Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাখাইন রাজ্যের জনগণের ওপর নির্যাতন বন্ধ করুন মিয়ানমারকে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে ইন্দোনেশিয়া প্রস্তুত রয়েছে : মারসুদি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৩৮ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাখাইন রাজ্যের জনগণের ওপর সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সফররত ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘তিনি বলেছেন, এই সমস্যা সমাধানে আমরা সহযোগিতা করব, তবে সবকিছুর আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে, সামরিকভাবে নয়’। শেখ হাসিনা বলেন, কোন দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালাতে বাংলাদেশ কাউকে দেশের ভুখÐ ব্যবহার করতে দিবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়। প্রয়োজনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মিয়ানমারে বিদ্রোহ বন্ধে সহযোগিতা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা সমাধান করেছে। শেখ হাসিনা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশটিকে আমাদের সমস্যা বুঝতে হবে। আমাদের জন্য এটি একটি বড় ধরনের বোঝা’।
প্রধানমন্ত্রী জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় বিপুল সংখ্যক শিশু, নারী ও বৃদ্ধ লোক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে’। তিনি কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই রিপোর্ট সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান করেছে, সেইভাবে এই সমস্যা সমাধান করতে মিয়ানমার সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন হচ্ছে শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া’।
বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার দেশ ভূমিকা রাখতে চায়। বৈঠকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিতিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারমো বলেন, তিনি ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের সেনা প্রধানের সঙ্গে কথা বলে এই সহিংসতা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। রাখাইন রাজ্যে শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিতিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারনো উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে ইন্দোনেশিয়া প্রস্তুত রয়েছে : মারসুদি
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেছেন, তার দেশ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে সৃষ্ট চাপ কমাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, এই মানবিক সঙ্কটের অবসান ঘটবে এবং ইন্দোনেশিয়া এই সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় হোটেল সোনরগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তার দেশের প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার বৈঠকে কমপক্ষে তিনটি ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রথমত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হওয়ায় তার দেশের সহানুভূতির কথা অবহিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ কমাতে তার দেশ সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত থাকার কথা অবহিত করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার সহায়তা গ্রহণে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন। তৃতীয়তঃ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা।
এর আগে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল দুপুরে এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন। তিনি প্রথমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
ইউএনএইচসিআর’র সূত্র মতে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
ইন্দোনেশীয় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
এর আগে গতকাল ইন্দোনেশিয়ার নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রিনা প্রিতিয়াসমিয়ারসি সোয়েমারনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির উপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক নাগরিককে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের জন্য বিশাল বোঝা। আমরা শুধু মাত্র মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিয়েছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ