Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গরু আছে ক্রেতা নেই

কোরবানির হাটে হঠাৎ বৃষ্টির হানা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কোরবানীর পশুরহাট জমে উঠার আগেই বাধ সেধেছে বৃষ্টি। ঈদুল আজহার আরও চারদিনর বাকি। ঢাকা শহরের মানুষ এত আগে কোরবানির পশু না কিনলেও তারা পরিবারের ছোট-বড় সদস্যরা দলবেধে এ হাট ঐ হাট ঘুরে কোরবানীর পশু দেখে। দর দাম বুঝার চেষ্টা করে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ও দুপুরে দুই দফায় রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ এ বৃষ্টির কারণে গতকাল দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু, মহিষ, উট, ছাগল ও ভেড়াসহ কোরবানীর পশু ইতোমধ্যে উঠে গেলেও ক্রেতা ও দর্শনার্থী ছিল না তেমন একটা। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে বিক্রেতারা হাটে আনা কোনবানীর পশুকে প্রণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে। সল্প সময়ের এ বৃষ্টিতে প্রতিটি হাটেই দেখা গেছে, কোরবানীর পশুর গোবর ও চনা বৃষ্টির পানিতে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এতে ক্রেতা, বিক্রেতা, দর্শনার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কাঁদার জন্য হাটের ভিতর দাঁড়ানোরও জায়গা নেই।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টি না থাকলে আজ থেকে হয়তো কিছু ক্রেতা পাওয়া যেত। তবে বেচা-কেনার সময় এখনও হয়নি। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে হাট পুরোপুরি জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
লালবাগ বেড়িবাধ হাটের আবদুল হামিদ নামে এক ইজারা আদায়কারী জানান, গত সোমবার থেকে বসে আছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত একটি গরুর ইজারাও আদায় হয়নি। গতবারের চেয়ে এবার গরুর আমদানিও তুলনামূলকভাবে কম। তিনি আরও বলেন, আরিচা রাস্তায় (ঢাকা-আরিচা সড়ক) গরুর গাড়ি আটকে আছে। এখনও হাটে ক্রেতা না এলেও আগামী দিন (আজ বুধবার) থেকে হাট জমে উঠবে এবং ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালবাগ কেল্লার মোড় শ্মশানঘাটের আগে রাস্তার দুই পাশজুড়ে ছোট-বড় গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। ফলে রাস্তায় প্রচন্ড যানজট। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মিনিট কয়েকের বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধে কাদা পানিতে সয়লাব। অন্যদিকে হাটে অসংখ্য গরু দেখা গেলেও ছাগলসহ অন্য কোনো গবাদিপশু চোখে পড়েনি।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে ৯টি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন জমির আলী। রাস্তাঘাটে যানজটের ভয়ে দুদিন আগেই চলে এসেছেন। তিনি জানান, কুষ্টিয়া থেকে ট্রাকে ২৭ হাজার টাকা ভাড়ায় ঢাকায় এসব গরু নিয়ে এসেছেন। রাস্তাঘাটের যত খরচ তা ট্রাকমালিক বহন করেছেন। তবে এবার পথে পুলিশ বা অন্য কোনো ধরনের চাঁদাবাজির দৃশ্য চোখে পড়েনি।
এদিকে যানজটের ভয়ে দুদিন আগে আসলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি জমির আলী। তিনি বলেন, ক্রেতা আসলেও দাম বলেননি। লোকজন এখনও ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কেনাকাটা শুরু করেননি।
কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে মোহাম্মদ আসলাম মিয়া গত সোমবার দুপুরে অস্ট্রেলিয়ান জাতের একটি বৃহৎ আকারের গরুসহ মোট নয়টি গরু এ হাটে এনেছেন। এ গরুর দাম হাঁকছেন আট লাখ টাকা। তার দাবি, একজন ক্রেতা চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। তিনি ছাড়েননি। তবে পাঁচ লাখ হলে বিক্রি করে দেবেন। হাটে তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বাছুর অবস্থায় গরুটি কিনে এনেছিলেন। ওই সময় বাছুরটির বয়স ছিল ১৭ মাস, ওজন ছিল সাত মণ। গত দুই বছর বাড়িতে রেখে লালন-পালন করেছেন। গরুটি জবাই করলে এখন ১৮ মণ গোশত হবে বলে তিনি দাবি করেন।
আসলাম জানান, গতবারও এ হাটেই সাতটি গরু নিয়ে এসেছিলেন। মোটামুটি ভালো ব্যবসা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত কেনার মতো দু-চারজন ছাড়া ক্রেতার দেখা পাননি। যারাই গরুটিকে দেখেন, তারা থমকে দাঁড়িয়ে দেখে শুধু দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যান। এখন পর্যন্ত হতাশ নন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে হাট পুরোদমে জমবে। ভালো গরুর ভালো দামই পাবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মেরাদিয়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটটি মেরাদিয়া বাজার থেকে শুরু করে দক্ষিণ বনশ্রীর প্রজেক্ট এলাকার বিভিন্ন অলিগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। মেরাদিয়া হাট থেকে কাজীবাড়ি পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই সারিবদ্ধভাবে গরু রাখা হয়েছে। এ সড়কটিতে আবাসিক এলাকার ২০টির মতো সংযোগ সড়ক রয়েছে। প্রতিটি সড়কেই বসানো হয়েছে হাট। এতে আসপাশের বাসা বাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে বিঘœ ঘটছে। এ কারণে এলাকার অধিকাংশ স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ এলাকার ১৮ নম্বর সড়কের বাসিন্দা ইসরাফিল আলম বলেন, বাসার নিচে হাট বসানো হয়েছে। সকালে বাজার করতে গিয়ে অল্পের জন্য গরুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছি। একান্ত জরুরি কাজ ছাড়া এখন কেউ বাসা থেকে বের হয়না। ঈদের কেনাকাটাও মাটি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া গরুর মল-মূত্রের কারণে গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, ভয় পায়। হাটের কারণে এলাকার অধিকাংশ স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত রাতে পাশের বাসায় এক লোক বাসায় প্রবেশ করতে গিয়ে গুরুর আক্রমেণে আহত হয়েছে। ইজারাদারের লোকজনকে অভিযোগ করলেও কোনও সুরাহা হয়নি। বরং তারা উল্টো বাড়ি মালিকদের ধমক দিয়ে যান।
গতকাল সকালে দক্ষিণ বনশ্রীর ১৫ নম্বর রোডে খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ফটকে তালা ঝুলছে। পাশের দোকানদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্কুলের সামনে হাট বসানোয় গতকাল স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে আসতে সমস্যা হয়। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে ভয় পায়। যাতে কোনও শিক্ষার্থী দুর্ঘটনায় না পড়ে সে জন্য আগে ভাগেই ঈদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ শরীফ বলেন, এবছর সবখানেই বন্যা। বন্যার কারণেই কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা গুরু রাখতে পারছে না। সে জন্য অনেক আগেই ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। তাদেরকে গরু রাখার জায়গা করে দিতে হয়েছে। ব্যবসায়ীদের নিয়েই আমাদের ব্যবসা। তারা গরু না আনলে হাট হবে কিভাবে? সে জন্য তাদের দিকেও আমাদের দেখতে হয়। না হয় আমরা ব্যবসা করবো কিভাবে?
একই অবস্থা দেখা গেছে, আফতাব নগর, উত্তর শাজাহানপুরের খিলগাঁও রেলগেটসংলগ্ন মৈত্রীসংঘের মাঠের হাট, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পাশের হাট, শ্যামপুর বালুর মাঠের হাট, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গার হাট ও ধুপখোলার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠের পাশের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর গোলচত্বরসংলগ্ন খালি জায়গার হাট, ভাটারা সাঈদনগর হাটে।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কিছু কিছু জায়গায় হাট শুরু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই হাট বসাতে নিষেধ করেছি। কিন্তু ইজারাদাররা বলছেন, বন্যার কারণে ব্যবসায়ীরা পশু রাখার জায়গা পাচ্ছেন না। তাই কিছু কিছু এলাকায় ইজারাদাররা পশু রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।



 

Show all comments
  • কাঞ্চন ৩০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    আজ কাল থেকে কেনা বেচা শুরু হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানি

৯ জুলাই, ২০২২
৯ জুলাই, ২০২২
৮ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ