Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিরপুরের ‘জঙ্গি আস্তানা’য় ভয়াবহ বিস্ফোরণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৩৭ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আত্মঘাতী বলে সন্দেহ : কালো ধেঁাঁয়া, বারুদের গন্ধ : ৪ র‌্যাব সদস্য আহত
মিরপুরের দারুস সালাম থানার ভাঙা দেয়াল এলাকার ‘জঙ্গি আস্তানা’য় ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। র‌্যাব ধারণা করছে, এটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। এসময় আশপাশের এলাকায় বারুদের গন্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়া ভবনে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এরপর পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে র‌্যাব। এর আগে র‌্যাব জানিয়েছিল, ওই আস্তানায় থাকা সন্দেহভাজন জঙ্গি আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এরপর গতরাত পৌনে ১০টার দিকে ঘিরে রাখা আস্তানায় পাঁচ থেকে ছয়টি ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। ওই বাসা থেকে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। আশপাশের এলাকাজুড়ে বারুদের গন্ধও পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণের শব্দের পরপরই পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করে র‌্যাব। থেমে থেমে চলে র‌্যাবের গুলি। তবে রাতে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়। আশপাশের বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়।
বিস্ফোরণের পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় চার র‌্যাব সদস্য স্পিøন্টারবিদ্ধ হয়েছেন। তবে তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত’। তিনি আরও বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর ভেতরে আগুন লেগেছে। এ কারণে এখনও আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি। ভেতরে এখনও আগুন জ্বলছে। আগুন নিভলে তারপর ভেতরে ঢুকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।’ মুফতি মাহমুদ জানান, বিস্ফোরণটি কেমিক্যাল বিস্ফোরণ বলে মনে হয়েছে। এর আগে আবদুল্লাহর প্রতিবন্ধী এক বোন র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি ঈদের আগে এ বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আবদুল্লা তার বোনকে বের করে দেয়। তিনি এখ র‌্যাবের হাতে আছেন। অন্য দিকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলেছে র‌্যাব পুলিশ। ওই বাড়ির কাছে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। দারুস সালাম রোডের ওই বাড়িটি ঘিরে দিনভর ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। অভিযানের সময় থেমে থেমে বিস্ফোরনের শব্দ হয়। র‌্যাব বলছে, জঙ্গিরা ভিতর থেকে বিস্ফোর ঘটায়।
র‌্যাবের ভাষ্য মতে,জঙ্গি নেতা আবদুল্লা তার দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে রাত ৮ টার মধ্যে আত্মসমার্পন করার কথা ছিল। র‌্যাব আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, জঙ্গি আব্দুল্লা দুই স্ত্রী-পুত্রসহ সঙ্গীদের নিয়ে মিরপুর মাজার রোডের ওই ভবনের পঞ্চম তলার বারান্দায় এসে হাত নেড়ে উচ্চস্বরে র‌্যাবের উদ্দেশ্যে তাদের আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ রাত ৮টার মধ্যে তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ ভবন থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করবে বলে জানিয়েছে। এর আগে র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাকে আত্মসমর্পণের আহŸান জানানো হলে তিনি র‌্যাবের কাছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য সময় চায়। আত্মসমর্পণের পর ভবনে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার ও ধ্বংসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।এর আগে ওই বাড়িটির ২৪ ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টি থেকে থেকে নারী শিশুসহ ৬৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ২৬,নারী ২৪ ও ১৫টি শিশু রয়েছে।
র‌্যাব জানায়, সোমবার গখীর রাতে টাঙ্গাইলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্বিবদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এখানে (দারুস সালাম) অভিযান চালানো হয়। বাসাটির পঞ্চম তলায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি তার দুইসহযোগীসহ অবস্থান করছে। এরপর র‌্যাব অভিযান শুরু করে। জানা যায়,টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজোলার মসিন্দা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ওই জঙ্গিদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। এদিকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে রাজধানীর দারুস সালাম রোডে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে ৭ জন অবস্থান করছেন বলে এর আগে জানিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।
বেনজীর আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
র‌্যাবের ডিজি বলেন, আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, ভেতরে অবস্থান করা জঙ্গির নাম আব্দুল্লাহ। ভবনের ভেতরে তার সঙ্গে দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট ৭ জন অবস্থান করছেন। তিনি আরো বলেন, ভেতরে বিপুল পরিমাণ এসিড, পেট্রোল ও ৫০টি আইডি রয়েছে। তার কাছে পিস্তল রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা বলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন,‘টাঙ্গাইলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্বিবদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয় সোমবার গভীর রাতে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এখানে (দারুস সালাম) অভিযান চালানো হয়। বাসাটির পঞ্চম তলায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি তার দুইসহযোগীসহ অবস্থান করছে। এরপর র‌্যাব অভিযান শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আব্দুল্লাহর সঙ্গে কথা হচ্ছে। সে আত্মসর্পণ করবে বলে জানাচ্ছে। কিন্তু সময় নিচ্ছে। তারা যেন দ্রæত আত্মসমর্পণ করে সেজন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সব কিছু বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রয়োজনে র‌্যাব আরও সময় দেবে।
তিনি আরও বলেন, সন্দেহ করছি ভেতরে দুটি শিশু আছে। যাদের পুঁজি করেছে জঙ্গিরা। আমরাও মূলত ওই দু’শিশুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার জন্য সময় দিচ্ছি। এর আগে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, জঙ্গি আব্দুল্লাহসহ তার সঙ্গে দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও আরও দুজন সহযোগী রয়েছে। ভেতরে বিপুল পরিমাণ অ্যাসিড-পেট্রোল রয়েছে। কোনো রক্তপাত ছাড়াই আমরা অভিযান শেষ করতে চাই।
এ অভিযানের আগে র‌্যাব টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা মুরসুন্দি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে রাতভর অভিযান চালিয়ে দুইজনকে আটক করে। আটক ওই বাড়ির মালিকের দুই ছেলের জঙ্গি সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব জানায়,আবুল হোসেন চিশতির দুই ছেলে নুরুল হুদা মাসুম (৩০) ও তার ছোটভাই মাজহারুল ইসলাম খোকন (২৫) ছাত্রজীবন থেকেই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে যুক্ত।
আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, উদ্ধার করা ড্রোন দিয়ে তারা নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল তাদের টার্গেট। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম জানান, তিনি দারুল ইসলামী মাদরাসায় নবম শ্রেণিণ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। সেখানে পড়া অবস্থাতেই তিনি নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
মাসুম জেএমবির একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি সাংগঠনিকভাবে ‘উফফে জামানা সন্ত্রাসী কোফরা’ নামে পরিচিত। তার ছোট ভাই খোকন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ত্রিপোলিতে লেখাপড়া করতেন। ২০১২ সালে তিনি লেখাপড়া বাদ দিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে জেএমবিতে যোগ দেন। খোকন তার বড় ভাই মাসুমকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতেন।
অভিযানে দুই ভাইয়ের সঙ্গে ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ জঙ্গি কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক, ‘জিহাদি’ বই ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাত আড়াইটার দিকে ওই বাড়ি থেকে মাসুদ ও খোকনকে আটক করে র‌্যাব। এর আগে রাত ১২টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে সংস্থাটি। মধ্যরাত থেকে টানা আট ঘণ্টা অভিযানের পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে অভিযান সমাপ্ত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ