পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের এক বিশ্লেষক বলেছেন, মুসলিমদের প্রশ্নে বার্মার জাতীয়তাবাদী ও বৌদ্ধ কট্টরপন্থীরা মোদি ও তার নেতৃত্বাধীন বিজেপির সাথে একাত্মতা বোধ করে। এদিকে ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে নয়াদিল্লী ঘোষণা করেছে। ইয়াঙ্গন থেকে সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক একে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিয়ানমারে সরকারী সফরের আগে বৌদ্ধপ্রধান দেশটির প্রতি ভারতের সমর্থন প্রদর্শনের একটি চেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা বেশ কিছু পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়। এতে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। এরপরে সামরিক বাহিনীর দমন অভিযান শুরু হয় যা বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি করেছে।
রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ক্যাম্পগুলোতে হামলার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক কড়া বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিয়ানমারের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। অপরদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু এক বিবৃতিতে ভারতের সকল রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দেন। এ দু’টি বিবৃতিই দেয়া হয় ৫ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র মোদির মিয়ানমার সফরের আগে। এ সব বিবৃতির উদ্দেশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মধ্যকার উগ্র জাতীয়তাবাদীদের কট্টর মনোভাবের সাথে ভারতের একাত্মতা প্রকাশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের মনিপুর বিশ^বিদালয়ের মিয়ানমার স্টাডিজ সেন্টারের প্রধান জিতেন নওথাংবাম বিবিসিকে বলেন, মুসলিমদের প্রশ্নে বার্মার জাতীয়তাবাদী ও বৌদ্ধ কট্টরপন্থীরা মোদি ও তার নেতৃত্বাধীন বিজেপির সাথে একাত্মতা বোধ করে।
জানা গেছে, ভারত বিশেষ অভিযানের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে প্রশ্ক্ষিণ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এটাকে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের দমনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি ভারতীয় সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানের ফলে হাজার হাজার উদ্বাস্তু পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। চীন এ ব্যাপারে মৌন থাকায় তা ভারতকে মূলধারার বর্মী জনমতের সাথে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ঘোষণা করেন যে ভারত সে দেশের সকল রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাবে যাদের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। তিনি বলেন, এদের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক উদ্বাস্তু হিসেবে নিবন্ধিত ১৬ হাজার রোহিঙ্গাও রয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিবন্ধনের কোনো অর্থ নেই। আমাদের কাছে তারা সবাই অবৈধ অভিবাসী।
এটা সুস্পষ্ট নয় যে ভারত তার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মিয়ানমার বা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে কিনা বা সে পরিকল্পনা কার্যকর করবে কিনা। রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন এবং মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করেছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলার পর সোমবার আদালত সরকারকে জবাব দিতে বলেছে।
ভারত মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে সক্রিয় রয়েছে যাতে উত্তরপূর্ব ভারতের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের সমর্থন পেতে পারে। এ জঙ্গিদের অনেকের ঘাঁটি মিয়ানমারের জঙ্গলে।
মিয়ানমারের সাথে উষ্ণ সম্পর্কের নিদর্শন হচ্ছে ভারত রাখাইন রাজ্যের সিত্তওয়েতে একটি বন্দর ও জলপথ প্রকল্প নির্মাণ করছে। এছাড়া মিজোরামের জিরিনপুই থেকে সিত্তওয়েকে সংযোগকারী একটি সড়ক পথ নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হচ্ছে।
মিয়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিশ্রি সুস্পষ্টভাবে চীনের প্রসঙ্গে বলেন, এ প্রকল্প আমাদের মূল ভূখন্ডকে ভারতের উত্তর পূর্বের সাথে যুক্ত করতে সাহায্য করবে। আমরা আমাদের বাণিজ্যের সুবিধার জন্য মিয়ানমারের জন্য সরকারী সম্পদ সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক, তবে তা বাণিজ্যিক নয় যা কিছু কিছু দেশ করছে।
ভারত সক্রিয়ভাবে মিয়ানমারে আরো অবকাঠামো প্রকল্পের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে যা তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিকে সফল করবে।
এই নীতির আওতায় ভারত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে এবং এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে চাইছে যাতে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়া হলে তারা কোথায় যাবে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
মিয়ানমার সফরকালে মোদি বাগান যাবেন। সেখানে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি প্যাগোডা ভারত পুননির্মাণ করেছে। সেখানে রয়েছে ইয়াঙ্গনের প্রতীক শোয়েডাগন প্যাগোডা। তিনি স্থানীয় স্টেডিয়ামে এক জনসভায় বক্তৃতা করবেন।
এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ধর্মীয় আবেদন ও রাজনৈতিক সমন্বয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের প্রবাসী ভারতীয় বসতি স্থাপনকারীদের সাথে বর্মী জাতীয়তাবাদীদের সংযুক্ত করা।
মিয়ানমার বিষয়ক পর্যবেক্ষক বিনোদা মিশ্র বলেন, মোদির সফরের সময় রিজিজুর রোহিঙ্গাদের বের করে দেয়ার যে ঘোষণা তা সম্ভবত কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। রিজিজু একজন বৌদ্ধ। তিব্বতী ধর্মীয় নেতা দালাইলামার বিতর্কিত অরুণাচল সফরের সময় রিজিজু তার সাথে ছিলেন।
ভারতে রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক অনিতা সেনগুপ্ত বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নাও হতে পারে । কারণ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো চূড়ান্ত করা হয়ত সহজ হবে না।
সুবীর ভৌমিক বলেন, মোদির সফরের পিছনে ভারতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মিয়ানমারে চীনের প্রভাব বলয়ে ফাটল ধরানো। অন্যদিকে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ভাবাবেগ ব্যবহার করে বার্মিজ জাতীয়তাবাদীদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।