Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারে সব মুসলিমই নির্যাতিত

বৌদ্ধ মৌলবাদী ও উগ্র জাতীয়তাবাদীরা জাতিগত সহিংসতায় লিপ্ত : বিএইচআরএন

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শুধু রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমরা নয়, মিয়ানমারে সব মুসলিমই নির্যাতিত বলে জানিয়েছে একটি মানবাধিকার সংগঠন। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে সব শ্রেণি-পেশার মুসলিমরা সিস্টেমেটিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে এই নির্যাতন-নিপীড়ন কয়েক গুণ বেড়েছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সরকারের পরিকল্পিত নির্যাতন চলছে। মানবাধিকার সংগঠন বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক (বিএইচআরএন) এমন তথ্য দিয়েছে। তারা বলছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সব ধরনের নির্যাতনের পেছনে রয়েছে মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী, বৌদ্ধ মৌলবাদী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী নাগরিকরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত সহিংসতায় লিপ্ত রয়েছে। বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গণতন্ত্রে উত্তরণের ফলে প্রথাগত কুসংস্কার সরকারের শাসন ব্যবস্থায় চেপে বসার সুযোগ পেয়েছে এবং এক বিপজ্জনক ধারণা চড়াও হয়েছে যে, বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে মুসলিমরা ভিনদেশী জাতি। ৪৬টি শহর ও গ্রামের ৩৫০ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রাইটস নেটওয়ার্ক। ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে আট মাস ধরে এসব মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি মিয়ানমার সরকার। কর্তৃপক্ষ বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং দাবি করছে, রাখাইনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান পরিচালনা করছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সব অঞ্চলেই যেকোনো বর্ণ বা স¤প্রদায়ের মুসলিম হোক, তাদের অনেককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। এমন কি কিছু কিছু স্থানে মুসলিমদের মসজিদ-মাদ্রাসায় পর্যন্ত যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনটি মিয়ানমারে মুসলিম নির্যাতনের বিভিন্ন মাত্রা সম্পর্কে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, কমপক্ষে ২১টি গ্রামে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার পেছনে কর্তৃপক্ষের ইন্ধন রয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলিম স¤প্রদায়ের মধ্যে বেড়ে চলা জাতিগত বিভাজন-বিদ্বেষের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এর ফলে রোহিঙ্গাদের চলাফেরায় কঠোর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হয়েছে। যে কারণে তারা শিক্ষা গ্রহণ ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কয়েকটি পোস্টে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের তথাকথিত হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা বললেও বাস্তবে তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে পাহাড়ি এলাকায় মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়া গত ১০ দিনের সহিংসতায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৪০০ রোহিঙ্গা মুসলিম। খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে বসবাসকারী প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার অধিকার প্রশ্নে চাপের মুখে রয়েছেন নোবেলজয়ী অং সান সু চি। তার দল এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদায় রাষ্ট্রীয় পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকার চলে মূলত তার ইশারায়। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। বিশ্বজুড়ে তার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বইছে। বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক লন্ডনভিত্তিক মিয়ানমারের একটি মানবাধিকার সংগঠন। ২০১২ থেকে তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ