Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেরি সেক্টরে ঘরমুখো মানুষের অপেক্ষা করছে চরম ভোগান্তি

বিকল ফেরি আর উজানের ঢল

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৩ পিএম, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

সীমান্তের ওপারের মাত্রাতিরিক্ত বালু মিশ্রিত ঢলের কারণে পদ্মা-মেঘনার প্রবল স্রোতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ফেরি সেক্টরগুলোতে যানবাহন পারাপারে সঙ্কট ক্রমশ ঘনিভূত হচ্ছে। প্রবল স্রোতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়াসহ অপেক্ষাকৃত দূর্বল শক্তির ফেরিগুলো যানবাহন পারপার করতে পারছে না। ফলে আসন্ন ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখে দেশের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ফেরি সেক্টরেই গাড়ীর লাইন ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১টি জেলার যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি প্রধান দুটি স্থলবন্দর এবং মোংলা সমুদ্র বন্দরের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সন্নিহিত এলাকার পণ্য পরিবহনও বিঘিœত হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখি পশুবাহী বিপুল সংখ্যক ট্রাকও আটকা পড়ছে দৌলতদিয়া ও কাঠালবাড়ী ঘাটে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস ও কারসহ পশুবাহী ট্রাকগুলো পারপার করা হলেও অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ২-৩দিন ধরে ফেরি ঘাটে পড়ে আছে।
গতকাল সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বিআইডবিøউটিসি তার ফেরি বহরের সাহায্যে প্রায় সাড়ে ৭হাজার যানবাহন পারপারের পরেও দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া, শিমুলিয়া, কাঠালবাড়ী, ল²ীপুর ও ভোলাতে আরো প্রায় দেড় হাজার যানবাহন অপেক্ষমান ছিল। দুপুর ৩টা পর্যন্ত পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সবগুলো ফেরি সেক্টরেই অপেক্ষমান গাড়ী বহর নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় কতৃপক্ষ। পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া এবং মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া ও কাঠালবাড়ীতে গাড়ীর লাইন ৩-৫কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করছে। বুধবার সকাল থেকেই ঈদের ঘরমুখি যাত্রীদের নিয়ে ফেরিঘাটগুলোতে বিশেষ বাস সার্ভিসের অতিরিক্ত যানবাহনসহ প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকবে। কিন্তু তখন দৈনিক গড়ে ১১ হাজার যানবাহন পারপরান করতে না পারলে সংকট ক্রমশ বাড়বে। গতকাল সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় সংস্থাটির ফেরি সেক্টরগুলোতে মোট যানাবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ হাজারেরও কম। প্রয়োজনীয় ফেরির অভাবসহ পদ্ম-মেঘনার প্রবল স্র্রোত সঙ্কট বাড়াচ্ছে। গতকাল দপুর পর্যন্ত পাটুরিয়া সেক্টরে রো-রো ফেরি ‘হজরত শাহ জালাল (রঃ)’ , ‘বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান’ ও ‘বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান’ মেরামতে ছিল। অপরদিকে মাওয়া সেক্টরে কে-টাইপ ফেরি ‘কামিনী’ ও ‘কেতকী’ ছাড়াও ডাম্ব ফেরি ‘রায়পুরা’ এবং ছোট ফেরি ‘কর্ণফুলী’ মেরামতে ছিল। এসব ফেরি সচল হবার পাশাপাশি ডকইয়ার্ডে থাকা আরো ২টি রো-রো ফেরি সচল হয়ে যানবাহন পারপারে নিয়োজিত হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। নচেত আগামী বুধবার থেকে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা রয়েছে নৌ পরিহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডবিøউটিসি’র দায়িত্বশীল মহলেও। অচল ফেরিগুলো যতদ্রুত সম্ভব মেরামতের নির্দেশ দেয়া হলেও চলমান দূর্বল ইঞ্জিনের বেশ কয়েকটি ফেরিই পদ্মার বালু মিশ্রিত প্রবল স্রোত অতিক্রম করতে হিমশিম খাচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে আগে যেখানে ৩০ মিনিটে ফেরি পারপার হত, এখন তা প্রায় এক ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটেও সময় লাগছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সেক্টরে মূল চ্যানেলটি ছাড়াও বিকল্প ‘লৌহজং চ্যানেল’ দিয়েও ফেরি চলাচল করছে।
অপরদিকে দেশের দীর্ঘতম ফেরি রুট ভোলা-ল²ীপুরেও যানবাহন পারাপার মারাত্মক সঙ্কটে রয়েছে। চট্টগ্রামের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের ভোলা-ল²ীপুর ফেরি সেক্টরের ২৮ কিলোমিটার নৌপথে মাত্র ৩টি কে-টাইপ ফেরি গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ১৬৮টি যানবাহন পারাপার করলেও অপেক্ষমাণ ছিল আরো পৌনে ২শ’। ফলে দেশের ৩টি বিভাগ ছাড়াও তিনটি সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ের মুখে। তবে আসন্ন ঈদের ভীড় সামাল দিতে আগামী বুধবার সকাল থেকে দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে প্রতি ২৪ ঘন্টায় নুন্যতম ১১ হাজার করে যানবাহন পারাপার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহাল মহল। নচেত অনেক ঘরমুখি মানুষকে ফেরি ঘাটেই ঈদের নামাজ আদায় করতে হতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করেছেন মহলটি। তবে বিআইডবিøউটিসি’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রবল স্রোত অতিক্রম করে ফেরিগুলো যাতে নির্বিঘেœ যানবাহন পারপার করতে পারে সে লক্ষ্যে অচল ফেরিগুলোর মেরামত কাজ দ্রুত শেষ করারও চেষ্টা চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ