Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিবাদে উত্তাল মুসলিম বিশ্ব

আরাকানে মানবিক বিপর্যয়

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিদেশী ক‚টনীতিকদের রহস্যজনক নীরবতা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞে আরাকান রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। আরাকানের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। নারী শিশু ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। শত শত লাশ নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। ভয়াবহ এই দৃশ্য ঢাকাসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। টিভির সচিত্র খবরে বিভৎস দৃশ্য দেখে প্রতিবাদে উত্তাল মুসলিম বিশ্ব। সারাবিশ্বে এক আওয়াজ রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা বন্ধ করো! আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ দিয়ে মিয়ানমারের সুচিকে একঘরে করো!! গতকালও প্রায় অর্ধশত দেশের বড় বড় শহরে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে লাখ লাখ জনতা বিক্ষোভ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটু, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ বিশ্বের অনেক বরেণ্য ব্যাক্তি ও রাষ্ট্র প্রধান রোহিঙ্গা নিধন বন্ধের দাবিতে সোচ্চার। রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ২২ জন নোবেল বিজয়ী সুচির প্রতি ঘৃর্ণা প্রকাশ করেছেন। অথচ ঢাকায় কর্মরত বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কুটনীতিকরা ঘুমিয়ে রয়েছেন। রোহিঙ্গারা যদি ইসরায়েলের নাগরিক এবং ধর্মে ইহুদি হতো এবং তাদের ওপর এমন হত্যাযজ্ঞ হতো তাহলে কি ঢাকায় কর্মরত প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা ঘুমিয়ে থাকতেন? রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে যখন বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় তখন এনটিভি নামের ঢাকার একটি চ্যানেলে প্রতিদিন ধারাবাহিক ভাবে আনন্দ ফূর্তির অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে ব্যস্ত থাকতে পারতেন? ঢাকায় কর্মরত তথাকথিত মানবতা রক্ষার এজেন্সিধারী প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা ঘুমিয়ে থাকলেও জুম্মার নামাজের পর গতকাল ঢাকা কার্যত মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে শত শত মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে মুসুল্লিরা বের হন। মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসুচী, সেমিনার সিম্পোজিয়ামও হয়েছে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে। সারাদেশের চিত্র ছিল অভিন্ন।
নাফ নদের পাড় ফোরাতের কারবালার রুপ ধারণ করেছে; নরেন্দ্র মোদী তখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের হোতা অং সান সুচির পাশে থাকার ঘোষণা দেন। অথচ তার দেশ ভারতের পশ্চিবঙ্গের কোলকাতা, ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, আগরতলাসহ প্রায় ১০টি বড় শহরে রোহিঙ্গা নিধনের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। মোদীকে খুনি সুচির দোসর অবিহিত করে কোলকাতা বিক্ষোভকারী মুসলিম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নেতারা মানবতা বিরোধী অবস্থান নেয়ায় মোদীকে ধিক্কার দেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা শহর এমনকি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারগুলোতে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে লাখ লাখ মানুষ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জুম্মার নামাজ শেষে মিছিলের পর সমাবেশে ইসলামী ধারার দলগুলো ঘোষণা দিয়েছে যদি রোহিঙ্গাদের হত্যা বন্ধ না হয় এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া না হলে রাখাইন রাজ্য দখল করা হবে। তারা জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারীরও দাবীতে আন্তর্জাতিক গণমত তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, দিনাজপুর, পাবনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নাটোরসহ প্রায় সব জেলা শহরে জুম্মার নামাজের পর শত শত মসজিদের মুসুল্লিরা বিক্ষোভ করেন। তারা রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সুচির বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। কোথাও কোথাও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে দ্বিমুখী নীতি পরিহার করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ইস্যুটি জাতিসংঘে জোড়ালো ভাবে তুলে ধরার দাবি জানানো হয়। কয়েকটি দলও সংগঠন একই দাবিতে ঢাকাস্থা মিয়ানমার দূতাবাস ঘেড়াওসহ রোডমার্চ, লংমার্চের কর্মসূচি দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়; গতকাল বিশ্বের দেশে দেশে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।
রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধের দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে চেচনিয়ায় গত সাপ্তাহে। প্রায় ১২ লাখ লোকের বিক্ষোভ সমাবেশে গণহত্যার অপরাধে সুচির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়। রাশিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধের দাবিতে। কানাডার রাজধানীতে লাখ লাখ লোক রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মালয়েশিয়ার ও ইন্দোনেশিয়ার শহরে শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। ইরান, ব্রæনাই, কাতার, তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, থাইল্যাÐ, নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যপক বিক্ষোভ হয় রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে। সউদী সরকার এখনো নীরবতা পালন করলেও সে দেশের বেশ কয়েকটি শহরের মানুষ নানা ভাবে রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যার প্রতিবাদ করছেন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে অস্ট্রেলিয়ার রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের সদস্যরাসহ দেশটির মুসলিমরা। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগের বাইরে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক হামলার বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহŸান জানানো হয়। অষ্ট্রেয়া, রুমানিয়া, মিশররে বিক্ষোভ করেছে মানুষ রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গাদের হত্যা করে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত অং সান সুচির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান।
রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরণের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপ। দেশটি ঘোষণা দিয়েছে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরণের ব্যবসা মিয়ানমারের সঙ্গে করা হবে না। একই কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের প্রস্তাব দিয়েছে কুয়েত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান নৃশংসতা গণহত্যা হিসেবে অবিহিত করছেন কুয়েতের সংসদ সদস্যের একটি দল। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বর্বোরোচিত হত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের ‘লজ্জাজনক নিরবতা’র বলে মনে করছে দেশটির সংসদ। তারা বলেছেন এ অবস্থা চলতে থাকলে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরণের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হবে। কুয়েতের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্যরা মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলো এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহŸান জানায়। রাখাইনে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর জন্য প্যাকেজ প্রস্তাব করছে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট। আজ (শনিবার) ইরানের ত্রাণবাহী বিমান বাংলাদেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। শুকনো খাবার, ওষুধ ও কাপড় থাকছে ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে। ত্রাণ বিতরণের সব আয়োজনও সম্পন্ন করেছে ইরান দূতাবাস। রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়ার আহŸান জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা চলছে তার পক্ষে অবস্থান নিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। তিনি মিয়ানমারের মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগে আমাদেরকে কিছু করা উচিত।
মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স সাংবাদিকদের জানান, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে চলমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন দূতাবাস নিবিড়ভাবে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। রাখাইন রাজ্যের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে চলেছি। দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায়েও আমরা প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের প্রতি যেন মানবিক আচরণ করা হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ের এরদোগান রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন ইস্যু জাতিসংঘের অধিবেশনে উত্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরণের সহায়তার ঘোষণা দেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে ফোন করে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ দেন এবং অং সান সুচিতে ফোন করে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেন। শুধু তাই নয় তাঁর নির্দেশে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান এবং দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। তারা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ নিলে তুরস্ক তাতে সমর্থন দেবে বলে জানিয়ে দেন। স্বেত ভাল্লূকের দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও মায়ানমারে সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা যে কোনো সহিংসতার বিরোধী এবং মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির সরকারের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি।
মিয়ানমারের রাখাইনে ২৫ অক্টোবর রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যাযজ্ঞ শুরু হলেএ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ আর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে সহায়-সম্বল হারানো এসব ‘দেশহীন’ শরণার্থীর ভাষ্যে। জাতিসংঘের হিসেব এই শরণার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ অতিক্রম করতে পারে। মালয়েশিয়া ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণের মুখে জীবন বাঁচাতে যদি কোনো রোহিঙ্গা মুসলমান পরিবার বিপদসঙ্কুল সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ার উপকূলে পৌঁছায় তাহলে তাদের আশ্রয় দেওয়া হবে। হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ায় শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে আন্দামান সাগর হয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়ায় উপকূলের দিকে যাচ্ছে। আগে থেকেই এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী মালয়েশিয়ায় আশ্রয়ে রয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কোলকাতার স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন, জামায়াতে ইসলামী হিন্দসহ কয়েকটি মুসলিম ও মানবাধিকার সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল করে। সেখানে বক্তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তারা মোদীকে মানবতাবিরোধী নেতা হিসেবে অবিহিত করে বলেন, মানুষ মারার কারখানা চলছে রাখাইনে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী সেদেশে গেলেন, ডিনার করলেন, নানা চুক্তি সই করলেন, অথচ তিনি ওই ঘটনার কোনও প্রতিবাদ করলেন না! আমরা সবাই আশা করেছিলাম তিনি হয়তো কিছু বলবেন। কিন্তু তিনি যা করলেন তাতে আমরা লজ্জিত। সুচিকে উদ্দেশ্য করে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটু বলেছেন, বার্ধক্য আমাকে গ্রাস করেছে, আমি এখন জরাগ্রস্ত। তোমার দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের গভীর সঙ্কটে সেই নীরবতা আমি ভাঙছি। হে আমার ভগ্নি: মিয়ানমারের রাজনৈতিক ক্ষমতার শিখরে পৌঁছানোই যদি তোমার নীরবতার কারণ হয়ে থাকে, তার জন্য সত্যিই বড় বেশি দাম দিতে হচ্ছে। তুমি ন্যায়বিচারের পক্ষে মুখ খোল, মানবতার পক্ষে কথা বল।
রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে গোটা বিশ্ব যখন উত্তাল; তখন ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকরা নীরব। বাংলাদেশের কোথাও সংখ্যা লঘু নির্যাতনের খবর পেলেই বিদেশী কূটনীতিকরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সরেজমিন তদন্ত করে সে রিপোর্ট নিজ দেশে পাঠানোর পাশাপাশি ফলাও করে প্রচার করেন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। পাহাড়ে শান্তি রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও একই কাÐ করেন ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকরা। তিল ধরণের ঘটনাকে তাল বানিয়ে প্রচার করে নিজেদের মানবতার পক্ষ্যে শক্তি হিসেবে জাহির করেন। মিয়ানমারের রাখাইনের হত্যাযজ্ঞে সবকিছু হারিয়ে জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসছে। ক্ষুধা-তৃষনায় কাতর রোহিঙ্গা শিশু নারীরা ধর্ষণের বণর্না দিচ্ছেন। শরণার্থীদের দূর্বিসহ পথ যাত্রার খবর এবং দৃশ্য মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। লোমহর্ষক এ খবর ও দৃশ্য দেখেও ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকরা নীরব কেন? বিদেশী কূটনীতিকরা কি মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের মাধ্যমে বিশ্বে আরেকটি ‘¯্রেেব্রনিয়ার গণহত্যা’ প্রত্যক্ষের জন্য অপেক্ষা করছেন? উল্লেখ বর্তমানে জাতিসংঘের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল ¯্রেেব্রনিয়ায়’ বসনিয়ার সর্ব বাহিনী ৮ হাজার মুসলিম নারী-পুরুষকে হত্যা করে। ¯্রেেব্রনিয়ার গণহত্যার মতোই আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা চালাচ্ছে মিয়ানমারের সুচির বাহিনী। আল জাজিরা খবরে বলা হয় গত এক সাপ্তাহে প্রায় এক হাজার নারী পুরুষকে হত্যা করেছে বর্মী বাহিনী। তারপরও বিদেশী কূটনীতিকদের নীরবতা কী রহস্যজনক নয়? ##



 

Show all comments
  • হাফিজ সেলিম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪৬ এএম says : 0
    অংসান সূচীর শান্তি নোবেল প্রত্যাহার করে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmad Anam ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২১ পিএম says : 0
    আফসোস! এটাই কি ছিল জাতিসংঘের কাজ? তাইলে শান্তিরক্ষী বাহিনী কেন গঠন করা হল?
    Total Reply(0) Reply
  • Baktair Hossen ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 0
    মুসলমান হওয়াত এইটা করেছেন ।অন্য কোন ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতো মানবতার কথা বলতেন ।বিমান হামলা করত আরও কতকি ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:০৫ পিএম says : 0
    আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারকে একটা শিক্ষাও দেয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Mizan Ali ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:১০ পিএম says : 0
    Allah tumi tader hefazot koro
    Total Reply(0) Reply
  • Jannatul Ferdaus ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:১১ পিএম says : 0
    আমরা মুসলমান,ওরাও মুসলমান বার্মার রোহিঙ্গা,ওরা অসহায়, নির্যাতিত,ওদের এই সংকট বিপদের এই মুহুর্তে এক মুসলমান আরেক মুসলমান কে আশ্রয় দেওয়া এক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:১২ পিএম says : 0
    এখন আর প্রতিবাদের সময় নেই এখন প্রয়োজন পদক্ষেপের।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Bokhtear Akhand ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:২০ পিএম says : 0
    আমরা হয়তোবা অত্যাচারিদেরকে রুখতে পারব না কিন্তু নির্যাতিত এই কয়েক লক্ষ মানুষকে আশ্রয় তো দিতে পারব।আমরা প্রত্যেকে যদি একটি করে রোহিংগা পরিবারের দায়িত্ব নেই তাহলে হয়তোবা এই সমস্যার সমাধান অতি সহজেই হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • S R Monirul Islam ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:২৩ পিএম says : 0
    এতো মানববন্ধন কি আর আজ বিশ্বের দরবারে দেখা যায়না নাকি দেখা গিয়েও দেখছে না বিশ্বের মানুষ। হাজারো মানুষের আর্তনাদ আর চিৎকার কি বিশ্বের বিবেক কে হানা দেয় না।আজ সত্যি বলতে হচ্ছে কি করছে জাতিসংঘ আর বিভিন্ন সংস্থা,কি করছে বিশ্বের মানুষ।
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:২৫ পিএম says : 0
    আজ মুসলিমরা দলে দলে বিভক্ত আর কাফেররা মুসলিম নির্যাতনে ঐক্যবদ্ধ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ