পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান
তুরস্কের ফাস্ট লেডি এমিনি এরদোগান কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বলেছেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি তুরস্কের হাত প্রসারিত থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে তুরস্ক মিয়ানমারে এই গণহত্যা বন্ধে ও রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা জানান। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আরাকানের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান।
রোহিঙ্গাদের অবস্থা পরিদর্শন করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান। দুপুরে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ৪০ মিনিট সময় কাটিয়েছেন। এ সময় তিনি মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কান্না করেন তুরস্কের এই ফার্স্টলেডি। কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর জানান, তুরস্কের ফার্স্টলেডি রোহিঙ্গা বস্তিতে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমিনি এরদোগানের কাছে নিজেদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে রোহিঙ্গারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকে তার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুপুর ১২টায় উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে যান তুরস্কের ফার্স্টলেডি। এরপর মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গা নারীদের কাছ থেকে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন। দুঃখ দুর্দশার সময়ে ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোয়ানকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতা রোহিঙ্গারা। এ সময় উপস্থিত রোহিঙ্গাসহ উপস্থিদের চোখে পানি টলমল করছিল। আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় চারপাশে।
বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে নির্যাতিত নিপীড়িত ও স্টেটলেস বলে খ্যাত মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানরা। গত দু’সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার সেনা-পুলিশ বাহিনী সেখানে চালিয়ে আসছে জঘন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যা।
সে হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের অবস্থা দেখতে এবং তাদের সহায়তা করতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান গতকাল কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত ক্যাভুফোগলুও। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন।
টানা দেড় ঘণ্টার এই পরিদর্শন শেষে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই মানবিক বিপর্যয় থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে তুরস্ক বরাবর বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এসময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুফোগলু বলেন, রোহিঙ্গারা অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যা করছে সেজন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। তুরস্ক রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ভবিষ্যতেও এ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন শেষে তারা বিকাল ৩টার দিকে বিমানযোগে ঢাকায় ফিরে আসেন।
আরাকানে মিয়ানমার বাহিনীর গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য তুরস্কই প্রথম কোন দেশ রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলেছে এবং তাদের সাহয্যে পাশে এসে দাড়িঁয়েছে। এতে করে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা যেমন সাহস পেয়েছে তেমনিভাবে গোটা মুসলিম বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সোচ্চার হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
এর আগে গতকাল ভোর রাত ৩টায় তুরস্কের ফার্স্ট লেডি তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে একটি নিজস্ব বিমান হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে এমিনি এরদোগানকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
মিয়ানমারে আরাকান (রাখাইন) রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডবিøউএফপি। নিহতের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি হবে বলে জানা গেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। তবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন।
এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর জরুরি সহায়তা দিতে ১০ হাজার টন ত্রাণ পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তাই ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা স্বচক্ষে পরিদর্শনে এসেছেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা পরিদর্শন করতে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি তুরস্কের একটি বিশেষ বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়ক পথে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান তিনি। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত কাভাসোগলু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার সঙ্গে রয়েছেন। তুরস্কের ফাস্ট লেডি এমিনি উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে পৌঁছান। এসময় ক্যাম্পের দেশী-বিদেশী কর্মকতারা স্বাগত জানান এমিনি এরদোগানকে।
এদিকে কক্সবাজার থেকে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান-এর উখিয়া-টেকনাফের যাতায়াত পথে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রশাসন। একইভাবে তাঁর পরিদর্শন এলাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তুর্কি ফার্স্ট লেডির আগমনকে স্বাগত জানিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সড়কগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত রাখেন স্থানীয় প্রশাসন।
একইভাবে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তুরস্কের একটি জাহাজ ত্রাণ নিয়ে মিয়ানমার পৌঁছেছে বলেও জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তুর্কি কো-অপারেশন এন্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সির বরাত দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ পর্যবেক্ষণের ব্রিটিশ সংস্থা মিডল ইস্ট মনিটর। গত বুধবার এক হাজার টন চাল, শুকনা মাছ ও কাপড় দিয়ে মিয়ানমারে পৌঁছায় জাহাজটি। রাখাইন রাজ্যের সোশ্যাল সার্ভিস মন্ত্রণালয়কে এই ত্রাণগুলো তুলে দেয় তারা।
সামরিক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে এই ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার রাখাইন রাজ্যের তুর্কি ওই জাহাজকে ত্রাণ সরবরাহে অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের আলাপের পর এই অনুমতি পাওয়া যায়। এতে করে প্রথম বিদেশি সহায়তা হিসেবে সেখানে পৌঁছেছে তুরস্ক।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরে আবারো মিয়ানমার সেনাদের গুলি
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে জানান, বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে আবারো মিয়ানমার সেনাবহিনীর গুলি বর্ষণ করেছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া সীমান্তে গত বুধবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে। এসময় মিয়ানমার সেনাদের ছোড়া কিছু তাজা বুলেট নাফ নদী পেরিয়ে এপারের উলুবনিয়া গ্রামে এসে পড়লে সীমান্ত এলাকায় এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক দেখা দেয়।
উক্ত এলাকার ইউপি সদস্য হাজী জালাল আহমদ জানান, গত বুধবার দুপুরে হঠাৎ ব্রাশ ফায়ারের শব্দ শোনা যায়। পরবর্তীতে জানা গেছে, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করছিল। তবে এতে বাংলাদেশী কোন নাগরিক আহত হয়নি। অনেকে মিয়ানমার সেনাদের ছোড়া বুলেট সংগ্রহ করে রেখেছেন বলে তিনি জানান। এই ঘটনার পর বিজিবি কড়া প্রতিবাদ জনালেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপি অনাহুতভাবে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে বাংলাদেশ সীমান্ত লক্ষ্য করে। এসময় একটি গুলি তুমব্রু উত্তর পাড়ার আব্দুল করিম সওদাগরের বাড়ির টিনের চালে আঘাত করেছিল। এতে স্থানীয় বাজার ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেছিল। স্থানীয় জনগণ কয়েকটি গুলি উদ্ধার করে বিজিবি ক্যাম্পে জমা দিয়েচিল।
বারবার এভাবে সীমান্ত ক্রস করে লোকালয়ে মিয়ানমার সেনাদের গুলি এসে পড়ায় স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে স্বজনহারাদের আহাজারি
টেকনাফ থেকে মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান জানান, মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে প্রাণে বাঁচতে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে কক্সবাজারের উখিয়া-ঘুমধুম ও টেকনাফে সীমান্তে। নৌকায় করে পালাতে গিয়ে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী তোলাই এ দুঘর্টনা ঘটছে। নিখোঁজ হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ। ভেসে আসছে নিখোঁজদের মৃতদেহ। স্বজনহারা রোহিঙ্গাদের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে আহাজারি ও কান্নাররোল পড়েছে।
গতকাল ভোররাতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তুলাতুলী ঘাটের সমুদ্র সৈকত এলাকায় রোহিঙ্গাদের বহন করা ১টি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ১১জনের লাশ উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে। প্রাণ বাঁচাতে অতি ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় করে পরিবারের সাত সদস্যের সঙ্গে প্রায় ৪০জনের মতো রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশ পালিয়ে আসছিলেন রোহিঙ্গা নারী মদিনা খাতুন। তার সকলের বাড়ি মিয়ানমারে আকিয়াব জেলার রাশিডং থানার সেরেপ্রাং এলাকায়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পুরো পরিবারকে নিয়ে আর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। নৌকা ডুবিতে তার সঙ্গে সাঁতারিয়ে কূলে উঠতে পেরেছেন মেঝ ছেলে কামাল হোসেন। অন্য সদস্যরা নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন। এমন কি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের আর কোন লাশ পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে ছিলেন-স্বামী ইয়াছিন, মেয়ে নুরজাহার, মেঝ মেয়ে ছমুদা, ছোট ছেলে লায়লা ও তার মা আয়েশা এবং মেঝে ছেলে কামাল হোসেন। তিনি ও মেঝ ছেলে ছাড়া তার পরিবারের পাঁচজনের এখন পর্যন্ত কারো মৃত দেহ পাওয়া যায়নি। পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে হারিয়ে মদিনা খাতুনের আহাজারিতে শুধু স্বামী, ছেলে-মেয়ে ও মা হারানোর কথা বার বার বলছেন। এখন কার আশায় বাংলাদেশে থাকবেন বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। সরেজমিনে তুলাতুলী চরে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সড়কে একনারী বিলাপের ধবনি ভেসে আসছে। একটু সামনে যেতেই দেখা গেল পানিতে ভিজা পরনের কাপড়ে ও কয়েকটি শিশুসহ পুরো বসে বসে বিলাপ করছেন মদিনা খাতুন। আর বলছেন, এ রকম হবে আগে জানলে মর্গের হাতে সবাইকে নিয়ে গ্রামে থেকে যেতাম। এ কষ্ট আমি এখন রাখব কোথায়? নৌকা ডুবির ঘটনায় স্বজন হারানোর বেদনায় মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা জীবিত উদ্ধার লোকজনের আহাজারি থামছে না কিছুতেই। সৈকতে পাড়ে আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা। চোখের কান্নায় অশ্রু যেন থামছে না। শুধু সৈকতে ছুঁটাছুঁটি করছে নিখোঁজদের পাওয়ার আশায়। একই এলাকা থেকে পালিয়ে আসা নারী সখিনা খাতুন কোলে ছয় বছরের শিশু ইসমাইল। নৌকা ডুবিতে তার তিন বছরের মেয়ে ইয়াছমিন নিখোঁজ রয়েছে। মেয়ের খোঁজে সমুদ্র সৈকতে ছেলেকে কোলে নিয়ে আহাজারিতে পাগলের মতো কান্নাররোল পড়েছে। কিছুতেই থাকছে না তার কান্না। এই নারী বিলাপ করে বলছেন, এখন কোথায় যাবো, মা বলে ডাকবে কে। গত বছরের অক্টোবর মাসে রাশিডং এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করতে গিয়ে গিয়ে সে দেশের সেনা বাহিনী হাতে আটক হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি স্বামী ছৈয়দুল্লাহ নিখোঁজ রয়েছে। এরপর এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে কোন ভাবে সংসার চালিয়ে আসলেও গত আগস্ট মাসে ১১ তারিখের পর থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়াই গত বুধবার রাতে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে পালিয়ে আসার সময় নৌকায় উঠি। কিন্তু সেই নৌকাটি ডুবে গেলে মেয়ে সাহারা খাতুন নিখোঁজ হয়ে পড়েন। মিয়ানমারের মংনিপাড়া থেকে আসা আরেকটি পরিবারের তিন বোন ও এক ভাই। বোন মনোয়ারা , জমিলা বেগম, আয়েশা বেগম ও মফিজ উল্লাহকে দেখা গেল আহাজারি করতে। তাদের মা সেতারা নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন। তারা তিনবোন ও একভাইয়ের আহাজারিতে সৈকত এলাকার আকাশ-বাতাসও কান্নাকাটি করছে। তাদের বাবা শফিক আহমদ দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তারা বলেন, যুবতী দুই বোন থাকায় ওই পাড়ে সবসময় সেনা ও নাডালা বাহিনীর ধর্ষণ ও নিয়ার্তন আতঙ্কে ছিলাম কিন্তু এ পাড়ে এসে আহাজারি ও কান্নার রোলে পড়ে গেলাম।
টেকনাফে আরো ১১টি লাশ উদ্ধার, নৌকা ডুবিতে উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা ৮৭
নাফ নদী থেকে আরো ১১টি রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নাফ নদীতে ভাসমান অবস্থায় সাতশিশু ও তিন নারীসহ ১১ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকালে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে শাহ পরীর দ্বীপ এলাকায় নাফ নদী থেকে তিনশিশুসহ এক নারীর লাশ, টেকনাফের সাবরাং এলাকার নদীর পাড় থেকে দুই নারীর লাশ, তুলাতুলী থেকে এক শিশুসহ এক নারীর লাশ, নোয়াখালী পাড়ার নদীর তীর থেকে চার পুরুষের ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মিয়ানমারে নতুন করে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত নৌকাডুবির ঘটনায় মোট ৮৭ জন রোহিঙ্গার লাশ পাওয়া গেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।