Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মিরপুরে কথিত জঙ্গি আস্তানায় অভিযান অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আগুনে পোড়া ৭ লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ : বিস্ফোরক ভর্তি কার্টন উদ্ধার, বাড়ির মালিক ও একজন নৈশ প্রহরী গ্রেফতার, থানায় মামলা
রাজধানীর মিরপুর দারুস সালাম রোডের ‘কমল প্রভা’ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ৭টি লাশের ময়নাতদন্ত গতকাল শেষ হয়েছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া এসব লাশ কোনটি কার তা ময়নাতদন্তে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য হাড় ও অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ টেস্টের জন্য। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক ও একজন নৈশ প্রহরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ ও নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলাম এখন র‌্যাবের হেফাজতে। তাদের সাভারের একটি বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে র‌্যাব জানায়।
ওই বাড়ি থেকে প্যাকেট করা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি (অত্যাধুনিক বিস্ফোরক) উদ্ধার করেছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। এগুলো কার্টনের ভেতর সিল করা অবস্থায় রাখা ছিল।
গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭টি লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ডা: সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, আগুনে পুড়ে মারা গেছে ওই সাতজন। খুলি ও কঙ্কালের ভেতর স্পিøন্টার ও টিনের টুকরো পাওয়া গেছে। তবে কঙ্কালগুলোর কোনটি পুরুষ কিংবা নারীর তা শনাক্ত করা যায়নি। শুধু দু’জন শিশু আছে এটা বোঝা গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে সোহেল মাহমুদ বলেন, ডিএনএ পরীক্ষায় তাদের পরিচয় জানা যাবে। মিরপুরের মাজার রোডের পাশে বর্ধনবাড়ি ভাঙা ওয়ালের গলির ২/৩-বি হোল্ডিংয়ের ছয়তলা ভবনটি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সাতটি মাথার খুলিসহ পোড়া কঙ্কাল উদ্ধার করে র‌্যাব। সেগুলো গত বুধবার ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে নেয়া হয়।
র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যে সাতজনের খুলি উদ্ধার করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্য আবদুল্লাহ। অন্য ছয়জন হলো তার দুই স্ত্রী নাসরিন ও ফাতেমা, তিন থেকে নয় বছর বয়সী দুই ছেলে ওমর ও ওসামা এবং আবদুল্লাহর দুই কর্মচারী।
এদিকে র‌্যাব গতকাল ‘জঙ্গি আস্তানা’র ছয় তলার বাসা থেকে প্যাকেট করা ইম্প্রভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি (অত্যাধুনিক বিস্ফোরক) উদ্ধার করেছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। এগুলো কার্টনের ভেতর সিল করা অবস্থায় রাখা ছিল।
র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এছাড়াও জঙ্গি আস্তানার বাড়ির মালিক ও নৈশ প্রহরীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আস্তানাটিতে ৭ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দারুস সালাম থানায় মামলাও দায়ের করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে র‌্যাব-৪ এর সিও লুৎফুল কবির জানান, বাড়িওয়ালা হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ ও নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলাম জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। প্রাথমিকভাবে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। রিমান্ডে নিলে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।
বিস্ফোরক উদ্ধারের ব্যাপারে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গত বুধবার দিবাগত রাতে সাময়িক বিরতি দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও অভিযান শুরু হয়। কার্টনে রাখা আইইডি ছাড়াও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস পেয়েছি। সঙ্গে কিছু ধারালো অস্ত্রও পাওয়া গেছে। তবে অভিযান এখনও শেষ হয়নি। আরো সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে জঙ্গি আস্তানায় ৭ জনের অস্বাভাবিক মৃতু্যুর ঘটনায় দারুস সালাম থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে র‌্যাবের ডেপুটি সহকারী পরিচালক তারেক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। অভিযান শেষে হয়তো মূল মামলা দায়ের করা হবে।
দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুকুল আলম আরো জানান, জঙ্গি আস্তানার গলি থেকে নিখোঁজ দুই যুবকের মধ্যে এক জনকে পাওয়া গেছে। সোমবার থেকে নিখোঁজ থাকা নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ওই বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ঘটনার দিন থেকে জঙ্গি আস্তানার গলির নাইট গার্ড সিরাজুল ইসলাম (২৫) নিখোঁজ রয়েছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল।
নিখোঁজ সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেছিলেন, প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতেন তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম। ডিউটি শেষে তিনি সকাল ৬টার দিকে বাসায় যেতেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তিনি বাসায় ফেরেননি। এমনকি কোথায় আছেন তাও কিছু জানাননি। তার ফোন নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
ছেলের খোঁজে ভোলা থেকে মা-বাবা এসেছেন কমলপ্রভা বাড়ির সামনে
মিরপুরে নিহত ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর বাড়ির গৃহকর্মী কামালের খোঁজে ভোলা থেকে তার বাবা-মা এসেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তারা মিরপুরের ওই জঙ্গি আস্তানার সংবাদ সংগ্রহে আসা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাবা আব্দুল মালেক ও মা নূরজাহান বেগম। টেলিভিশনের খবর দেখে তারা ঢাকায় এসেছেন।
ছেলের খোঁজে এসে বিলাপ করে কাঁদছেন তারা। সেখানে কথা হয় কামালের মা-বাবার সাথে। কামালের বাবা আব্দুল মালেক বলেন, আমার ছেলে কামাল ছয় মাস ধরে আব্দুল্লাহর বাড়িতে কাজ করত। কবুতর পালন করার জন্য কাজে রেখেছিল আব্দুল্লাহ। প্রতি মাসে থাকা-খাওয়াসহ ছয় হাজার টাকা দিত।
কামালের মা নূরজাহান বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবার সঙ্গে ঈদের দিনও কথা হয়েছে। বাবা বলেছে, বেতন পেলে বাড়ি আসবে। সেই কথাই শেষ কথা।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে কামাল দ্বিতীয়। ভোলা জেলার সদর থানার ইলিশা গ্রামে তাদের বাড়ি। কামালের বয়স ২২ বছর। এক বছর আগে বিয়ে করেছেন কামাল।
রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালামের ‘জঙ্গি’ বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ ও নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে র‌্যাব। তাদের সাভারের একটি বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে র‌্যাব জানায়। গতকাল বেলা ২টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদেরও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, বিগত দিনের মতো আজও চলছে আমাদের কাজ। ছয় তলায় বেশ বিছু ধারালো অস্ত্র পেয়েছি আমরা। অবিস্ফোরিত বোমা পেয়েছি, যেগুলো বেশ শক্তিশালী।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি আবদুল্লাহ ছয় তলায় যেতে পারেননি। সেখানে বিস্ফোরণ করতে পারলে সেটা খুব ভয়াবহ হতো। ভবনের ভেতরে ও ছাদে কয়েকটি অবিস্ফোরিত বোমাসহ বিস্ফোরক দেখা গেছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করতে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল কাজ করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর মিরপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ আবার অভিযান শুরু করে র‌্যাব। গত সোমবার থেকে অব্যাহতভাবে চলছে এই অভিযান। গতকাল ওই বাড়ি থেকে সাতজনের পোড়া খুলি ও কঙ্কাল উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এর আগে মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এতে আগুন লেগে গেলে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ