Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাব্বির-মুশফিকে নির্ভার বাংলাদেশ

চট্টগ্রামেও লায়নের থাবা

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে : | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং আগের দিন ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি-দুইয়ে মিলে যে শঙ্কার কালো মেঘ জমেছিল চট্টগ্রাম টেস্টের আকাশে তা কেটে যায় সকালের সূর্য্যকিরণে আভার সঙ্গে সঙ্গেই। ঈদুল আযহার ছুটির রেশ থাকায় স্টেডিয়ামের দর্শকশূণ্যতার যে ভয় দানা বেধেঁছিল, সেটিও দূর হয় ধীরে ধীরে সাগরিকার গ্যালারী পূর্ণ হবার চিত্রে। তবে সেসব পেছনে ফেলে যে কারণে এত্তসব যবনিকা, সেই ব্যাটিংয়েই শঙ্কা বেধেছিল বাংলাদেশের করূণ পরিণতির! শুরুতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে দিনশেষে আড়াইশ’ রানের (২৫৩/৬) সংগ্রহ এনে দিয়েছেন সাব্বির-মুশফিক। মুশফিক ৬২ ও নাসির ১৯ রানে খেলছেন। অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটে দুই জনে গড়েছেন ৩১ রানের জুটি।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস ভাগ্য নিয়ে এদিনও জিতলেন মুশফিকুর রহিম। ঝলমলে সকালের উইকেট, লাইনআপ, আর মিরপুর টেস্টের স্মৃতি মাথায় রেখে যথারীতি নিলেন ব্যাটিং। তবে গতকাল প্রথম দিনের সকালেই ঢাকা টেস্ট জয়ের সুখস্মৃতিতে চীড় ধরাতে বসেছিলেন ব্যাটসম্যানরা! চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের ছক এঁকে ব্যাটিং লাইনআপে ধার বাড়াতে পেসার শফিউল ইসলামের বদলে দলে ঠাঁই মিলেছে মুমিনুল হকের।
দুই টেস্ট পর মুমিনুল ফেরায় অলরাউন্ডার মিলিয়ে ৯ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছে স্বাগতিক শিবির। কোথায় নির্ভার হয়ে ব্যাট চালাবেন টপ অর্ডাররা, উল্টো দলীয় মাত্র ২১ রানে তামিম-ইমরুলকে হারিয়ে শুরুতেই চাপে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে জোড়া অর্ধশতক পাওয়া তামিম চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে নিজের ইনিংস টেনে নিতে পারেন নি দুই অঙ্কে। ৯ রানে বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে এলবিডবিøউর ফাঁদে ফেলে প্রথম আঘাত হানেন অফ স্পিনার নাথান লায়ন। এর আগে ৬ রানে ব্যাট করার সময় পেসার প্যাট কামিন্সের বলে জীবনও পেয়েছিলন তামিম ইকবাল। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা ক্যাচ মুঠোয় নিতে পারেননি তৃতীয় স্লিপের ফিল্ডার গেøন ম্যাক্সওয়েল। তবে সেটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ চাটগাঁর ছেলে।
একটু বাদেই ইমরুলকে রিভিউ নিয়ে ফেরায় অস্ট্রেলিয়া। লায়নের বল সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি ইমরুল। জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। তাতে পাল্টায় সিদ্ধান্ত, দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তিন নম্বরে টানা তৃতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ ইমরুল। ঢাকায় ০ ও ২ রান করার পর চট্টগ্রাম টেস্টেও প্রথম ইনিংসে ফেরেন ৪ রানে। এরপর কিছুটা থিতু হওযার চেষ্টা করেছিলেন ঢাকা টেস্টে ম্লান সৌম্য সরকার। লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট জুটির প্রতিরোধ ভেঙেছেন লায়ন। অফ স্পিনারের দ্রুত গতির বলে এলবিডবিøউ হয়ে ফেরেন সৌম্য। ৮১ বলে দুটি চার আর একটি ছক্কায় ৩৩ রান করে সৌম্য বিদায় নেওয়ার সময় বাংলাদেশের ছিল স্কোর ৭০/৩।
এর মাত্র ৩ রান পরই মুমিনুল হককে এলবিডবিøউর ফাঁদে ফেলে নিজের চতুর্থ উইকেট নিয়েছেন লায়ন। অফ স্পিনারের বল পিছিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দুই টেস্ট পর দলে ফেরা কক্সবাজারের ছেলে দারুণ খেলে ফিরেছেন ৩১ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলে। মুমিনুলকে ফিরিয়ে নিজের নামের পাশে একটি রেকর্ডও জুড়ে নিলেন লায়ন। চারজন ব্যাটসম্যান আউট, চার জনই এলবিডবিøউ! বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার চট্টগ্রাম টেস্টে যা হলো, তেমন কিছু আগে কখনও দেখেনি টেস্ট ক্রিকেট। একই বোলারের বলে প্রথম চার ব্যাটসম্যান এলবিডবিøউ!
প্রথম চার ব্যাটসম্যানই এলবিডবিøউ টেস্ট ক্রিকেট দেখেছে এর আগে ছয় বার। কিন্তু সেই চার উইকেট একই বোলার পেলেন এই প্রথম। প্রথম চার ব্যাটসম্যানই এলবিডবিøউ প্রথম হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার উইকেট নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তিনজনকে এলবিডবিøউ করেছিলেন গেøন ম্যাকগ্রা, একজনকে জেসন গিলেস্পি।
লায়ন ঘূর্ণিপাকে পড়া দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক মুশফিক ও ঢাকা টেস্ট জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। তবে পানি বিরতির পরপরই আঘাত হানেন অ্যাস্টন অ্যাগার। বাঁহাতি স্পিনারের অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বলে উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ২৪ রান করা সাকিব। শুরুতে মুমিনুল, পানি বিরতির পরপরই সাকিবকে হারানো পর আর কোনো ক্ষতি ছাড়াই সাব্বিরকে নিয়ে দ্বিতীয় সেশন কাটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর ২ উইকেট হারিয়ে ৮৫ রান যোগ করে স্বাগতিকরা। আসে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম অর্ধশত রানের জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিক ও সাব্বিরের অবিচ্ছিন্ন পঞ্চাশ আসে ৯৮ বলে।
সহজাত ব্যাটিংয়ে ৬২ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান সাব্বির। সিরিজে নিজের প্রথম অর্ধশতকে পৌঁছাতে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। গত বছর অভিষেকের পর নিজের প্রথম ছয় ইনিংসে তিনটি অর্ধশতক পেয়েছিলেন সাব্বির। পরের আট ইনিংসে ছিল না একটাও। এবার দলের ভীষণ প্রয়োজনের সময় পেলেন ফিফটি।
এর কিছু বাদে স্টিভেন ও’কিফের বলে দুই রান নিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান মুশফিকও। ১২৪ বলে ৪টি চারে অর্ধশতকে পৌঁছান বাংলাদেশের অধিনায়ক। সাব্বিরের সঙ্গে জুটির রান নিয়ে গেছেন তিন অঙ্কে। ইনিংসে এটাই বাংলাদেশের প্রথম শতরানের জুটি। ১৯৫ বলে এসেছে মুশফিক-সাব্বির জুটির শতক। এতে অধিনায়কের অবদান ৩৫। নিজের আগের সেরা ৬৪ ছাড়িয়ে যাওয়া সাব্বিরের ৬৫।
দ্বিতীয় নতুন বলে বাংলাদেশের প্রতিরোধ ভাঙে অস্ট্রেলিয়া। বোলিংয়ে ফিরেই সাব্বিরকে ফিরিয়ে সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন লায়ন। অফ স্পিনারের বল পুল করতে গিয়ে পারেননি সাব্বির। ভারসাম্য হারানোয় উঠে যায় পেছনের পা, সামনের পা ছিল লাইনের ওপরে। ম্যাথু ওয়েড স্টাম্প ভেঙে দেওয়ার সময় লাইনের ভেতরে কোনো অংশ ছিল না। ৬৬ রানে থামে তার লড়াকু ইনিংস।
ক্রিজে এসেই সেই লায়নকে কাভার দিয়ে চার হাঁকিয়ে নিজের রান চার অঙ্কে নিয়ে গেছেন নাসির হোসেন। বাংলাদেশের চতুর্দশ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে হাজার রানে গেলেন তিনি। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের লেগেছে ৩১ ইনিংস। আর কোন বিপদ না ঘটিয়ে নির্বিঘেœই দিন শেষ করেছেন মুশফিক-নাসির। আশা হয়ে টিকে আছেন অধিনায়ক। সঙ্গী নাসিরও খেলছেন আস্থার সঙ্গে।
ঢাকা টেস্ট জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামেও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে চায় মুশফিকের দল। এমন চাপে অস্ট্রেলিয়া সব সময় থাকে না, এমন সুযোগ সব সময় বাংলাদেশের সামনে আসে না। তাই সুযোগ দুই হাতে কাজে লাগানোর তাগিদ শুরু থেকেই দিয়ে আসছেন অধিনায়ক। এমন আত্মবিশ্বাসের মূলে অতীত। প্রথম ম্যাচে জেতার পর কখনও টেস্ট সিরিজ হারেনি বা ড্র করেনি বাংলাদেশ। দুইবার জিম্বাবুয়ে ও একবার হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ