Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকায় ফিরতেও ভোগান্তি

লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে ভয়াবহ যানজট : | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহত ৯ : ট্রেনে উপচেপড়া ভিড় : ঈদের পরেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
বিশেষ সংবাদদাতা : ঈদের ছুটি কাটিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে ফিরছে তারা। ভুক্তভোগিদের মতে, ঈদের আগে যেমন ভোগান্তি ছিল ঈদের পরে ঢাকায় ফিরতেও প্রায় একই রকম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের সড়কপথে পথের যাত্রীরা পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ছেন। ঢাকা ফিরতে দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ভাঙাচোরা মহাসড়কে এবার দুর্ঘটনা কম ঘটলেও গত রোববার গভীর রাতে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে উল্টোপথে চলা কভার্ড ভ্যানের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ৮জন আহত হয়েছে। হতাহতরা মাইক্রোবাস আরোহী এবং সবাই নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। মিরসরাই উপজেলার মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারনে যানজট এবং বাসগুলোতে অধিক ভাড়া আদায় করায় সাধারণ মানুষ বেছে নিয়েছে ট্রেন। এ ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করছে না যাত্রীরা। অন্যদিকে, এবার ব্যতিক্রম চিত্রও চোখে পড়ছে। ঈদের পরেও মানুষ বাস, লঞ্চ ও ট্রেনযোগে বাড়ি যাচ্ছে। ঈদের পরদিন কমলাপুর থেকে সবগুলো ট্রেন ছেড়ে গেছে যাত্রীপূর্ণ করে। গতকালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোও ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। প্রতি বছর ঈদের পরেও দুরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রী পাওয়া যেতো না, এবার ঈদের পরেও মানুষ বাড়ি যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা।
প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। ঈদের পর দিন থেকে এই ফেরা শুরু হলেও দিন দিন ভিড় বাড়ছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ঈদের আগে যেভাবে মানুষ গেছে গতকাল সোমবার ঠিক একইভাবে মানুষ গাদাগাদি করে ফিরেছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকামুখি প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের উপচে পরা ভিড়। ট্রেনের ছাদেও শত শত যাত্রী আসছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
আলাপকালে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত রোববার প্রতিটি ট্রেনের ছাদেই শত শত যাত্রী এসেছে। এসব যাত্রীর বেশিরভাগ নেমে গেছে টঙ্গী, জয়দেবপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে। দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী দ্রæতযান এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, পার্বতীপুর থেকে শুরু করে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠেছে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। কোনো কোনো স্টেশনে যাত্রীদেরকে মই দিয়ে ছাদে উঠানো হয়েছে টাকার বিনিময়ে। ঈদের পরদিন থেকে বেশিরভাগ ট্রেন সময় মেনে চলছে বলে জানান রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা। তবে এবার ঈদের আগে ট্রেনের সিডিউল ভেঙ্গে পড়েছিল। মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারনে যাত্রীরা এবার ট্রেনকে বেছে নিলেও বেশিরভাগ ট্রেন চলেছে দেরিতে। এমনকি ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে গত ৩১ আগস্ট স্টেশনের ছাদের টিন ভেঙ্গে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহতও হয়েছে। সেদিন রাত ৮টার দ্রতযান এক্সপ্রেস কমলাপুর ছেড়েছে রাত ১০টার পর। এমনকি রেলওয়ের একজন কর্মকর্তার স্ত্রী ভুল করে ওই ট্রেনে ওঠায় ট্রেনটি আবার বিমানবন্দর স্টেশনে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। ঘরমুখি হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগে ফেলে রেলের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীর জন্য একটি ট্রেন এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এবার ট্রেনের টিকিট জালিয়াতির নেপথেও ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা। ঈদের আগে ট্রেনে ভিড় হলেও ঈদের পরে ঢাকা থেকে বেশিরভাগ ট্রেন ফাঁকাই গেছে এতোদিন। এবার তার ব্যতিক্রম। ঈদের পরদিনও উত্তরাঞ্চলের সবকটি ট্রেনের ছাদেও যাত্রীদেরকে গাদাগাদি করে যেতে দেখা গেছে। গতকাল সোমবার সকালে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনেও ছিল উপচে পরা ভিড়। রাতে দিনাজপুরগামী দ্রæতযান এক্সপ্রেসের ছিল উপচে পরা ভিড়। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে যেতে না পেরে হাজার হাজার যাত্রী ঈদের পরে যাচ্ছেন।
এদিকে, সড়কপথে যাত্রীদের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। মহাসড়কগুলোতে এখন ঢাকামুখি বাসে উপচে পরা ভিড়। সায়েদাবাদ টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির এক নেতা জানান, ঈদের পর গতকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। বাসের ছাদেও আসছে মানুষ। ফিরতি পথে ভাঙাচোরা মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের। নাব্যতা সংকটের কারণে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে রো রো ফেরি চলাচল গতকাল সকালেও বন্ধ ছিল। ঈদের পর দুদিন পার হলেও গতকাল সকালে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল ৭ শতাধিক যানবাহন। এতে করে ঢাকামুখি যাত্রীদেরকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিআইডবিøউটিসি সূত্র জানায়, নাব্যতা সংকট এবং পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে ২১টি ফেরির মধ্যে ৭টি চলাচল করছে। মাঝ পদ্মায় দুইটি ফেরি যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে চ্যানেলে আটকে ছিল। এ কারণে গতকাল সকাল থেকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকামুখি যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট না থাকলেও গাড়ির ভিড়ে অনেক স্থানেই ধীর গতিতে চলেছে বাস। এজন্য সময়টা লেগেছে অনেক বেশি। গাবতলী টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এখনও ৩/৪ ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে।
এদিকে, ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে উল্টোপথে চলা কভার্ড ভ্যানের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আটজন। হতাহতরা সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী। গত রোববার গভীর রাতে মিরসরাই উপজেলার মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম মো. কাউছার (২৫)। আহতরা হলেন- ইসমাইল (২৮), আল আমীন (২২), সোহাগ (২৪), জামাল (২০), ফরহাদ (২২), রাজীব (২১), সাগর (২৭) ও মাইক্রোবাস চালক আতিকুর রাহমান। মাইক্রোবাসের যাত্রী সুমন জানান, ১৫ বন্ধু নারায়নগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে তারা দুর্ঘটনায় পড়েন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, রাতে আহত অবস্থায় নয়জনকে হাসপাতালে আনার পর কাউছারকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঈদের তিনদিন আগে ও পরে মহাসড়কে ট্রাক, কভার্ড ভ্যান, লরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা আছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। সেই নির্দেশ যে মানা হয়নি তার প্রমান এই দুর্ঘটনা।
অপরদিকে, নৌপথেও ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতেও উপচে পরা ভিড় দেখা যাচ্ছে। গতকাল সোমবার সদরঘাট থেকে যেসব লঞ্চ ছেড়ে গেছে সেগুলোতেও ছিল উপচে পরা ভিড়। দক্ষিনাঞ্চল থেকে আসা একজন যাত্রী বলেন, মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে গতকাল দুপুর থেকে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ দেখেছি। পটুয়াখালী থেকে আসা একজন যাত্রী জানান, পটুয়াখালী লঞ্চঘাটে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। গাদাগাদি করে সবাই উঠছে লঞ্চে। আজ এ ভিড় আরও বাড়বে বলে লঞ্চ মালিকরা জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভোগান্তি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ