পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নোবেল বিজয়ী সুচির মায়ানমারে রাখাইন প্রদেশের নিরাপত্তা রক্ষীদের তান্ডবে রোহিঙ্গা মুসলিম শিশু নারীরা জীবন বাঁচাতে ছুঁটোছুটি করছে। বিপন্ন মানবতা অথচ নীরব বিশ্ববিবেক। রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবর্ণনীয় দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস ও কারাতের টেলিভিশন আল জাজিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে নিরাপত্তা রক্ষাকারী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সঙ্গে তাদের বিদ্রোহ এত তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, আতঙ্কিত বেসামরিক লোকজন রুদ্ধশ্বাসে ছুটে আসছে বাংলাদেশের দিকে। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। ‘অ্যাজ মিয়ানমার ফাইটিং সোয়েলস, এ ডেসপারেট ফ্লাইট টু দ্য বর্ডার’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক এরিক নাগোরনি। এতে তিনি আরো লিখেছেন, যারা এ অবস্থার শিকার হচ্ছেন তারা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম। তারা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে নিষ্পেষণের মুখোমুখি। রাখাইনে বসবাস করেন প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এখানে বিদ্রোহী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের ভিতরে ভয়াবহ লড়াই ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সহিংসতা শুরুর পর নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬। যদিও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ সংখ্যা অনেক বেশি। নিহতদের মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য। কিন্তু বিদ্রোহী ও নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যকার এই লড়াইয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েছেন বেসামরিক সাধারণ মানুষ। ফেব্রæয়ারিতে জাতিসংঘ এক রিপোর্টে বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে গণধর্ষণ করা হয়েছে। কয়েক শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এতে ৯০ হাজারের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রোববার তাদের কিছু সংখ্যক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এই যাত্রা ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অনেকেই এভাবে আশ্রয় নিতে পারেন নি। তাদেরকে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যক্ষদর্শী ও শরণার্থীরা বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাকর। মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে রাখাইনে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের আকাশে টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। যাদেরকে (বাংলাদেশে) প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না তার মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। সর্বশেষ সহিংসতার পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে দুই হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে সক্ষম হয়েছেন। আরো কয়েক শত আটকরা পড়েছে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’। তাদের সামনে সুযোগ খুবই সীমিত। তারা সুযোগ খুঁজছেন। অথবা অপেক্ষা করছেন দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরে যাবেন।
এদিকে আল জাজিরা টিভির খবরে বলা হয়, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করছে সে দেশের সেনাবাহিনী। নিরস্ত্র রোহিঙ্গা মুসুলিম শিশু, নারী ও পুরুষদের গুলি করে সেনারা হত্যা করছে বলে অ্যাক্টিভিস্টরা দাবি করেছেন। সেনারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার আরাকান রোহিঙ্গা সালভ্যাশন আর্মি (আরসা) পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মংডু, বুথিডাউং ও রাথেডাউং এলাকায় সেনাবাহিনীর এই অভিযান শুরু হয়েছে। এই তিন অঞ্চলে প্রায় ৮ লাখ মানুষের বাস। জারি করা হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা কারফিউ। সরকার একশ জন নিহতের কথা জানালেও মানবাধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন মুসলিম সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের অন্তত ৮শ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আল জাজিরার পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রভাবে এই তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মংডুর বাসিন্দা আজিজ খান জানান, শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে নিরীহ মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। সরকারি বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আমাদের গ্রামেই অন্তত ১১ জনকে হত্যা করেছে। গ্রামে আসার পর তারা নড়াচড়া করছে এমন কিছু দেখলেই গুলি করতে থাকে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। এক নবজাতকও রক্ষা পায়নি।
ইউরোপভিত্তিক রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার রো নায় স্যান লুইন জানান, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া নতুন অভিযানে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। মসজিদ ও মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েক হাজার মুসলিম খাদ্য ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। সরকার ও সেনাবাহিনীর কারণে আমার চাচাও দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাদেরকে সরকার কোনও সহযোগিতা করেনি। উল্টো সরকারি বাহিনীই তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে লুটপাঠ চালিয়েছে। খাবার, আশ্রয় ও নিরাপত্তা নেই। কখন মৃত্যু হবে তাও জানে না তারা। বুথিডাউং শহর থেকে মুইন্ট লুইন নামের বাসিন্দা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, সববাড়িতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ হোয়াটস্যাপে হত্যাযজ্ঞের ভিডিও আদানপ্রদান করছেন। নারী ও শিশুকে হত্যার ভিডিও আসছে। নিষ্পাপ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা কেমন আতঙ্কে আছি তা আপনারা কল্পনাই করতে পারবেন না। কেউই তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চায় না। কিন্তু হাসপাতাল, বাজার বা যে কোনও স্থানে যেতে মুসলিমরা এখন ভয় পাচ্ছে। বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
গত বছর অক্টোবরে ৯ পুলিশ হত্যার পর রাখাইন রাজ্যে আং সান সুচির সরকার কয়েক হাজার সেনা পাঠিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। ওই অভিযানের সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। ফর্টি রাইটস নাম মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ জানান, কর্তৃপক্ষ সব রোহিঙ্গাকেই যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করছে। সরকার নিহতের যে সংখ্যা বলছে তা ধামাচাপা দেওয়ার শামিল হবে। অনেক মানুষ পালাচ্ছে এবং সরকার তাদের কোনও সহযোগিতা করছে না। রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১১ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গার বসবাস। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বৈষম্যের শিকার হন। কয়েক প্রজন্ম ধরে বাস করলেও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে দাবি করে মিয়ানমার এবং তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।