Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী

শফিউল আলম চট্টগ্রাম থেকে এবং শামসুল হক শারেক ও মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ফিরে : | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আরাকানে মুসলমান পাড়াগুলো এখন বিরানভূমি : গুলি বোমা আগুন দিয়ে ও কেটে কেটে লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ : হিংস্র হায়েনার মতো সেনা বিজিপি ও মগদস্যুরা চালাচ্ছে গণধর্ষণ লুটপাট : জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৬০০ ঘরবাড়ি : জীবন ও ইজ্জত-আব্রু বাঁচাতে সীমান্তের উদ্দেশে দিকবিদিক ছুটছে হাজার হাজার মানুষ : ভেসে আসছে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদ : আকিয়াব-মংডু-বুচিদংয়ের পাহাড়-জঙ্গলে ও ক্যাম্পে অবরুদ্ধ কয়েক লাখ রোহিঙ্গা : খুন ও গুমের শিকার শত শত : পালিয়ে এসে আশ্রিতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে : খাদ্য চিকিৎসা সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপন: আসছে শরর্থীদের উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকা জাহাজ : নাফ নদ থেকে আরও এক রোহিঙ্গা নারীর লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশের কক্সবাজার-বান্দরবানের অপর প্রান্তে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আরাকানের (পরিবর্তিত নাম রাখাইন স্টেট) সাথে ২০৮ কিলোমিটার স্থল এবং ৬৩ কিমি নৌ-সীমান্ত পথ রয়েছে। সেখানকার অনেকগুলো পয়েন্টে প্রতি মুহূর্তেই হাজার হাজার আরাকানী রোহিঙ্গা মুসলমান নর-নারী শিশু-বৃদ্ধ ছুটে এসে ভিড় করছে। আর সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসছে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদ। গতকালও (মঙ্গলবার) শোনা গেছে থেমে থেমে ভারী অস্ত্রশস্ত্রের গুলি ও বোমার আওয়াজ। বাতাসে ভেসে আসছে বারুদ আর লাশের গন্ধ। পাশবিক অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে শুধুই জীবন এবং মুসলিম মহিলারা ইজ্জত-আব্রুটুকু বাঁচানোর তাগিদে এক কাপড়ে সীমান্তের দিকে তারা ছুটছে। বাংলাদেশে এসে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এমনিতেই মিয়ানমারে (তাঁদের ভাষায়) চতুর্মুখী হামলায় দিশেহারা। উপরন্ত অর্ধাহারে, অনাহারে সহায় সম্পদ ফেলে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও পেঠের ক্ষিধায় বিশেষতঃ শিশু এবং বৃদ্ধ ও অসুস্থদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। মাথা গোঁজার কোনো জায়গা পাচ্ছে না ফলে খোলা আকাশের নীচে বসবাস তাদের ভরসা। সঙ্গী রোদ আর বৃষ্টি। তাদেরকে সেখানে জমা করা হচ্ছে, সেখানে নেই পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা। নারীরা রাস্তার পাশে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৪ শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৬০০ ঘরবাড়ি। শরর্থীদের উদ্ধার কাজে লিপ্ত থাকা মাল্টা ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক একটি গ্রুপ ভূমধ্যসাগরে শরর্থীদের উদ্ধার কাজ স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, বঙ্গোপসাগরে বিপদের মুখে পড়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে তাদের উদ্ধারকারী জাহাজ ফিনিক্স পাঠাচ্ছে।
এদিকে, গতকাল দুপুরে এবং সোমবার সন্ধ্যায় পৃথকভাবে তিনটি শক্তিশালী ভূমি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সীমান্তে তুমব্রু পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পথে শক্তিশালী ভূমি মাইনগুলো বিস্ফোরণের খবর জানা গেছে। বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা নাগরিক সাবেকুন নাহারের (৪৫) সারা শরীর ঝলসে গেছে এবং বাম পায়ের অর্ধেক ছিন্নভিন্ন হয়েগেছে । এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদ থেকে আরও এক রোহিঙ্গা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ গুলারচর এলাকা থেকে মৃত দেহটি উদ্ধার করা হয়।
নির্যাতিত ও আহত রোহিঙ্গাদের উপর চালিত বর্বরতার বিবরণ থেকে এবং মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বিজিপি, পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী আরাকানী আদিবাসী মুসলমান রোহিঙ্গা (রো-আং) পুরো জাতিকেই সমূলে উচ্ছেদ করার নীল-নকসা বাস্তবায়নে বর্বর কায়দায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন দমনাভিযান ভয়াল রূপ ধারণ করছে। মিয়ানমার সরকার থেকে কেন্দ্রীয়ভাবেই সার্বক্ষণিক নির্দেশ আসছে কঠোর থেকে কঠোরতম পন্থায় রোহিঙ্গাদের উপর দলন-পীড়ন চালিয়ে যেতে এবং তথাকথিত ‘বাঙালী’ আখ্যা দিয়ে প্রতিটি পাড়া-গ্রাম থেকে উৎখাত করতে। সেনাবাহিনীসহ বর্মী বাহিনীগুলোর সাথে মগ-দস্যুরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে হিংস্র হায়েনার মতো। মায়ের সামনে মেয়ের, মেয়ের সামনে মায়ের, স্বামীর সামনে স্ত্রীর ইজ্জত-সম্ভ্রম লুটে নেয়া হচ্ছে। সেই সাথে হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে একের পর এক রোহিঙ্গা পরিবার।
কোনমতে পালিয়ে এসে চিকিৎসাধীন রোহিঙ্গা ও সীমান্তের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আরাকানের প্রায় সর্বত্র মুসলমানদের পাড়াগুলো এখন বলতে গেলে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা জনপদে সশস্ত্র বর্গী হানা দিয়ে যৌথ বাহিনী গুলি ও বোমা বর্ষণ, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে এমনকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে কেটে, বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিপি, পুলিশ ও মগদস্যুরা সবখানে গণধর্ষণ আর লুটপাট করেই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে জীবন ও ইজ্জত-আব্রু বাঁচাতে সীমান্তের উদ্দেশে দিকবিদিক ছুটছে হাজার হাজার বিপন্ন রোহিঙ্গা। সূত্রগুলো জানায়, আকিয়াব-মংডু-বুচিদংয়ের পাহাড়-জঙ্গলে, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক ক্যাম্পে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে এখনও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। তারা বেশিরভাগই পুরুষ। এ যাবত খুন আর গুমের শিকার হয়েছে শত শত। গত ২৪ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত শত বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও সীমান্ত অতিক্রম করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে এসে আশ্রিতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আশ্রিত এবং সীমান্তে জিরো লাইনে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গারা খাদ্য, পানি, আশ্রয়, চিকিৎসা সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষত বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থদের দুঃখ-কষ্ট অবর্ণনীয়। এখনও সীমান্তের পাহাড়-নদী-জঙ্গল পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে অগণিত রোহিঙ্গা। গত ১১ আগস্ট আরাকানের রোহিঙ্গা পাড়াগুলোতে সেনাবাহিনী ঘেরাও বা কর্ডন করে তাদেরকে অবরুদ্ধ রেখে এবং সশস্ত্র টহল দিয়ে সামরিক দমনাভিযানের আলামত শুরু করেছিল মিয়ানমার সরকার। গত ২৪ আগস্ট থেকে পুরোদমে শুরু করা হয় রোহিঙ্গা বর্মী নাগরিকদের খেদাও অভিযানের নামে সমূলে উচ্ছেদের ভয়াবহ তান্ডব। গত ১৩ দিনে এই দমনাভিযান ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় আরাকানী আদিবাসী বর্মী রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠি নিরীহ মুসলমানদের অস্তিত্বই হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। একুশ শতকের তথাকাথিত ‘সভ্যতার বিশ্বে’ এহেন বর্বরতা ও পৈশাচিক উন্মাদনার খেলা ‘মানবসভ্যতা’ এবং ‘বিশ্ব-বিবেক’কে করেছে ভূলুণ্ঠিত, ক্ষত-বিক্ষত।
ওদিকে, বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক রোহিঙ্গারা। এমনিতেই মিয়ানমারে (তাঁদের ভাষায়) চতুর্মুখী হামলায় দিশেহারা। উপরন্ত অর্ধাহারে, অনাহারে সহায় সম্পদ ফেলে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও পেঠের ক্ষিধায় বিশেষতঃ শিশু এবং বৃদ্ধ ও অসুস্থদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তার উপর ছিল খোলা আকাশের নীচে। সঙ্গী ছিল রোদ আর বৃষ্টি। তাদেরকে সেখানে জমা করা হচ্ছে সেখানে নেই পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের প্রতিবেদনে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকার কথা বললেও বাস্তবে চিত্রতা ভিন্ন। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে গেল দেড় সপ্তাহে অন্তত তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসব রোহিঙ্গা জঙ্গলে, পাহাড়ী টিলায় আশ্রয় নেয়ায় পানীয় জল পাচ্ছেনা। খাবারের জন্য করছে হাহাকার। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাগুলো ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে জানিয়েছে তবে স্থানীয় লোকজন ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারদের ভাষ্যমতে, এবারে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তাদের দাবি, এবারে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এদের মধ্যে কুতুপালং রেজিষ্টার্ড ও আনরেজিষ্টার্ড ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে দেড় লাখ, বাকিরা তুমব্রু ঘুমধুম, বালুখালি, উখিয়া-টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে ইতোমধ্যে তারা আশ্রয় নিয়েছে। লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আবুল ফয়েজ বলেন, আমাদের ক্যাম্পে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত অর্ধ লাখেরও বেশি নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে আশ্রয় নিয়েছে। কুতুপালং এবং নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
বালুখালী ক্যাম্পের মাঝি ইলিয়াছ ও ছৈয়দ নূর জানান, তাদের ক্যাম্প ও আশপাশ এলাকায় নতুন করে অর্ধলাখ রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। যে যেভাবে পারছে, যেখানে পাচ্ছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে। যখন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে এসব ক্যাম্পে আসে তখন তাদের তাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে না।
এদিকে, প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গা প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন না। খাবার ও পানির তীব্র সঙ্কটে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছেন তারা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশা রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের খোঁজে পাহাড়-সমতল ও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। অচিন এলাকায় যে যেখানে পারছেন সেখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই নিচ্ছে। ফলে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠছে ঝুপড়ি ঘর। তবে, বিভিন্ন ভাষ্যে ওঠে এসেছে, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়ায় পরিণত হবে। তাদের প্রতিবেশী অনুকম্পা দেখানো উচিত হবেনা। রোহিঙ্গা বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেলে নিয়ন্ত্রণ করা দায় হয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়তে পারে আইন শৃঙ্খলা।সীমান্তবর্তী বাংলাদেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন করে কয়েক হাজার ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা। অন্যদিকে, টেকনাফ সীমান্তের উপকূল দিয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আনছে তালিকাভূক্ত মালয়শিয়া মানবপাচারের দালালেরা। রোহিঙ্গাদের আনার পরপরই মাথাপিছু ১০-৫০ হাজার ভাড়া নিচ্ছে এবং তাদের হাতে থাকা মূল্যবান স্বর্ণলঙ্কার লুটসহ রোহিঙ্গা নারীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। তম্মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৩২ দালালকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করেছেএবং টেকনাফসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৩ হাজার ২১৫ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানাগেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। এ সময় রোহিঙ্গাদের বহনকরা ২৫টি নৌকাও জব্দ করা হয়। টেকনাফ ২-বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ২ হাজার ৬৭৮ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে মানবিক সহায়তা দিয়ে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
অন্যদিকে আরাকানের (রাখাইন) বিভিন্ন গ্রাম-পাড়ায় বর্মী যৌথ বাহিনীর গুলি ও বোমায় গুরুতর আহত এ যাবত অর্ধশত রোহিঙ্গা ভাগ্যক্রমে পালিয়ে সীমান্তের এপারে আসেন। তাদেরকে মানবাধিকার ও সাহায্য-কর্মীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর অব্যাহত দমনাভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় গতকাল আরও দুই রোহিঙ্গা যুবককে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন মোঃ আরাফাত হোসেন (২৫) ও মোঃ আমানউল্লাহ (২৮)।
ওদিকে, গতকাল দুপুরে এবং সোমবার সন্ধ্যায় পৃথকভাবে তিনটি শক্তিশালী ভূমি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সীমান্তে তুমব্রু পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পথে শক্তিশালী ভূমি মাইনগুলো বিস্ফোরণের খবর জানাগেছে। সোমবারে বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা নাগরিক জাফর আলম দম্পতি ভূমি মাইনের শিকার হয়। এতে জাফর আলম ও তার স্ত্রী সাবেকুন নাহার (৪৫) মারাত্মকভাবে আহত হয়। ভূমি মাইন বিস্ফোরনে সাবেকুন নাহারের সারা শরীর ঝলসে গেছে এবং বাম পায়ের অর্ধেক ছিন্নভিন্ন হয়েগেছে। গতকালের বিস্ফোরণে শামসুল আলম কাউছার (১০) নামের এক রোহিঙ্গা কিশোর মারাত্মকভাবে আহত হয়। বেকুন নাহার ও শামসুল আলম কাউছারকে উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হলান্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে মূমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য ৯০ এর দশকের পরেও মিয়ানমার কর্তপক্ষ বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে ব্যাপকহারে ভূমি মাইন স্থাপন করেছিল। তখন তুমব্রু পয়েন্ট থেকে প্রায় ৭০/৮০ কিলোমিটার পাহাড়ী সীমান্ত পথে স্থল মাইন পুথেঁ রেখেছিল তারা। এসময় ব্যাপকহারে বাংলাদেশী কাঠ শ্রমিকদের হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ ও মানবাধিকার সংগঠন গুলোর লেখালেখির কারণে দু’দেশের সার্ভের মাধ্যমে অনেক গুলো ভূমি মাইন বা স্থল মাইন মিয়ানমার সরকার তুলে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল।



 

Show all comments
  • Abdullah Al Mahmood ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৮:৫৫ এএম says : 0
    Where is the practice of Muhajir & Ansar concept here?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ