিঙ্গাদের ‘নাগরিকত্ব’ প্রশ্নে নেতিবাচক অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের দেশে ফিরতে গেলে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকারন্তরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বৈধ কাগজপত্রহীন অন্তত ২ লাখ ৭০ হাজারখ রোহিঙ্গার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন তিনি। কেননা মিয়ানমার কখনও তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি। তাদের কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই।
ওদিকে, মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং গতকাল শুক্রবার বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তাÐবে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গার সংখ্যাই বেশি। মিয়ানমার সরকারের দেয়া নিহতের সংখ্যার চেয়ে তা প্রায় দ্বিগুণের বেশি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং দেশটিতে অতীত সহিংসতার স্বরূপ বিশ্লেষণ করে লি বলেন, রাখাইনে হয়ত এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। উভয় পক্ষের মানুষ মারা গেলেও রোহিঙ্গা মুসলমান অনেক বেশি নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে দুঃখজনকভাবে তাদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হচ্ছে না। শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চির প্রতি হত্যাকাÐ ও নির্যাতন বন্ধ করার আহŸান জানান লি। রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনকে দুর্যোগ হিসেবেও বর্ণনা করেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হিসেবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া হয় না যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারে বসবাস করার পরও। উল্টো তাদের গণহত্যা, ধর্ষণসহ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সূত্র : ফার্স্ট পোস্ট
এদিকে, সার্কভূক্ত দেশগুলোর অভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ‘সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের নেতারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ উগ্রপন্থীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসা রোহিঙ্গাদের দূর্দশা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলা ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় স্থাপিত রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকটি ক্যাম্প পরিদর্শনে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবেদ আলী।
অধ্যাপক মাওলানা আবেদ আলীর নেতৃত্বে একটি পর্যবেক্ষক দল বুধবার ও বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে ১০টি প্রস্তাবণাও উত্থাপন করা হয়েছে।
প্রস্তাবণা গুলো হলো, (১) শুরুতেই মানবিক সহায়তার পাশাপাশি দ্রæততর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের এমন একটি ডাটাবেসের অধীনে নিয়ে আসতে হবে যাতে চাহিবা মাত্রই তাদের চিহ্নিত করা যায়। এমন একটি প্রস্তাবণা হলো, রোহিঙ্গাদের আঙ্গুলের চাপযুক্ত (ফিঙ্গার প্রিন্ট) ‘রোহিঙ্গা ডাটাবেস’ তৈরি। এটি করা গেলে রোহিঙ্গারা কখনোই বাংলাদেশিদের সাথে মিশে যেতে পারবে না। (২) রোহিঙ্গাদের শুধু মানবিক সহায়তা দিয়ে বছরের পর বছর বাংলাদেশে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার পক্ষে আমরা নই। আমরা মনে করি, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিথযশা সাবেক কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে একটি আলাদা কমিটি গঠন করে মিয়ানমার ও বিশ্ব দরবারে উন্নত লবি’র মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। (৩) যে সকল বাংলাদেশি দুস্কৃতিকারি নির্যাতিত হয়ে এই দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সম্পদ লুট, প্রতারণা, নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। (৪) মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ এবং তাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। (৫) রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার ও তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে হবে। (৬) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (৭) বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গারা যাতে কোন ধরণের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে এবং অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন দল ও এনজিও সংগঠনের প্রতি প্রশাসনের কড়া নজরদারি রাখতে হবে। (৮) রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মিয়ানমার সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে প্রতিকার ও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আল্টিমেটাম দিতে হবে। (৯) বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ সকল সংখ্যালঘুদের উপর যে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই বিষয়ে ধর্মীয় আলেম-ওলামাসহ সমাজের সচেতন নাগরিকদের সজাগ থাকতে হবে ও (১০) সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের একটি পর্যবেক্ষণ টিম আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনের অনুমতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।