ইনকিলাব ডেস্ক : এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হার্ভে যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখন্ডে আঘাত হেনেছে। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১০ টার দিকে ঘন্টায় ২০৯ কিলোমিটার (১৩০ মাইল) বাতাসের বেগ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের উপকূলে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতায় কর্পাস ক্রিস্টির শহর ছেড়েছেন প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার বাসিন্দা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহরটির রাস্তায় থাকা কিছু ট্রাক ও গাড়ি জোরালো বাতাসের কবলে পড়েছে। ঝড়ে কাঠের রোডওয়ার্ক চিহ্ন উপড়ে গেছে, উপড়ে পড়া পাম গাছের টুকরা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। হার্ভে আঘাত হানার কিছুক্ষণ আগে টুইটারে ট্রাম্প দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ঘোষণায় স্বাক্ষরের কথা জানান যেখানে সরকারি সব বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবরে বলা হয়, চার মাত্রার ঘূর্ণিঝড়টি টেক্সাস উপকূলের আরকানসাস ও ওকনর বন্দরের মধ্যবার্তী স্থান দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্থলে উঠে আসে। আগামী কয়েকদিনে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে টেক্সাস উপকূল হয়ে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের উপকূলের দিকে এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওই উপকূলজুড়ে চার মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ¡াস ও ৯০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় লুইজিয়ানা ও টেক্সাসে দুর্যোগাবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। হার্ভের যে এলাকা দিয়ে এগিয়ে যাবে সেই পথজুড়ে প্রায় ৬০ লাখ লোক বসবাস করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই এলাকাটিতেই যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ তেল শোধনাগারগুলোর অবস্থান। ঝড় শোধনাগারে আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কায় এরই মধ্যে তরল জ্বালানির মূল্য বেড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে রকপোর্ট শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। হাইস্কুল, হোটেল এবং অন্যান্য ভবনে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা এবং ঝড়ের তান্ডবের আশঙ্কায় ঝড়ের পথে থাকা শহরগুলোর হাজার হাজার বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে। তবে সরে যাওয়ার বাধ্যতামূলক নির্দেশ অমান্য করেই কিছু মানুষ খাদ্য, জ্বালানি ও বালুরবস্তা মজুদ করে নিজ বাড়িতে থেকে গেছেন। যারা যারা থেকে যাচ্ছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি বাহুতে স্পষ্ট অক্ষরে নিজেদের নাম এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর লিখে রাখার। এ ধরনের কথা বলতে পছন্দ করি না; কিন্তু এটাই বাস্তবতা। লোকজন কথা শোনে না, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করেন রকপোর্টের মেয়র প্রো টেম প্যাট্রিক রিয়োস। স্যাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী ৪ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হার্ভে গাছ উপড়ে ফেলতে ও বাড়িঘর ধ্বংস করে দিতে পারে; কয়েকদিন ধরে দৈনন্দিন সরবরাহে বিঘœ ঘটাতে পারে। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় উইলমার পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে আঘাত হানা তিন মাত্রার চেয়ে শক্তিশালী প্রথম ঝড়। সিএনএন, বিবিসি, এপি।