পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতারণার শিকার প্রায় ১শ’ ২৩ জন ভিসাপ্রাপ্ত হজযাত্রীর ভাগ্যে হজ জোটেনি। হজ ক্যাম্প থেকে চোখের পানি মুছতে মুছতে তারা স্ব স্ব বাড়ী ফিরে গেছেন। গতকাল সোমবার রাত ৯টায় সাউদিয়ার এয়ারলাইন্সে’র শিডিউল ফ্লাইটটি (এসভি-৮০৫) নিয়মিত যাত্রী নিয়ে রিয়াদ গেছে। সর্বশেষ এ ফ্লাইটটিতেই হজ ক্যাম্পে প্রতারণার শিকার ৮১ জন হজযাত্রীকে হজে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি।
বহু চেষ্টা করেও এসব হজযাত্রীকে হজে প্রেরণ সম্ভব হয়নি। সউদী সরকারের অনুমতি না থাকায় সাউদিয়ার এ ফ্লাইটটি হজযাত্রী পরিবহনে সম্মত হয়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। হজ ফ্লাইট শেষ হয়ে গেছে রোববার দিবাগত মধ্যরাতেই। ২৭ আগস্ট দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত বিমান ও সাউদিয়ার ফ্লাইট যোগে ১ লাখ ২৭ হাজার ২শ’ ২১জন হজযাত্রী সউদী আরবে পৌছেছেন। ঢাকাস্থ স্উদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শ’ ৯৬জন হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু করেছে। হজ ক্যাম্পে গতকাল বজলুল হক হারুন এমপি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, যেসব বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে যারা হজে যেতে পারেননি সেসব হজ এজেন্সি’র লাইসেন্স বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হবে।
তিনি অত্যান্ত সুন্দরভাবে সকল হজযাত্রী হজে যেতে পারায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। এছড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ নির্বিঘেœ হজ ভিসা ইস্যু করায় তিনি সউদী রাষ্ট্রদূতকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। রাজশাহীর হজ এজেন্সি ইকো এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজমের প্রতারনার শিকার ২৩ জন হজযাত্রীকে হজে পাঠাতে না পারায় গ্রুপ লিডার আতাউর রহমান ও তার স্ত্রীকে হজ ক্যাম্প থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হজযাত্রীদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে পলাতক ইকো এভিয়েশনের প্রতারক মালিক রুহুল কুদ্দুসকে পুলিশ খুঁজছে।
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হজ ও উপ-সচিব সাখাওয়াত হোসাইন এবং হজ সমন্বয়কারী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব হাফিজুর রহমানকে হজ ক্যাম্পে খুঁেজ পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে হজ ক্যাম্পের ফ্লোরে আশ্রয় নেয়া প্রতারণার শিকার হজযাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করে। তাদেরকে শান্তনা দেয়ার মতো কোনো কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে হজ ক্যাম্পে কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রতারণার শিকার ভিসাপ্রাপ্ত ১শ’ ২৩জন হজযাত্রীর নাম ঠিকানা ও পাসপোর্ট নম্বর রেজিষ্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করেন। এসব অপেক্ষমান হজযাত্রীদের রাত ৮টা ১০ মিনিটে সাউদিয়ার শিডিউল ফ্লাইট যোগে (এসভি-৮০৫) হজে প্রেরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্ত শেষ পর্যন্ত এ ফ্লাইটিতে তাদের হজে পাঠাতে সম্ভব না হওয়ায় দায়ী হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আগামীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের হজে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
প্রতারণার শিকার হয়ে হজে যেতে না পেরে আশকোনার হজক্যাম্পে এসে অঝোরে কাঁদছেন এমন ৮১ জন হজযাত্রী। এদের একজন স্কুলশিক্ষক নূর আলম সিদ্দিক। বাড়ি রংপুরের পীরগাছার কল্যানী ইউনিয়নে। চাকরি জীবনের শেষ সম্বল দিয়ে হজে যাবার নিয়ত করেন। টাকা-পয়সা জোগাড় করে ৩ লাখ টাকা তুলে দেন হজ এজেন্সি আল-সাফা এয়ার ট্রাভেলস (২৩৩)-এর স্বত্বাধিকারী সালেহ আকবরের হাতে। সর্বমোট ১৬জন হজযাত্রীর পাসপোর্ট হাতে দিয়ে গত এক সপ্তাহ যাবত তাদেরকে হজ ক্যাম্পে ফেলে প্রতারক হজ এজেন্সি’র মালিক সালেহ আকবর সউদি আরবে পালিয়ে গেছে। রংপুরের হজযাত্রী নূরুল ইসলাম, আবুল আউয়াল শাহ তার স্ত্রী, বেগম হোসনে আরা, খোরশেদ আলম, জেসমিন পারভিন নাছিমা, এস এম নজরুল ইসলাম, নুরন্নাহার বেগম, সুলতান মিয়া, খাইরুজ্জামান , সেলিনা ডেইজি, শাহিদার রহমান, মোসলেম উদ্দিন আজাদী, হাফিজা খাতুন মায়া এতথ্য জানান। তারা প্রতারক সালেহ কবরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াসহ তার লাইসেন্স বাতিলের দাবীতে পরিচালক হজ-এর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন। ইকো এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজমের প্রতারণার শিকার ২৩জন হজযাত্রী হজে যেতে পারেনি। তারা কান্নাকাটি করে বিকেলের দিকে গ্রামের বাড়ীর পথে যাত্রা করেছে। ইকো এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী বিশ্ব প্রতারক রুহুল কুদ্দুস তার শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় আত্মগোপন করে রয়েছে। প্রতারক রুহুল কুদ্দুস রাজশাহী এলাকায় হজযাত্রীদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে প্রচুর জমি ক্রয় করেছে। তার প্রতারক গ্রুপ লিডার আতাউর রহমান ও তার স্ত্রী রাজশাহীতে হজযাত্রীদের টাকা দিয়ে মটর সাইকেলের শো’রুম দিয়েছে। এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করে এজেন্সি’র লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। হাবের শীর্ষ নেতা রুহুল আমিন মিন্টু এ অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রতারক রুহুল কুদ্দুস প্যান ব্রাইট ট্রাভেলসের ৪৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে বলে ঐ হাব নেতা জানান। সকারের দিকে ইকো এভিয়েশনের প্রতারক গ্রুপ লিডার আতাউর রহমান ও তার স্ত্রীকে হজ ক্যাম্প থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে বিমান বন্দর থানায় নিয়ে গেছে।
বিকেলে হজ ক্যাম্পে কর্তব্যরত এস আই আসাদ সাংবাদিকদের জানান, সর্বশেষ ১শ’ ২৩জন প্রতারণার শিকার হজযাত্রী হজ ক্যাম্পে আটকা পড়েছিলেন। বিমানের টিকিট না থাকায় এসব হজযাত্রী হজে যেতে পারেননি। দায়ী হজ এজেন্সি’র নামসহ হজযাত্রীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। হজ এজেন্সি উলামা আউলিয়া হজ গ্রুপ বাংলাদেশ (১৪৪৫)-এর প্রতারক মালিক আক্তারুজ্জামান কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও যশোরের হজযাত্রী ফাইজুল ইসলাম তার মা ফেরদৌসী বেগম, হাসান আলী, বারাকাত উল্লাহ, জাহানারা বেগম, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও আহসান উল্লাহর কাছ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে নিয়ে ভিসা করে টিকিট না করেই পালিয়ে গেছে। এসব হজযাত্রী হজ ক্যাম্পে পুলিশের কাছে তাদের নামের তালিকা লিখে কান্নাকাটি করে বাড়ী চলে গেছেন। গোল্ডেন বেঙ্গল ট্রাভেলসন এন্ড ট্যুরস লিমিটেডের (৩৪৪) প্রতারণার শিকার হজযাত্রী ফকির মোহাম্মদ তার স্ত্রী জাহেদা ও নূর মোহাম্মদ হজের পুরো টাকা পরিশোধ করার পরেও টিকিটের অভাবে হজে যেতে পারেনি। গোল্ডেন ট্রাভেলস এন্ড কার্গো সার্ভিস (০৫৬২)-এর প্রতারণার শিকার ৮জন হজযাত্রী ভিসা পেয়েও হজে যেতে পারেননি। মদিনা এয়ার এভিয়েশনের প্রতারক মালিক সাইফুল ইসলাম ৭জন হজযাত্রীকে হজ ক্যাম্পে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের হজযাত্রী ইনসান আলী ও হাফিজ উদ্দিন মিয়া জানান, প্রতারক সাইফুল ইসলাম দু’দিন ধরে টেলিফোন ধরে না। মিছফালা ট্রাভেলসের প্রতারণার শিকার হজযাত্রী জিল্লুর রহমান তার স্ত্রী সাবিরা বেগম, মা রিজিনা সরকার, আব্দুল মালেক, ইয়াসিন আলী, আজহার আলী ও গ্রুপ লিডার আশরাফুল ভিসা হওয়ার পরেও টিকিট না দেয়ায় হজে যেতে পারেনি। গত এক সপ্তাহ হজ ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে আজ ফ্লাইট হবে কাল ফ্লাইট হবে বলে তাদেরকে ধোকা দিয়েছে এজেন্সি’র মালিক। ইকো এভিয়েশনের গ্রুপ লিডার ফরিদুর রহমান ও তার ছেলে রাজু ১১জন হজযাত্রী টিকিট দেয়ার কথা বলে পাসপোর্ট নিয়ে গা-ঢাকা দেয়। হজযাত্রী মো: আলী, লোকমান, জ্যোৎন্সা, মমতাজ আল,ি ইসমাইল হোসেন, মালেক, নূরল হুদা, মামুনুর রশিদ, মা ফাতেমা বেগম, ভুলু সরদার, নেজাম উদ্দিন স্ত্রী সাহেরা খাতুন, আব্দুল মান্নান তার স্ত্রী রিজিয়া সায়েদুর রহমান ও তার স্ত্রী কোহিনুর , আলমাস আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিন লাখ দশ হাজার টাকা করে দিয়ে অনেকেই ২০১৫ সাল ও ২০১৬ লাখ থেকে হজে যাওয়ার আশায় ইকো এভিয়েশনের কাছে জিম্মি অবস্থায় রয়েছি। আবাবিল ইন্টারন্যাশনাল হজ ট্যুও এন্ড ট্রাভেলস লি:-এর প্রতারক মালিক আব্দুল মালেক সায়েদাবাদ বায়তুল ফালাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জুনাইদ আহমদকে হজে পাঠানোর কথা বলে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে সউদি আরবে পালিয়ে গেছে। প্রতারক আব্দুল মালেকের নিকট আত্মীয় আব্দুন নুর গত তিন দিন যাবত হজযাত্রী জুনাইদ আহমেদের কাছে আরো অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দাবি করে । না হয় তাকে হজে পাঠানো হবে না। তার ভিসা হয়েছে কিন্ত টিকিট না দেয়ায় সে হজে যেতে পারেননি। গতকাল পরিচালক হজ-এর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এছাড়া আল-বালাদের ১জন, সাইদ এয়ার-এর ৩জন, আশা এভিয়েশনের ৬জন, গুলমাননে মোহাম্মদীয়া’র ৭জন, ইউনাইটেডের ৫জন, সাউথ এশিয়ানের ইউরোএশিয়া’র ২জন প্রতারণার শিকার হয়ে হজে যেতে পারেনি বলে জানা গেছে। হজ ক্যাম্পের অফিস সহকারী সোহেল সন্ধ্যায় জানান, প্রতারণার শিকার ৪৩জনকে এখন পাওয়া গেছে । তাদেরকে শান্তনা দিয়ে স্ব স্ব বাড়ীতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। রোববার বিকেল ৩টার দিকে পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম হজ ক্যাম্পে ভিসাপ্রাপ্ত ও বিমানের টিকিটপ্রাপ্ত চট্রগ্রামের চারজন বৈধ হজযাত্রী’র পাসপোর্ট হজ ক্যাম্পের শাখায় আটকে রেখে রাতের হজ ফ্লাইটে তড়িঘড়ি সউদী আরবে চলে গেছেন। নিশাল ওভারসীজের (১৮৩)’র চার জন হজযাত্রী কাজী মো: আব্দুল করিম তার মাতা সুয়া খাতুন , আব্দুল মাহবুব ও তার স্ত্রী রবিজা খাতুনের ভিসাযুক্ত পাসপোর্টের ফাইল জব্দ করার নিদের্শ দেন। কিভাবে এসব পাসপোর্টের ভিসা হয়েছে তা’ হজের পরে এসে পরিচালক তদন্ত করবেন। পরে সন্ধ্যার দিকে উল্লেখিত অসহায় হজযাত্রীরা চোখের পানি মুছতে মুছতে চট্রগ্রামের বাড়ীর পথে যাত্রা করেন। খাজা আজমীর ট্রাভেলসের (৮৮১) স্বত্বাধিকারী শেখ ইউনুসুর রহমান রাতে ইনকিলাবকে জানান, আমার ৫৩জন হজযাত্রীকে লিড এজেন্সি হিসেবে চট্রগ্রাম জোনের হাব মহাসচিব মাহমুদুল হক পেয়ারুর নিশান ওভারসীজ ও হক ইন্টারন্যাশনাল (৩৮৯)-এর মাধ্যমে হজে পাঠাতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। কিন্ত চট্রগ্রাম হাবের মহাসচিব পেয়ারু প্রতারণা করে ৭জন হজযাত্রীর ভিসা করেনি এবং উল্লেখিত ৪জন হজযাত্রীর ভিসা টিকিট করে দিয়ে সউদী আরবে পালিয়ে গেছে। সে ৪২জন হজযাত্রীকে সউদী আরবে নিয়েছে। শেখ ইউনুসুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিশান ওভারসীজের মালিক পেয়ারু একজন প্রতারক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।