পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আরাকান রাজ্যে (পরিবর্তিত নাম রাখাইন স্টেট) শান্তি ফিরিয়ে আনতে রোহিঙ্গাদের অবাধে চলাচলের স্বাধীনতা ও নাগরিকত্ব নিশ্চিতের জোরালো তাগিদ দিয়ে সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের রিপোর্ট মিয়ানমার সরকারের কাছে পেশ করা হয় গেল ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন আনান কমিশনের রিপোর্টকে অংসান সুচির জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা’ হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু এরপর কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই সমগ্র আরাকানজুড়ে নিরস্ত্র সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর দলনপীড়ন ও সহিংসতা নতুন মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ‘বাঙ্গালী’ আখ্যা দিয়ে চলছে রোহিঙ্গা মুসলমান খেদাও অভিযান। বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে অতীতের সেই একই কায়দায় বিশটি পুলিশ ও নিরাপত্তা চেকপোস্টে ‘বোমা হামলা’ চালায় সুযোগসন্ধানী তৃতীয় কোন পক্ষ কিংবা পাতানো খেলার আওতায়। দ্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামক একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করে আরও হামলা চালানোর হুমকি দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। দেশটির সরকারি সূত্র হামলায় পুলিশসহ ১২ জন নিরাপত্তা সদস্য এবং ৭৭ জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয় বলে করেছে। গতবছর ৯ অক্টোবর বর্মী সীমান্ত চৌকিতে দুস্কৃতকারীদের এ ধরনের আচমকা হামলায় ৯ জন পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিনাতদন্তে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ‘সন্ত্রাসী’ সাব্যস্থ করেই তাদের উপর সর্বাত্মক নিপীড়ন চালায় মিয়ানমার শাসকগোষ্ঠি ও বৌদ্ধমগরা। ১৯৯১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রেজুপাড়ায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ক্যাম্পে বর্মী সীমান্তরক্ষীদের হামলা ও অস্ত্রশস্ত্র লুটপাটের ঘটনার পরও একইভাবে নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর নেমে আসে পৈশাচিক বর্বরতা। এবারও অনুরূপ ঘটনার সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের পাড়ায় পাড়ায় বসতঘরে তল্লাশি (খানা তল্লাশি) চালিয়ে নির্বিচারে খুন, গুম, ধর্ষণ, নিপীড়ন, বিতাড়ন, ধর-পাকড় ও গুলিবর্ষণ। আর এর মধ্যদিয়ে মুসলমান জনসংখ্যা-বহুল আরাকানে বর্মী শাসকগোষ্ঠি কার্যত পোড়ামাটি নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবরকমের বর্বরতা ও নিষ্ঠুর কার্যক্রমই শুরু করলো। এরআগে গত ১১ আগস্ট থেকে আরাকানে যেসব গ্রাম ও পাড়ায় মুসলমান রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি রয়েছে সেগুলোতে বিনা উস্কানিতে হঠাৎ করেই সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্ডন ও টহল দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। হাজারো রোহিঙ্গা খাদ্য ও পানি অভাবসহ নানামুখী সঙ্কটে নিপতিত হয়। এভাবে আরাকানের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠে। যা কথিত অভিযানের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে গত দ্ইু দিনে। অতীতে ‘অপারেশন পীয়ে থায়ে’ এবং অন্যান্য নাম দেয়া হলেও এবারের অভিযানের নাম এখনো জানা যায়নি।
গতকাল (শনিবার) সর্বশেষ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে (সাবেক আরাকান) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর নেমে এসেছে ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিম রোলার। দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বিজিপি, পুলিশ ও উগ্র মগদস্যুরা যৌথভাবে এহেন বর্বরতা চালাচ্ছে। শত শত বাড়িঘর জ্বলছে আগুনে। এ যাবত শতাধিক রোহিঙ্গা এবং ১২ জন নিরাপত্তা ও পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আরাকানের একটি গ্রামে সেনা ও পুলিশের ব্যাপক গুলিবর্ষণের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতাবস্থায় কোনমতে পালিয়ে এসে মোঃ মুছা (২২) ও মোঃ মোক্তার মিয়া (২৭) নামে দুই রোহিঙ্গা যুবক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে মুছা গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় মারা গেছে। চমেক জরুরি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মোক্তার জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকানের (রাখাইন) মংডু, বুচিডংসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামে-পাড়ায় বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করে। তখন ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যাবার সময় ঢেঁকিবুনিয়া এলাকার মেহেদী গ্রামের রাস্তায় রাত ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলি এসে লাগে তার (মোক্তার) বাম কাঁধে এবং মুছার বুক ভেদ করে যায়। তারা তিনজন জঙ্গল-নদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঠাঁই নেয়। আরেকজন আছেন কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তাদের গ্রাম ও আশপাশের পাড়া-গ্রামের বাসিন্দাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে জানেনা মোক্তার।
এহেন দুঃসহ পরিস্থিতিতে দিশেহারা আরাকানী রোহিঙ্গারা বাধ্য হয়েই বসতভিটে ছেড়ে পালিয়ে দলে দলে ছুটছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দিকে। কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো লাইন (নো ম্যানস্ ল্যান্ড) বরাবর এবং খুব কাছাকাছি বিশেষ করে নাফ নদীর ওপারে ভিড়েছে প্রায় ৫০ হাজার নর-নারী শিশু-বৃদ্ধ। যাদের বেশিরভাগই মহিলা ও শিশু। তাছাড়া আরাকানের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-জঙ্গলে, নদীতে নৌকায় ভাসমান অবস্থায় পলায়নরত এবং বাড়িঘরে অবরুদ্ধ রয়েছে আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তারা জীবন ও মহিলাদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আকুতি জানাচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সীমান্তজুড়ে কড়াকড়ি প্রহরা মোতায়েন রেখেছে যাতে কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এ যাবত দুই দিনে ২১৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে পুশ ব্যাক করা হয়েছে। তা সত্তে¡ও রোহিঙ্গারা কক্সবাজার-বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সীমান্তের পাহাড়-নদী-জঙ্গল পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। গত ১১ আগস্ট আরাকানে নতুন করে সামরিক দমনাভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সীমান্তে কড়াকড়ির মধ্যেও উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি দিয়ে এ যাবত গত দুই সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। তারা টেকনাফে অনিবদ্ধিত ক্যাম্পে ঠাঁই নিয়েছে। এ মুহূর্তে সীমান্তজুড়ে জড়ো হওয়া এবং জীবন-আব্রু রক্ষায় বিক্ষিপ্তভাবে পালিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা চরম খাদ্যাভাব রোগে-শোকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে ২০৮ কিলোমিটার ব্যাপী স্থলপথ ও ৬৩ কিমি নৌপথে সীমান্ত রয়েছে। অতীত ও বর্তমানে মিয়ানমারের আরাকানী রোহিঙ্গাদের উপর সীমাহীন দলন-পীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহার মাত্র কিছুদিন আগেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নেমে আসলো হত্যা, গুম, নির্যাতন, বিতাড়নের আরেক ‘আজাব’। জাতিসংঘের ভাষায় পৃথিবীতে সবচেয়ে নিপীড়িত, ভাগ্যাহত ও বাস্তুচ্যূত জাতিগোষ্ঠি রোহিঙ্গাদের চোখের সামনে এখন ঘোর অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই!
যেভাবে ঘটনার শুরু-
আরাকান তথা রাখাইন স্টেটের মুসলমান অধ্যুষিত পাড়া-গ্রামগুলোতে গত ১১ আগস্ট থেকে নতুন করে সেনাবাহিনী ও পুলিশি টহল জোরদার এমনকি কর্ডন করা শুরু হয়। এতে যোগ দেয় স্থানীয় উগ্র মগবৌদ্ধরাও। রোহিঙ্গারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এরফলে রোহিঙ্গাদের উপর দেশটিতে আবারো নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে বিতাড়নের আশঙ্কা তৈরি হয়। কেননা তাদেরকে কাজেকর্মে যেতে বাধা দেয়া হয়। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার সঙ্কট দিন দিন বৃদ্ধি পায়। তখন পুলিশসহ সরকারি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, রোহিঙ্গাদের খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহে ‘কড়াকড়ি’ আরোপ করেছে স্থানীয় বৌদ্ধ গ্রামবাসী, চলাফেরা ও কর্মস্থলে যেতে বাধা নেই! এমনকি মিয়ানমার পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র কর্নেল মেয়ো থু সোয়ের দাবি, রোহিঙ্গা গ্রামবাসী আতঙ্কে বাইরে যাচ্ছে না, এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ চলছে! তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তখনই উদ্বেগের সাথে শঙ্কা ব্যক্ত করেছে যে, সেখানে ২০১২ সালে আরাকানের রাজধানী সিটুউয়ে (সাবেক নাম আকিয়াব) সংঘটিত সহিংসতার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঘটতে পারে। সেই সহিংসতায় ২শ’ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ভিটেমাটি হারায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা পর্যবেক্ষক গ্রæপ আরাকান প্রজেক্টের কর্মকর্তা ক্রিস লিউয়া বলেন, সেখানকার বিশেষত জাডু-পাইন গ্রামের পরিস্থিতি দু’টি স¤প্রদায়ের মানুষের মধ্যকার সহিংসতায় মোড় নেয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
অতীতের পাতানো খেলার পুনরাবৃত্তি?
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ও রাতে রাখাইন তথা আরাকান রাজ্যে ২৪টি নিরাপত্তা চেকপোস্টে হঠাৎ করে বোমা হামলা চালানো পর পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। রাতভর চলা এ সংঘর্ষে নিহত হয় ১২ জন পুলিশসহ ৮৯ জন। এই অজুহাতে রোহিঙ্গাদের গ্রাম-মহল্লা ঘিরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে সেনা সদস্যরা। মিয়ানমার সেনাদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে জ্বলতে থাকে মিয়ানমারের মেরুংল্যা, সীতাপুরিক্যা, হাইচ্ছুরাতাসহ আশপাশের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলো। জুমাবার ২৫ আগস্ট সন্ধ্যার পরপরই গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। বিশাল বিশাল গ্রাম এক সাথে পোড়ার আগুনের কুন্ডলী বাংলাদেশ সীমান্তের সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে পরিস্কার দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সেখান থেকে পালাতে চাইলে নারী-শিশু-পুরুষ নির্বিশেষে হত্যা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ভীত সন্ত্রস্থ রোহিঙ্গাদের বাধ্য করা হচ্ছে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে আসতে। বিজিবি সূত্রে জানাগেছে, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু-নারী-পুরুষ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার অপেক্ষা করছে। তবে বিজিবি সর্তক রয়েছে রোহিঙ্গারা যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে। এপর্যন্ত কয়েক’শ রোহিঙ্গাকে বিজিবি মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিয়েছে বলেও জানাগেছে। বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনওয়ারুল আজিম বলেন, আমাদের ধারণা দুই হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্তের ওপারে অবস্থান করছে। তাদের পুশব্যাক করার জন্য আমরা প্রস্তুত। আমাদের বাহিনী ২৪ ঘণ্টা কড়া পাহারা দিচ্ছে যেন রোহিঙ্গারা ঢুকতে না পারে।’
গতবছর ৯ অক্টোবরও আরাকানের চেকপোস্টে সন্ত্রাসী হামলার পর সশস্ত্র বাহিনী ব্যাপক রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ, ধর্ষণ, গুম, নির্যাতন, বিতাড়ন চালায়। অথচ সেই প্রকৃত সন্ত্রাসী বা দুস্কৃতকারীরা ধরা পড়েনি আজও। সেই ঘটনার জেরে আরও ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঠাঁই নেয়। বৃহস্পতিবার চেকপোস্টে হামলার ঘটনায় ‘দ্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামক একটি গোষ্ঠি দায় স্বীকার করলেও কেন নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের খড়্গ নেমে এসেছে তার কোন জবাব মিলছে না সুচির মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে। যদিও দেশটির সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় কমিটি এআরএসএ’কে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছে। গত ১১ ও ১২ আগস্ট থেকে রাখাইনের মংডু, রাথিডং ও বুচিডংয়ে ব্যাপক সেনা উপস্থিতি এবং রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করাসহ বিভিন্নভাবে দমনাভিযান শুরুর সাথে সাথেই পরিস্থিতির দ্রæত অবনতি ঘটে। শাসকগোষ্ঠি বিদ্রোহ দমনের নামে আরাকানের দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলে এবং রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে গিয়ে এখন ‘বাঙ্গালী’ আখ্যায়িত করে ‘খেদাও অভিযান’ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিপিকে দিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতের বোমা হামলার ঘটনার ‘পাল্টা জবাব’ হিসেবে বিগত অক্টোবর’১৬ইং সময়কার চেয়েও বড় ধরনের দমনাভিযানের দিকে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। রহস্যজনক ও তাৎপর্যের দিকটি হচ্ছে মিয়ানমারে ছন্নছাড়া রোহিঙ্গারা কিভাবে একযোগে পুলিশ ক্যাম্পেগুলো এবং সেনা ছাউনীতে আক্রমণ করল? আরাকানে ২/৪জন রোহিঙ্গা যেখানে একসাথে একত্রিত হয়ে কথাও বলতে পারেনা। সেখানে এ আক্রমণ করার মত শক্তি সাহস তারা কোথায় পেল? কিভাবে পেল? বিষয়টি অভিজ্ঞ মহলের মতে হাস্যকর এবং মিয়ানমার সেনাদের গাল গল্প ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা। এটি নিছক রোহিঙ্গা বিতাড়নের অজুহাত মাত্র। এদিকে, হামলার উভয় ঘটনার সাথে কোথায়, কাদের কী যোগসূত্র রয়েছে এবং এর পেছনে তৃতীয় স্বার্থন্বেষী কোন পক্ষ অথবা পাতানো খেলার বিষয়টি জড়িত কিনা ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ভাবিয়ে এখন তুলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহকেও।
কী আছে আনান কমিশনের রিপোর্টে-
গতবছর অক্টোবরে রোহিঙ্গা দলন-পীড়নের মাত্রা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মূলত জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের চাপে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে মিয়ানমার সরকারেরই উদ্যোগে গঠিত ‘রাখাইন রাজ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিশন’ (আনান কমিশন নামে পরিচিত) গঠিত হয়। কমিশন গত মার্চ মাসে অন্তবর্তী বা প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। আর চূড়ান্ত রিপোর্টটি গত ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচির হাতে তুলে দেন। এর আগের দিন (বুধবার) তা মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট তিন কিউর কাছে পেশ করা হয়। ‘রাখাইনের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, নায্য ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথের দিকে’ শীর্ষক ৬৩ পৃষ্ঠার উক্ত রিপোর্ট বৃহস্পতিবার কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। এতে ৮৮টি সুপারিশও করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে ‘বিশ্বের একক বৃহত্তম রাষ্ট্রহীন স¤প্রদায়’ হিসেবেও অভিহিত করে আনান কমিশন রিপোর্টে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়ে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি এড়িয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ অবশ্যই তুলে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল ও সময়সীমা ঠিক করতে হবে। যা হতে হবে স্বচ্ছ ও বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এতে রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা, লোকজনের অবাধ চলাচল ও নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ কিংবা নাগরিকত্ব নির্বিশেষে রাখাইন (সাবেক আরাকান) রাজ্যের সকল জনগোষ্ঠিকে অবাধ চলাফেরা স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বলা হয়। কফি আনান রাখাইন পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার আগেই তার রিপোর্টের প্রস্তাব ও সুপারিশমালা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের প্রতি তাগিদ দেন। কফি আনানের নেতৃত্বে মিয়ানমারের ৬ জন এবং নেদারল্যান্ডস ও লেবাননের ২ জন করে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ‘আনান কমিশন’ গঠিত হয়। কমিশন গত একবছরে মিয়ানমারের সিটুইয়েয়ে, মংডু, বুচিডং, ইয়াঙ্গুন, নেপিদো এবং মিয়ানমারের বাইরে থাইল্যান্ডে রাজধানী ব্যাংকক, বাংলাদেশে এসে ঢাকা, কক্সবাজার ও জেনেভায় কমপক্ষে ১৫৫টি সভা-বৈঠক করে প্রায় ১ হাজার ১শ’ ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা শেষে রিপোর্টটি তৈরি করে। এতে নাগরিকত্ব জটিলতা সুরাহার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, নাগরিকত্বের বিষয়টি রাখাইনে শান্তি-সমৃদ্ধি-অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। যা এড়িয়ে যাবার অবকাশ নেই। এর সুরাহা না হলে নাগরিকদের মানবিক সঙ্কট ও নিরাপত্তাহীনতা কাটবে না। রাজ্যের আর্থসামাজিক উন্নয়ন অবরুদ্ধ হয়ে থাকবে। স্বল্পমেয়াদে সমস্যার সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনানুসারে নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে হবে। সময়োপযোগী করতে এই আইন পর্যালোচনা করাও দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।