নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের আগে দু’টি বিষয় বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল- কন্ডিশন আর উইকেট। এশিয়ায় অজিদের অতীত আর ঘরের মাঠে নিজেদের সাফল্য বিবেচনায় স্পিন নির্ভার উইকেট তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাটিতে খেলা সর্বশেষ তিন টেস্টে প্রতিপক্ষের ৪৮ উইকেটের ৪৭টিই নিয়েছে স্পিনাররা। এবারও মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে স্মিথ-ওয়ার্নারদের কুপোকাত করেছিলেন তিন স্পিনার সাকিব-মিরাজ-তাইজুল। তবে ৪৩ রান এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশের ব্যাটিংটা হলো আগের চেয়ে ম্লান। তামিমের সঙ্গে কেবল লড়াইয়ে সামিল হতে পারলেন অধিনায়ক মুশফিক।
শুরুতে সৌম্য-ইমরুলকে হারানোর ধাক্কা সামলে প্রথম সেশনেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। আক্রমণটা সচল রেখেছিলেন তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও দারুণ ধারালো তামিমের ব্যাট। মুশফিকও যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন প্রথম ইনিংসের বড় রান না করার দুঃখটা ঘোঁচাতে। দ্বিতীয় ইনিংসেও অর্ধশতক করেন তামিম। প্রথম ইনিংসে বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান করেছিলেন ৭১ রান। এনিয়ে ছ’ বার টেস্টের দুই ইনিংসেই পঞ্চাশ কিংবা তার বেশি রান করলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে এতদিন এই রেকর্ড এককভাবে ছিল হাবিবুল বাশারের। ৫০ টেস্টের ক্যারিয়ারে সাবেক অধিনায়ক ৬ বার ছুঁয়েছিলেন এক টেস্টে জোড়া পঞ্চাশ। তামিম তাকে স্পর্শ করলেন নিজের ৫০তম টেস্টেই। তারপরও তৃতীয় দিনের চা বিরতির পরপরই ২২১ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য আরও বড় দিতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিকুর রহিম অদ্ভুতুড়ে আউট হয়েই ঝামেলা বাধিয়ে দিয়েছেন। ৪১ রান করেছেন অধিনায়ক। কিন্তু ননস্ট্রাইক প্রান্তে ক্রিজে না থাকার মাশুল দিয়েছেন মুশফিক। লায়নের হাত ছুঁয়ে বল স্টাম্পে যাওয়ায় রানআউট হয়ে ফিরেছেন। এরপর চার বল খেলে কোনো রান না করেই ওয়েডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন নাসির হোসেন। সাব্বির খেলছিলেন নিজের মারমুখী ভঙ্গিতেই। কিন্তু আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে তাঁকেও ফিরতে হয়েছে। প্রথম ইনিংসের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করতেই হয়তো আর রিভিউ নিলেন না, ২২ রানে থামলো পথচলা। শূন্য রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর মিরাজ (২৬) আর শফিউলেই দুই শ পেরোয় স্বাগতিক দল, থামে ২২১তে। ২৬৫ রানের টার্গেট দিয়েও হাসিখুশি দেখাচ্ছিল মুশফকিদের। মিরপুরে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করার রেকর্ডটা যে মাত্র ২০৮ রানের!
তাদের সে হাসি মুছে গেছে শেষ বিকেলে। মাত্র ২৯ রানে ২ উইকেট হারানো অধিনায়ক সহ-অধিনায়কের উজ্জীবিত ব্যাটিংয়ে পথ খুঁজে পেয়েছে সফরকারীরা। আর নিরাপদ মনে হওয়া ২৬৫ রানের টার্গেটকে শেষ বিকেলে বড্ড কম মনে হচ্ছে। তৃতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ২ উইকেটে ১০৯। জয়ের জন্য আর ১৫৬ রান দরকার অস্ট্রেলিয়ার।
এমন অল্প পূঁজি নিয়েও বাংলাদেশেকে আশা দেখাচ্ছে এশিয়া অস্ট্রেয়িার অতীত। গত বছর পালেকেলে টেস্টে জয়ের জন্য ২৬৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬১ রানে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মিরপুরের স্পিনবান্ধব উইকেটে তাহলে কেন পারবে না বাংলাদেশ? খেলাটা ক্রিকেট আর দলটা অস্ট্রেলিয়া বলেই হয়তো শঙ্কা থেকে যায়। মূল দুই ভরসা স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার এখনো উইকেটে। তবে ইতিহাস বাংলাদেশের পক্ষেই।
উপমহাদেশে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়া যে কখনো জিততে পারেনি, তা নয়। চতুর্থ ইনিংসে টার্গেট তাড়া করতে নেমে এখানে সাতবার জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০৭ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা বাংলাদেশের বিপক্ষেই, ২০০৬ ফতুলা টেস্টে। কিন্তু তাঁদের বাকি ছয়টি রান তাড়া করে জয়ের নজির আশা জোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। সব কটি জয়ই এসেছে দুই শর নিচের লক্ষ্যে। অর্থাৎ উপমহাদেশে চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া মাত্র একবারই দুই শর বেশি রান তাড়া করে জিততে পেরেছে।
বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছে আরও একটি পরিসংখ্যান। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২১৭ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া; যা গোটা ম্যাচে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন সংগ্রহ। বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২৬৫ রানের টার্গেট এ ম্যাচের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে তাড়া করতে হচ্ছে ম্যাচের সবচেয়ে বড় টার্গেট। আর উপমহাদেশের মাটিতে ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার দলগত ব্যাটিং পারফরম্যান্সই সবচেয়ে বাজে (২৬.৬৯)।
তবে উপমহাদেশের বাইরে গোটা এশিয়া বিচার করলে জয়ের আশা করতেই পারে অস্ট্রেলিয়া। এশিয়ায় তিন শর নিচে টার্গেট তাড়া করতে নেমে তাঁরা হেরেছে মাত্র একবার। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সর্বশেষ চারটি চতুর্থ ইনিংসে দলগুলোর (১৬৪, ২২১, ৭/১০১ ও ১৬৭) সংগ্রহও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নয়। মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০৮ রান তাড়া করে জিতেছে ইংল্যান্ড।
৫ম দিনে গড়াচ্ছে না টেস্ট, সেটি যে কেউই বলে দিতে পারবে। আজ তবে মিরপুরে কি আরেকটি জয়ের দেখা পাবে বাংলাদেশ? কাজটি কঠিন হলেও অসম্ভব কী?
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া, মিরপুর ২০১৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২৬০
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ২১৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : আগের দিন ৪৫/১
বল ৪ ৬
তামিম ক ওয়েড ব কামিন্স ৭৮ ১৫৫ ৮ ০
সৌম্য ক খাজা ব আগার ১৫ ৫৩ ৩ ০
তাইজুল এলবিডবিøউ ব লায়ন ৪ ২২ ১ ০
ইমরুল ক ওয়ার্নার ব লায়ন ২ ১৮ ০ ০
মুশফিক রান আউট (লায়ন) ৪১ ১১৪ ১ ১
সাকিব ক কামিন্স ব লায়ন ৫ ১১ ১ ০
সাব্বির ক হ্যান্ডসকম্ব ব লায়ন ২২ ৩৬ ২ ১
নাসির ক ওয়েড ব আগার ০ ৪ ০ ০
মিরাজ ক খাজা ব লায়ন ২৬ ৩৫ ৪ ০
সফিউল ক হ্যান্ডসকম্ব ব লায়ন ৯ ২৮ ০ ১
মুস্তাফিজ অপরাজিত ০ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১৫, লে বা ৩, ও ১) ১৯
মোট (৭৯.৩ ওভার, অল আউট) ২২১
বোলিং : হ্যাজেলউড ৪.১-২-৩-০, কামিন্স ১৪-৩-৩৮-১, লায়ন ৩৪.৩-১০-৮২-৬, ম্যাক্সওয়েল ৫-০-২৪-০, আগার ২০.৫-২-৫৫-২, খাজা ১-০-১-০।
উইকেট পতন : ১-৪৩ (সৌম্য), ২-৬১ (তাইজুল), ৩-৬৭ (ইমরুল), ৪-১৩৫ (তামিম), ৫-১৪৩ (সাকিব), ৬-১৮৬ (মুশফিক), ৭-১৮৬ (নাসির), ৮-১৮৬ (সাব্বির), ৯-২১৪ (শফিউল), ১০-২২১ (মিরাজ)।
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
ওয়ার্নার অপরাজিত ৭৫ ৯৬ ১১ ১
রেনশ এলবিডবিøউ ব মিরাজ ৫ ২০ ০ ০
খাজা ক তাইজুল ব সাকিব ১ ৬ ০ ০
স্মিথ অপরাজিত ২৫ ৫৮ ১ ০
অতিরিক্ত (বা ৩) ৩
মোট (৩০ ওভার, ২ উইকেট) ১০৯
বোলিং : মিরাজ ১৪-২-৫১-১, নাসির ৩-২-২-০, সাকিব ৮-২-২৮-১, তাইজুল ৪-০-১৭-০, মুস্তাফিজ ১-০-৮-০।
উইকেট পতন : ১-২৭ (রেনশ), ২-২৮ (খাজা)।
*৩য় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।